সন্তান নেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি ফোন করছে চীন সরকার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ২০
Thumbnail image
১৪০ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। ছবি: সংগৃহীত

এক সন্তান বা দুই সন্তান নীতি বহু আগেই বাদ দিয়েছে জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ চীন। এশিয়ার এই পরাশক্তি অর্থনীতিকে সচল রাখতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। দেশটি এখন সন্তান নেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি ফোন করছে। শুধু তাই নয়, সন্তান নিলে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪০ কোটির দেশ চীনে বয়স্ক জনসংখ্যার তুলনায় তরুণের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। এ কারণে নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে তরুণদের সন্তান নিতে উৎসাহিত করতে চেষ্টা করছে দেশটির সরকার। তরুণ প্রজন্মকে প্রেম, বিয়ে ও সন্তান ধারণে উৎসাহী করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। বিবাহিত নারীদের ফোন করে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। একাধিক সন্তান নেওয়ার জন্য বাবা-মাকে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে স্থানীয় সরকার।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বিবাহিত নারীদের ফোন করে তাঁদের পরিবার পরিকল্পনা জানতে চাইছেন। বিবাহিত নারীদের বিনা মূল্যে প্রজনন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কেউ কেউ জানান, একাধিক সন্তান থাকলে তাঁদের প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

ঝেজিয়াংয়ের বাসিন্দা এক নারী জানান, স্থানীয় কর্মকর্তারা দ্বিতীয় সন্তানের জন্য ১৪ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রায়) প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর্থিক অবস্থা অনুসারে শিশুদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করেছে স্থানীয় সরকার।

এ ছাড়া বিয়ের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রেম, সন্তান ধারণ ও পরিবারের গুরুত্ব বোঝাতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘প্রেম শেখানোর কোর্স’ চালু করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতে নিয়মিত শিশু ধারণের উপকারিতা সম্পর্কে নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে।

একটি জরিপে দেখা গেছে, চীনের ৫৭ শতাংশ কলেজ শিক্ষার্থী প্রেম করতে চায় না। কারণ হিসেবে তারা বলছে, পড়াশোনা ও প্রেম একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম চায়না পপুলেশন নিউজের বরাতে জিয়াংসু সিনহুয়া সংবাদপত্র জানায়, কলেজ শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে প্রজননের মূল চালিকাশক্তি হবে। কিন্তু তাঁদের প্রেম ও বিয়ের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন। তাঁদের ভালোবাসা ও বিয়েবিষয়ক শিক্ষাগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

এই কোর্স বিয়ের স্বাস্থ্যগত, ইতিবাচকতা ও সন্তান ধারণের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাবে বলে আশা করছে সরকার। চীন সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, তাঁরা যেন ‘সঠিক বয়সে’ বিয়ে এবং সন্তান ধারণের বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালায়, যাতে মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এ ছাড়া গণমাধ্যমগুলোতে সন্তান জন্মদানের উপকারিতা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পিপলস ডেইলি ও লাইফ টাইমস সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্তান ধারণ মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এবং কিছু রোগ নিরাময়েও সাহায্য করে।

তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে চীন সরকারের পদক্ষেপের ফলপ্রসূতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ দেশটিতে উচ্চ বেকারত্ব ও মন্দ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার খরচ কমানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত মাসে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ রেন জিপিং জানান, চীনের তিনটি প্রধান জনসংখ্যা সমস্যা রয়েছে। এগুলো হলো— পৌঢ়ত্ব, জন্মহার হ্রাস ও বিবাহের হার কমে যাওয়া। একদিকে সন্তানের সংখ্যা কমছে অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

বেইজিংয়ের পরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে, শিশু লালন–পালনের জন্য বাবা–মাকে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেওয়া হবে। করছাড় দেওয়া হবে। গত অক্টোবরে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার স্টেট কাউন্সিল জানায়, তাঁরা একটি সন্তানবান্ধব দেশ গড়ার পরিকল্পনা তৈরি করছেন। দেশের অর্থনীতি সচল করার উদ্দেশ্যে একটি বৃহত্তর প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে।

দীর্ঘ সময় ধরে ‘এক পরিবার, এক সন্তান নীতি’ কঠোরভাবে মেনে চলেছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন। অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৯ সালে এক সন্তান নীতি চালু করে দেশটি। ক্রমেই জনসংখ্যা কমতে থাকলে ২০১৫ সালে দুই সন্তান নীতি চালু করে। এর পরও জনসংখ্যা আশানুরূপ না বাড়ায় ২০২১ সালে তিন সন্তান নীতিতে যায় চীন।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ওয়াং ফেং বলেছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ১৯৮০ সালে এক সন্তান নীতি গ্রহণ করেছিল চীন। ৩৫ বছর ধরে দেশটিতে এই নীতি প্রচলিত থাকায় এর একটি সামাজিক প্রভাব রয়েছে। ফলে এখন এসে যখন একই রাষ্ট্রযন্ত্র বা ক্ষমতা ব্যবহার করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তা আলোর মুখ দেখবে না।

তিনি বলেন, ‘এটি নতুন বোতলে পুরোনো মদ, যা কার্যকর হবে না। দেরিতে বিবাহ এবং কম জন্মহারের পেছনের কারণগুলো সম্পূর্ণ আলাদা।’

নারীবাদী লেখিকা হিসেবে পরিচিত শেন ইয়াং বলেন, ‘চীন সরকার জন্মহার বাড়াতে চাইলে বাবা–মায়ের জন্য, বিশেষ করে একক মায়েদের জন্য, আরও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

চীনা জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ওয়াং মনে করেন, আজকের উচ্চশিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে সন্তান নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা কঠিন হবে, বিশেষ করে তরুণীদের ক্ষেত্রে। কারণ, সন্তান ধারণের ফলে কর্মক্ষেত্র এবং জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ার কারণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শপথ নিয়েই বাইডেনের নীতি বাতিল ও ১০০ নির্বাহী আদেশের ঘোষণা ট্রাম্পের

আয়রন রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট পরবে পুলিশ

বিচার বিভাগের সমস্যা তুলে ধরলেন বিচারক, আনিসুল হক বললেন ‘সমস্যা কেটে যাবে’

শাহজালাল বিমানবন্দরে চাকরি নেননি মনোজ কুমার, বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি

সিলেটে রিসোর্টে ৮ তরুণ-তরুণীকে জোর করে বিয়ে, কিছু না করেই ফিরে এল পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত