Ajker Patrika

বনশ্রীতে নারীকে হেনস্তা–মারধরের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ২৪
বনশ্রীতে নারী হেনস্তার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত
বনশ্রীতে নারী হেনস্তার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় রাফিয়া তামান্না নামের এক নারীকে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিসানও আছেন। ভুক্তভোগী ওই নারী ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজে কাজ করেন। এ ঘটনায় তিনি রামপুরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

‎গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে বনশ্রীর ই–ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের একটি জুসের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ভুক্তভোগী রাফিয়া তামান্না ও তাঁর ছোট ভাই রিশাদকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

র‍্যাব–৩ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজধানীর রামপুরা থানাধীন এলাকায় নারী সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনার আলোচিত প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশান (২৫)–সহ তিন জনকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় যৌন হয়রানি সংক্রান্ত একটি ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে তা ব্যাপকভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিষয়টি র‍্যাব–৩ এর নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে র‍্যাব–৩ ছায়া তদন্ত শুরু করে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরীর রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনীঃ ২০০৩) একটি মামলা করা হয়। মামলায় উল্লেখিত এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব–৩–এর একাধিক গোয়েন্দা ও অপারেশনাল টিম মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানকে (২৫) বুধবার দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন মেরাদিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিসান বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের ছেলে।

জিসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর রমনা থানাধীন বেইলি রোড এলাকা থেকে মো. রাইসুল ইসলামকে (২১) এবং শ্যামপুর থানাধীন গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে মো. কাউসার হোসেনকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। রাইসুল বরিশাল সদরের চহটার বাসিন্দা মো. সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে, আর কাউসার বরিশাল সদরের রাজ্জাকপুরের বাসিন্দা মো. নুরুল আমিনের ছেলে।

আসামিদের বিষয়ে রামপুরা থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

এর আগে রাফিয়া তামান্না রামপুরা থানায় জিসান ও পার্থিব নামের দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার দিকে আমি এবং আমার ছোট ভাই রিশাদ বনশ্রী ই-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের একটি জুসের দোকানে ছিলাম। এ সময় কয়েকজন স্থানীয় যুবক আমাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। আমার ভাই প্রতিবাদ করলে তারা প্রথমে তাকে মারধর করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে।’

রাফিয়া তামান্না আরও বলেন, ‘আমরা নিজের বাসার সামনেই নিরাপদ নই। ছেলেগুলো এমনভাবে আচরণ করছিল, যেন তারা যা করছে সেটাই তাদের অধিকার। আমার ভাই যখন প্রতিবাদ করল, তখন তারা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এমনকি তারা আমাকে হেনস্তা করার পরও অকপটে বলে, ‘হ্যাঁ, আমরা রেপ করেছি, কী করবে?’

‎রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘বনশ্রীর ই-ব্লকের একটি জুসের দোকানে ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কয়েক যুবক নারী সাংবাদিক ও তাঁর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। বিষয়টি নিয়ে কথা-কাটাকাটি হলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে একটি অভিযোগ নেওয়া হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’‎

বনশ্রী

‎এদিকে এ ঘটনার পর ওই রাফিয়া তামান্না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের বাসার সামনেই নিরাপদ নই! আমাকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় আমার ভাইকে মারধর করা হলো, আমাকেও লাঞ্ছিত করা হলো। অথচ আশপাশের কেউ এগিয়ে এল না।’‎

‎তিনি আরও লেখেন, ‘আমার চুল টেনে ধরে আমাকে হ্যাঁচকা টান দেওয়া হলো, বুকে আঘাত করা হলো, লাথি মারা হলো। চারপাশের সবাই দাঁড়িয়ে দেখছিল, কেউ কিছু বলেনি।’‎

‎তাঁর এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। তাঁরা বলেন, রাজধানীতে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। শুধু রাস্তায় নয়, নিজেদের বাড়ির সামনেও নিরাপদ নন নারীরা।‎

‎এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে তিনটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘিরে ধরে। পরে আনোয়ারের কাছে থাকা প্রায় ১৮০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। সে সময় স্বর্ণ লুটের এ ঘটনার ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত