অনলাইন ডেস্ক
এক প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলেন, আরেক প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এটাই বুঝি আধুনিক কনগ্লোমারেটের শক্তিমত্তার একটি বড় দৃষ্টান্ত।
স্যামসাং উত্তরাধিকারী লি জায়ে-ইয়ং ২০১৭ সালে ঘুষ ও অর্থ তছরুপের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এরপরও দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাঁকে বিশেষ ক্ষমতাবলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুঁজিপতি অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম লি। সাবেক প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে লি দুবার কারাবরণ করেছেন। এই ঘটনায় ক্ষমতা হারিয়েছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাই। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
ঘুষ নেওয়া ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার তথ্য ফাঁস হলে ছয় বছর আগে সিউলে গণ-বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট পাক জিউন হাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এরপর রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া।
এত কিছুর পরও স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী বা কার্যত প্রধান লিকে ক্ষমা ঘোষণার একটি যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। এই পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণে সরকার বলছে, মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশের বৃহত্তম কোম্পানির ডি-ফ্যাক্টো (কার্যত) নেতাকে প্রয়োজন ছিল।
লিকে বিক্ষোভকারীরা বলতেন, ‘স্যামসাংয়ের ক্রাউন প্রিন্স’। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক এবং তাঁর সহযোগীকে ৮০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। একটি মার্জারের (একাধিক কোম্পানি একীভূতকরণ) পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করতে তিনি এটি করেছিলেন। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা এই মার্জারের বিরোধিতা করছিলেন। এই একীভূতকরণের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের পক্ষে স্যামসাং সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত হতে পারত।
এই তথ্য ফাঁস হয় ২০১৬-১৭ সালের শীতকালে। এরপর সপ্তাহান্তে নিয়ম করে লক্ষাধিক দক্ষিণ কোরীয় মোমবাতি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্কের সরকার ও রাজনীতি এবং ব্যবসার মধ্যে স্বার্থের সংঘাত মেটানোর দাবি জানান। কোরিয়ার পার্লামেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে। ২০১৭ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী লি, পশ্চিমে জে ওয়াই লি নামেও পরিচিত। তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বন্ধুর মেয়ের জন্য ৮ লাখ ডলারে ঘোড়া কিনেছিলেন কোম্পানির টাকায়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানির অর্থ তছরুপের অপরাধে ঘটনার এক বছর পরই তাঁকে জেলে পাঠানো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন রাজনীতি ও অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ দিনগুলোর মধ্যে পূর্বসূরিকে (আগের প্রেসিডেন্ট) ক্ষমা করেন। এর আট মাস পর আরেক প্রেসিডেন্ট স্যামসাং-এর কার্যত প্রধানকেও ক্ষমা করলেন।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এটি খুবই বাজে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল বলে মনে করছেন তাঁরা। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও শিল্প নীতির অধ্যাপক সানগিন পার্ক বলেন, ‘এটি হলো পিছু হটা। এবং এর অর্থ সেই মোমবাতি জ্বালানো বিক্ষোভের দিনগুলোর আগের যুগে ফিরে গেল কোরিয়া।’
লির এই ঘটনা সেই জনপ্রিয় ধারণাকেই আবার প্রতিষ্ঠিত করল যে—বড় ব্যবসায়ীরা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে!
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে বিশাল কনগ্লোমারেটগুলোর আধিপত্য। শীর্ষ ১০টি কোম্পানিরই জিডিপিতে অবদান প্রায় ৮০ শতাংশ। এগুলোকে কোরীয় ভাষায় বলে চেবোল। পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য এগুলো। এলজি, হুন্দাই, লোটে এবং এসকে এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই চেবোলগুলোর মধ্যে স্যামসাং সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমতাবান; বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা এবং বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড। তবে নিজ দেশে এই কোম্পানি আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। যেমন: হাসপাতাল, হোটেল, বিমা, বিলবোর্ড, শিপইয়ার্ড এবং এমনকি থিম পার্ক!
এ ব্যাপারে টরন্টো ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউনকিউং লি বিবিসিকে বলেন, ‘স্যামসাং এবং অন্য চেবোলগুলো এতটাই সর্বব্যাপী যে তারা “অক্টোপাস ফার্ম” নামে পরিচিত।’
এই বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘকাল আগেই কোরিয়ার রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তরে প্রবেশ করেছে। অধ্যাপক লি ২০১৬ সালের প্রতিবাদ বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দেখেছেন, নাগরিকদের রাগ মূলত প্রেসিডেন্ট পার্কের ব্যক্তিগত কার্যকলাপ কেন্দ্রিক। কিন্তু শ্রমিক অধিকার কর্মী এবং অন্যরা সরকারের মধ্যে চেবোলদের প্রভাব-প্রতিপত্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
কোরীয় যুদ্ধের পর সরকার চেবোলদের ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে। তাদের কম দামে বিদ্যুৎ এবং কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। ‘দেশীয় পণ্য কেনার’ একটি নীতি নিয়েছিল সরকার। এমনকি শিল্প-কারখানাগুলোতে শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলন দমনে সরাসরি সহায়তা করেছিল খোদ সরকার।
এতে জায়ান্টগুলো আরও অবয়বে বাড়তে থাকে কিন্তু একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ ধ্বংস করে দেয় এবং শ্রমিক আন্দোলন দমন করা হয়। এভাবে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী চর্চার একপর্যায়ে প্রবেশ করে অনিয়ম। কয়েক দশক ধরে ঘুষ ও দুর্নীতির জালে জড়িয়ে যায় চেবোলগুলো।
অধ্যাপক লি বলেন, বহুবার ধরা পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে নির্বাহীদের লঘু দণ্ড বা সাময়িক বরখাস্ত করার মতো সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিচারকেরা বলেছেন, যদি কোনো চেবোল নেতাকে তাঁর কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
স্যামসাংয়ের বর্তমান প্রধান লি-এর বাবা লি কুন-হি ১৯৯০-এর দশকে ঘুষ এবং জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি স্যামসাং চেয়ারম্যান। কিন্তু একদিনও জেল খাটেননি।
তাই ২০১৭ সালে যখন লি কুন হির ছেলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান এবং গরাদ ঘরের বাসিন্দা হন তখন অধিকার কর্মীরা আশা করেছিলেন, এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে।
কিন্তু শিগগিরই এই আশার গুড়ে বালি ঢেলেছে সরকার। আদালতে আইনি লড়াই বছরের পর বছর ধরে চলেছে। বারবার ঘটনা নানা দিকে মোড় নিয়েছে। একটি আপিল আদালত তাঁকে মুক্তি দেন। একটি উচ্চ আদালত তারপর আবার বিচারের আদেশ দেন, যেখানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার কারাগারে পাঠানোর মাত্র কয়েক মাস পরে মুন সরকার তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেয়। যুক্তি হিসেবে ‘জাতীয় স্বার্থের’ কথা বলে সরকার।
এরপর থেকে লি স্যামসাংয়ের প্রধান মুখে পরিণত হন। গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাণিজ্য সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানান লি।
কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়নে কারচুপি, হিসাব জালিয়াতি এবং শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ফৌজদারি অপরাধ কাঁধে নিয়ে ঘুরছেন লি। এই ধরনের একজন অপরাধীকে ক্ষমা করার অর্থ হলো তিনি তাঁর নির্বাহী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে যোগ্য বিবেচিত হবেন।
যুদ্ধ পরবর্তী কোরিয়ার ইতিহাস বলে, সাজা পাওয়া চেবোল নেতাদের ক্লিন চিট দেওয়ার একটি ঐতিহ্য এ দেশে রয়েছে। কারণ আনুষ্ঠানিক ক্ষমতার কথা বললে সামনে আসে—প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং জাতীয় পরিষদ—যারা আইন তৈরি করে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক প্রভাব বা সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা আসে বা কোরীয় সমাজে চেবোলের প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকেরা কীভাবে ভাবছে—তখন পুরো চিত্রটি একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক অভিজাতদের জোটের ধারণায় পর্যবসিত হয়, যাদের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে।
লি-কে সাধারণ ক্ষমা করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ‘অর্থনীতির জন্য চেবোল নেতাদের প্রয়োজনের’ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, এর সপক্ষে শক্ত প্রমাণ নেই। যেমন: লি যখন কারাগারে বা কারাগারের বাইরে বিচ্ছিন্ন ছিলেন তখনো কিন্তু স্যামসাং বেশ ভালোই চলেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর। সুতরাং এই চেবোলদের ওপর নির্ভরতা কমানোর এটাই সময়। তা ছাড়া বহু আলোচিত অর্থনীতির ‘ট্রিকল ডাউন’ (সম্পদ ওপর থেকে নিচে চুঁয়ে পড়া) তত্ত্ব একাধিক গবেষণায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি ও চেবোলদের প্রভাব মোকাবিলার ইচ্ছে সরকারের রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার পেছনে একটি আসন্ন মন্দা এবং বিশ্ব মঞ্চে কোরিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী স্যামসাংয়ের গর্ব খর্ব হওয়ার ভয় ও উদ্বেগ কাজ করছে।
এক প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলেন, আরেক প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এটাই বুঝি আধুনিক কনগ্লোমারেটের শক্তিমত্তার একটি বড় দৃষ্টান্ত।
স্যামসাং উত্তরাধিকারী লি জায়ে-ইয়ং ২০১৭ সালে ঘুষ ও অর্থ তছরুপের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এরপরও দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাঁকে বিশেষ ক্ষমতাবলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুঁজিপতি অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম লি। সাবেক প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে লি দুবার কারাবরণ করেছেন। এই ঘটনায় ক্ষমতা হারিয়েছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাই। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
ঘুষ নেওয়া ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার তথ্য ফাঁস হলে ছয় বছর আগে সিউলে গণ-বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট পাক জিউন হাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এরপর রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া।
এত কিছুর পরও স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী বা কার্যত প্রধান লিকে ক্ষমা ঘোষণার একটি যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। এই পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণে সরকার বলছে, মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশের বৃহত্তম কোম্পানির ডি-ফ্যাক্টো (কার্যত) নেতাকে প্রয়োজন ছিল।
লিকে বিক্ষোভকারীরা বলতেন, ‘স্যামসাংয়ের ক্রাউন প্রিন্স’। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক এবং তাঁর সহযোগীকে ৮০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। একটি মার্জারের (একাধিক কোম্পানি একীভূতকরণ) পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করতে তিনি এটি করেছিলেন। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা এই মার্জারের বিরোধিতা করছিলেন। এই একীভূতকরণের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের পক্ষে স্যামসাং সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত হতে পারত।
এই তথ্য ফাঁস হয় ২০১৬-১৭ সালের শীতকালে। এরপর সপ্তাহান্তে নিয়ম করে লক্ষাধিক দক্ষিণ কোরীয় মোমবাতি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্কের সরকার ও রাজনীতি এবং ব্যবসার মধ্যে স্বার্থের সংঘাত মেটানোর দাবি জানান। কোরিয়ার পার্লামেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে। ২০১৭ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী লি, পশ্চিমে জে ওয়াই লি নামেও পরিচিত। তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বন্ধুর মেয়ের জন্য ৮ লাখ ডলারে ঘোড়া কিনেছিলেন কোম্পানির টাকায়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানির অর্থ তছরুপের অপরাধে ঘটনার এক বছর পরই তাঁকে জেলে পাঠানো হয়।
নতুন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন রাজনীতি ও অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ দিনগুলোর মধ্যে পূর্বসূরিকে (আগের প্রেসিডেন্ট) ক্ষমা করেন। এর আট মাস পর আরেক প্রেসিডেন্ট স্যামসাং-এর কার্যত প্রধানকেও ক্ষমা করলেন।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এটি খুবই বাজে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল বলে মনে করছেন তাঁরা। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও শিল্প নীতির অধ্যাপক সানগিন পার্ক বলেন, ‘এটি হলো পিছু হটা। এবং এর অর্থ সেই মোমবাতি জ্বালানো বিক্ষোভের দিনগুলোর আগের যুগে ফিরে গেল কোরিয়া।’
লির এই ঘটনা সেই জনপ্রিয় ধারণাকেই আবার প্রতিষ্ঠিত করল যে—বড় ব্যবসায়ীরা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে!
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে বিশাল কনগ্লোমারেটগুলোর আধিপত্য। শীর্ষ ১০টি কোম্পানিরই জিডিপিতে অবদান প্রায় ৮০ শতাংশ। এগুলোকে কোরীয় ভাষায় বলে চেবোল। পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য এগুলো। এলজি, হুন্দাই, লোটে এবং এসকে এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই চেবোলগুলোর মধ্যে স্যামসাং সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমতাবান; বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা এবং বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড। তবে নিজ দেশে এই কোম্পানি আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। যেমন: হাসপাতাল, হোটেল, বিমা, বিলবোর্ড, শিপইয়ার্ড এবং এমনকি থিম পার্ক!
এ ব্যাপারে টরন্টো ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউনকিউং লি বিবিসিকে বলেন, ‘স্যামসাং এবং অন্য চেবোলগুলো এতটাই সর্বব্যাপী যে তারা “অক্টোপাস ফার্ম” নামে পরিচিত।’
এই বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘকাল আগেই কোরিয়ার রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তরে প্রবেশ করেছে। অধ্যাপক লি ২০১৬ সালের প্রতিবাদ বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দেখেছেন, নাগরিকদের রাগ মূলত প্রেসিডেন্ট পার্কের ব্যক্তিগত কার্যকলাপ কেন্দ্রিক। কিন্তু শ্রমিক অধিকার কর্মী এবং অন্যরা সরকারের মধ্যে চেবোলদের প্রভাব-প্রতিপত্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
কোরীয় যুদ্ধের পর সরকার চেবোলদের ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে। তাদের কম দামে বিদ্যুৎ এবং কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। ‘দেশীয় পণ্য কেনার’ একটি নীতি নিয়েছিল সরকার। এমনকি শিল্প-কারখানাগুলোতে শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলন দমনে সরাসরি সহায়তা করেছিল খোদ সরকার।
এতে জায়ান্টগুলো আরও অবয়বে বাড়তে থাকে কিন্তু একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ ধ্বংস করে দেয় এবং শ্রমিক আন্দোলন দমন করা হয়। এভাবে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী চর্চার একপর্যায়ে প্রবেশ করে অনিয়ম। কয়েক দশক ধরে ঘুষ ও দুর্নীতির জালে জড়িয়ে যায় চেবোলগুলো।
অধ্যাপক লি বলেন, বহুবার ধরা পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে নির্বাহীদের লঘু দণ্ড বা সাময়িক বরখাস্ত করার মতো সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিচারকেরা বলেছেন, যদি কোনো চেবোল নেতাকে তাঁর কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
স্যামসাংয়ের বর্তমান প্রধান লি-এর বাবা লি কুন-হি ১৯৯০-এর দশকে ঘুষ এবং জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি স্যামসাং চেয়ারম্যান। কিন্তু একদিনও জেল খাটেননি।
তাই ২০১৭ সালে যখন লি কুন হির ছেলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান এবং গরাদ ঘরের বাসিন্দা হন তখন অধিকার কর্মীরা আশা করেছিলেন, এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে।
কিন্তু শিগগিরই এই আশার গুড়ে বালি ঢেলেছে সরকার। আদালতে আইনি লড়াই বছরের পর বছর ধরে চলেছে। বারবার ঘটনা নানা দিকে মোড় নিয়েছে। একটি আপিল আদালত তাঁকে মুক্তি দেন। একটি উচ্চ আদালত তারপর আবার বিচারের আদেশ দেন, যেখানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার কারাগারে পাঠানোর মাত্র কয়েক মাস পরে মুন সরকার তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেয়। যুক্তি হিসেবে ‘জাতীয় স্বার্থের’ কথা বলে সরকার।
এরপর থেকে লি স্যামসাংয়ের প্রধান মুখে পরিণত হন। গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাণিজ্য সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানান লি।
কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়নে কারচুপি, হিসাব জালিয়াতি এবং শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ফৌজদারি অপরাধ কাঁধে নিয়ে ঘুরছেন লি। এই ধরনের একজন অপরাধীকে ক্ষমা করার অর্থ হলো তিনি তাঁর নির্বাহী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে যোগ্য বিবেচিত হবেন।
যুদ্ধ পরবর্তী কোরিয়ার ইতিহাস বলে, সাজা পাওয়া চেবোল নেতাদের ক্লিন চিট দেওয়ার একটি ঐতিহ্য এ দেশে রয়েছে। কারণ আনুষ্ঠানিক ক্ষমতার কথা বললে সামনে আসে—প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং জাতীয় পরিষদ—যারা আইন তৈরি করে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক প্রভাব বা সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা আসে বা কোরীয় সমাজে চেবোলের প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকেরা কীভাবে ভাবছে—তখন পুরো চিত্রটি একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক অভিজাতদের জোটের ধারণায় পর্যবসিত হয়, যাদের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে।
লি-কে সাধারণ ক্ষমা করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ‘অর্থনীতির জন্য চেবোল নেতাদের প্রয়োজনের’ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, এর সপক্ষে শক্ত প্রমাণ নেই। যেমন: লি যখন কারাগারে বা কারাগারের বাইরে বিচ্ছিন্ন ছিলেন তখনো কিন্তু স্যামসাং বেশ ভালোই চলেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর। সুতরাং এই চেবোলদের ওপর নির্ভরতা কমানোর এটাই সময়। তা ছাড়া বহু আলোচিত অর্থনীতির ‘ট্রিকল ডাউন’ (সম্পদ ওপর থেকে নিচে চুঁয়ে পড়া) তত্ত্ব একাধিক গবেষণায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি ও চেবোলদের প্রভাব মোকাবিলার ইচ্ছে সরকারের রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার পেছনে একটি আসন্ন মন্দা এবং বিশ্ব মঞ্চে কোরিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী স্যামসাংয়ের গর্ব খর্ব হওয়ার ভয় ও উদ্বেগ কাজ করছে।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৫ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৫ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৬ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
২০ দিন আগে