সম্রাটদের অর্থের তথ্য চেয়ে মিলল শুধু প্রশ্ন

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২২, ১২: ০৬
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২২, ১২: ২৮

যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার অর্থ পাচারের বিষয়ে তিন দেশের কাছে তথ্য চেয়েও উল্লেখযোগ্য সাড়া মিলছে না। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের কাছে ওই দুজনের অর্থ পাচারের তথ্য চেয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একপর্যায়ে দুজনের বিষয়ে তারা আরও কিছু তথ্য জানতে চায়।

দের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সম্রাট ও খালেদের বিষয়ে বিস্তারিত লিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় সিআইডি। কিন্তু এরপর দেশ তিনটি আর সাড়া দেয়নি। এর মধ্যে খালেদের বিষয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা একটি নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বছর ধরে পড়ে আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই চিঠি মালয়েশিয়ায় পাঠায়নি। এই জটিলতায় সম্রাট ও খালেদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত দুই বছর ধরে থমকে আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি আর খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুজনের বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলা ছাড়াও অর্থ পাচারের মামলা হয়। দুজনেই জামিনে আছেন।

সিআইডির একটি সূত্রে জানা যায়, সম্রাট ও খালেদ থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিআইডি জানতে পারে। ওই তিন দেশে ব্যাংক ও ক্যাসিনোর হিসেবে তাঁদের টাকা থাকার তথ্যের ভিত্তিতেই ২০২০ সালে দুজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা হয়। তবে দেশগুলোর ব্যাংক ও ক্যাসিনো চাইলেই কোনো দেশকে তথ্য দেয় না। তাই মামলা হওয়ার পর ২০২০ সালেই স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি দেন সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

সূত্রমতে, ২০২০ সালে দেশ তিনটি বাংলাদেশকে কিছুই জানায়নি। ২০২১ সালের মে মাসের দিকে দেশগুলো বাংলাদেশের কাছে জানতে চায়, সম্রাট ও খালেদের এসব তথ্য দিয়ে কী হবে, কোথায় ব্যবহার হবে? এ ছাড়া তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চায়। সে বছরই স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশ তিনটিকে তথ্য দেওয়া হয়।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখার বিশেষ সুপার (এসএস) হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদেশে অর্থ পাচারের মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। তিনটি দেশে তথ্য চেয়েছি, তবে তারা এখনো কোনো তথ্য আমাদের দেয়নি। তাদের তথ্য পেলেই এই মামলার তদন্ত দ্রুত অগ্রসর হবে।’

যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে 
জানা যায়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ফরেন ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংগঠনের কাছ থেকে সম্রাটের বিষয় অর্থ পাচারের তথ্য জানতে পারে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তাঁর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব ও ক্যাসিনোর হিসাবে ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ তথ্য পেয়ে সিআইডি মামলা করে।

সেই সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া সরকারের কাছে তথ্য চায়। কয়েক মাস পর দেশ দুটি সম্রাটের বিষয়ে নানা তথ্য চায়। তাদের চাওয়া অনুযায়ী সম্রাটের বিরুদ্ধে থাকা মামলা, পাসপোর্ট নম্বর, পেশা, বিদেশভ্রমণ, দেশে সম্পত্তির পরিমাণ ও মামলার বিষয়ে জানিয়ে দেয় সিআইডি।

সিআইডি সূত্রমতে, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে খালেদের ৮ কোটি টাকা পাচার করার তথ্য পেয়ে সিআইডি তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা করে। পরে দুটি দেশের কাছেই তথ্য চাওয়া হয়। মালয়েশিয়া সাড়া দিলেও থাইল্যান্ড এখনো কিছু জানায়নি। খালেদের এসব তথ্য দিয়ে কী হবে—মালয়েশিয়ার এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় সিআইডি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো চিঠিটি মালয়েশিয়ায় পাঠায়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তা চিঠিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠাবেন, তিনি ব্যস্ততার কারণে পাঠাতে পারেননি।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।’

ক্যাসিনোর টাকা কি ফেরত আনা সম্ভব? 
সিআইডি সূত্রের দাবি, সম্রাট ও খালেদ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ব্যাংক হিসাব খুলে ক্যাসিনো খেলতেন। তাঁদের পাচার করা অর্থ কোনো ব্যাংকে ও কোন ক্যাসিনোতে কত আছে তার গোয়েন্দা তথ্য পেলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো তথ্য পায়নি সিআইডি।

সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ব্যাংক ও ক্যাসিনোর অ্যাকাউন্টে সম্রাট ও খালেদের পাচার করা অর্থ আছে। তারা সব টাকা খরচ করেনি। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়ার পর আমরা ওই দেশের সরকারকে তাদের দুজনের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার অনুরোধ করব। তিনটি দেশের সরকার চাইলে ওই দেশ থেকে টাকা ফেরত আনা সম্ভব।’

সাবেক আইজিপি শহীদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব দেশে আমাদের অর্থ পাচার হয়েছে, সেই সব দেশ যদি আমাদের সহযোগিতা না করে, তাহলে কখনোই মামলার তদন্তে অগ্রগতি সম্ভব না, অর্থও ফেরত আসবে না। এ জন্য আমাদের সরকারের সঙ্গে অন্য দেশের সরকারের চুক্তি থাকা প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত