Ajker Patrika

সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চায় ঢাকা-বেইজিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা            
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ২১: ৪৬
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ও চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঐতিহাসিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

গতকাল বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস গ্রেট হলে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানাতে নিজের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট সি। এটি এক বিরল সম্মান। পরে উভয় নেতা তাঁদের নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।

বাংলাদেশকে চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে উল্লেখ করে সি চিন পিং বলেন, উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা বাড়াতে চায় চীন। তিনি জানান, বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ২০২৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনার প্রস্তাব দেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে চীন তার বিনিয়োগনীতিতে পরিবর্তন এনে আরও বেশি বেসরকারি চীনা বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীল কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা দেবে।

প্রেসিডেন্ট সি জানান, বাংলাদেশে একটি বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একাধিক শিল্পপার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি চীনের বাজারে আরও বেশি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির আহ্বান জানান এবং বিআরআই প্রকল্প, ডিজিটাল ও সামুদ্রিক অর্থনীতিতে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের আরও বেশি নাগরিক যেন ইউনানসহ চীনের অন্যান্য প্রদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণেরও ঘোষণা দেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন।

জবাবে প্রেসিডেন্ট সি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীনের সহযোগিতা চান এবং বাংলাদেশে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তিনি চীনা প্রকল্প ঋণের সুদহার কমানো এবং ঋণসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফের অনুরোধও করেন।

প্রেসিডেন্ট সি তাঁর বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ফুজিয়ানের গভর্নর থাকাকালে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট জানান, প্রধান উপদেষ্টার উত্থাপিত বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে।

বাংলাদেশি আম ও কাঁঠালের প্রশংসা করে সি বলেন, চীন এগুলো আমদানি করতে প্রস্তুত।

বৈঠকে তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের সহায়তা, বহুমুখী যুদ্ধবিমান ক্রয় এবং দক্ষিণ চীনের কুনমিং শহর থেকে বাংলাদেশি বন্দরের সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আজ আমরা ইতিহাসের অংশ হলাম। এটি একটি রূপান্তরকারী সফর, যেখানে দুই নেতা ভবিষ্যতের কৌশলগত সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে তুলেছেন, যা আগামী কয়েক দশক ধরে অব্যাহত থাকবে।’

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ঝেং শানজিয়ে এবং উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত