Ajker Patrika

৫২ খাতে ২৬ কোটি টাকা গায়েব

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১৩: ৫৩
৫২ খাতে ২৬ কোটি টাকা গায়েব

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ৫২টি খাতের ২৬ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ অর্থবছরের আর্থিক নিরীক্ষায় সরকারি টাকার এ গরমিল পাওয়া গেছে। এই টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হয়নি বলে আপত্তি জানিয়েছে নিরীক্ষা অধিদপ্তর। এই আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য বিএমডিএকে চিঠি দিয়েছে অধিদপ্তর।

তবে বিএমডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘অডিটে আপত্তি তুললেই যে সব অনিয়ম হয়ে গেছে, ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়।’

নথিপত্র ঘেঁটে এ তথ্য জানা গেছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, বিএমডিএর হিসাব কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। আইনে বাধ্যতামূলক থাকলেও আয়-ব্যয় নিয়ে বার্ষিক কোনো আর্থিক বিবরণীও প্রস্তুত করা হয় না। ফলে কোন খাতে কত আয়-ব্যয় হলো, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না বছর শেষে। হিসাবের গরমিল থেকেই যায় বছরের পর বছর।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮০টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিএমডিএর ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪১১ টাকা লোপাট হয়েছে। বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোনে ঘটেছে এমন ঘটনা। তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়লেও টাকা উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে ১৩ কোটি ৭৮ লাখ সাড়ে ৮ হাজার টাকার সাবমারসিবল মোটরসহ সরঞ্জাম কেনা হয়। দরপত্র ছাড়াই এসব যন্ত্রপাতি কেনায় অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করছে নিরীক্ষা অধিদপ্তর। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। নিরীক্ষা দল সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় না হওয়া ৫২ লাখ ২৮ হাজার টাকারও খোঁজ পায়নি। দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে সেচ সম্প্রসারণে এই টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া বেশি দামে ২৫ হাজার কেজি সুপার এনামেল তার কেনা হয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে সরকারের ৩৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী জেলায় ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকারও খোঁজ পায়নি নিরীক্ষা দল। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দরপত্র ছাড়াই কেনা হয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার পণ্য। পাতকুয়া খনন প্রকল্পেও অনিয়ম ধরা পড়েছে। বিএমডিএ এখানে অনুমোদনহীন ব্যয় করেছে ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। নাটোর জোনে একই কাজ ভিন্ন দরে করানোর কারণে ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকার সরকারি ক্ষতি উল্লেখ করা হয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। এ ছাড়া বিভিন্ন জোনে অনুমোদনহীন ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

শুধু তা-ই নয়, ঠাকুরগাঁও জোনে ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে নিরীক্ষা টিম। ওই জেলায় গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা হলেও সরকারি কোষাগারে তা জমা করা হয়নি। আবার গোদাগাড়ী ও নাচোল জোনে গভীর নলকূপ মেরামত বাবদ খরচ করা হয়েছে ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এ টাকা দায়িত্বরতদের কাছ থেকে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে নিরীক্ষা টিম।

এ ছাড়া ৭৪ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দেখানোর ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছে নিরীক্ষা অধিদপ্তর। প্রধান কার্যালয়ের ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অনিয়মিত ব্যয়ের ব্যাপারেও আপত্তি দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি প্রকল্প অনুমোদনের আগেই ২৪ লাখ টাকা খরচের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁও জোনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি বাসায় থাকলেও ভাড়া দেন না। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ ছাড়া একটি খাতের ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে। এটিকেও অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই ৬৬টি নলকূপ খনন করে অচল অবস্থায় ফেলে রেখে বিএমডিএ সরকারের ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ক্ষতি করেছে বলেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘অডিটের সময় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই কিছু বিষয়ে আপত্তি থাকে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাৎক্ষণিকভাবে কাগজপত্র দেখানো যায় না বলে আপত্তি আনা হয়। পরে নিষ্পত্তির জন্য ডাকা হলে কাগজপত্র দেখানো হয়। এবারও শুনানি হবে। তখন কাগজপত্র দেখাব। আপত্তি তুললেই যে সব অনিয়ম হয়ে গেছে, ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত