গভর্নিং বডি নেই ১৫ বছর অধ্যক্ষের নির্দেশে চলে সব

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ৩৪

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সৈয়দ নবীব আলী মহাবিদ্যালয়ে ১৫ বছর ধরে গভর্নিং বডি না থাকায় অধ্যক্ষ দিলওয়ার হোসেইনের নির্দেশেই চলে সব কাজ। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তাঁর নিয়োগ নিয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। তবে অধ্যক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রতিষ্ঠানটিতে মোট শিক্ষার্থী আট শতাধিক। চারজন সহকারী অধ্যাপক। তাদের মধ্যে দুজন অবসরে গেছেন। ১২ জন প্রভাষক। কর্মকর্তা আছেন পাঁচজন ও অফিস সহকারী চারজন।

তদন্ত প্রতিবেদন ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য হারুন হেলাল চৌধুরীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন ও শিক্ষা পরিদর্শক মো. আব্দুস সালাম তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। ২০১৯ সালে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর আগে কলেজের প্রতিষ্ঠাতার আত্মীয় সৈয়দ পারভেজ আহমদের করা অভিযোগের তদন্তেও একই চিত্র পাওয়া যায়।

তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, অফিস সহকারী নিয়োগে নিয়ম না মেনে শুধু মহিলা প্রার্থী চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কলেজের মোট আদায় হওয়া টাকার মধ্যে ৪৭ লাখ ২৪ হাজার ৫৮৪ টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এইচএসসি পরীক্ষার বোর্ড ফি বাবদ বাড়তি টাকা আদায় করেছেন অধ্যক্ষ। ওই টাকা উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের মৌখিক দাবি করলেও নথি দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া প্রশংসাপত্র বাবদ আদায় করা টাকার নথি উপস্থাপন না করায় তা যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়েছে কি না তাও যাচাই করা যায়নি। গভর্নিং বডির রেজুলেশন বই প্রদর্শন না করায় যাচাই সম্ভব হয়নি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগ।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন-সংক্রান্ত দুটি মামলা হয়। ২০১১ সালে বিশেষ ধরনের কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে মতছির আলী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। আর ২০১৭ সালে সিরিনুজ্জামান হাইকোর্টে আরেকটি রিট পিটিশন করেন।

এ বিষয়ে জানতে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ্ মো. আজমতগীর বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে এরকম অনেক আদেশ প্রক্রিয়াধীন আছে। হয়তো ফাইনাল পর্যায়েও থাকতে পারে। তবে এই মুহূর্তে সঠিক বলতে পারছি না।’

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার বলেন, ‘মামলা চলমান থাকায় কিছুই করা যায়নি। সম্প্রতি মামলা খারিজ হওয়ায় আমরা গভর্নিং বডি গঠনের জন্য চিঠি দিয়েছি। এরপরও যদি না করে তাহলে বোর্ড আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ দিলওয়ার হোসেইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে গভর্নিং বডি নিয়োগ দিয়েছে। তখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। সেখানে ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন। ডিজির শোকজের জবাব দেওয়ার পর এসব অভিযোগ নথিজাত করা হয়েছে।’

কলেজের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওইসব অভিযোগের বিষয়ে ব্রড শিটে জবাব দেওয়া হয়েছে। ডিজি অফিস ও নিরীক্ষা অফিসের শোকজের জবাবও দিয়েছি। কোনো অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তারা। ইউএনও অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জবাব দেওয়া হয়েছে। পরে সবকিছু নথিজাত হয়ে শেষ হয়ে গেছে।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম বলেন, ‘জবাব পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর নথি আছে। তবে নথিজাত হয়ে কিছুই শেষ হয়নি। মন্ত্রণালয়ের কোনো আদেশ এখনো পাইনি। আমরা অপেক্ষায় আছি, আদেশ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত