২৫ দিন ধরে ইন্টারনেট নেই ঢাবির সূর্যসেন হলে, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর 

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ৩৯
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ৪১

এপ্রিলের ৪ তারিখ থেকে ইন্টারনেট নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলে। গত ২২ এপ্রিল থেকে অনলাইনে ক্লাস হওয়ায় দুর্যোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল থেকে হলে কোনো ধরনের ইন্টারনেট কানেকশন নেই। ইন্টারনেট না থাকার ফলে মোবাইল ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ইন্টারনেট যারা প্রোভাইড করেন তারা চলতি মাসেরও বিল নিয়েছেন। তবে কী কারণে এত দিন ধরে হলে ইন্টারনেট নেই—এ বিষয়ে কিছু জানেন না হলের শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। 

হল শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা হয় ইন্টারনেটের বিষয়ে। তারা জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক সাব্বির আহমদে (সিফাত) মিলে গ্রিন জোন অনলাইন নামক একটি কোম্পানি থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নেন হলের জন্য। কানেকশন নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত ইন্টারনেট পাওয়া কষ্ট হত। গত ৪ তারিখ থেকে একদম নেট নেই। 

ছাত্রলীগের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানান, চলতি মাসের বিলও কোম্পানিটি নিয়ে নেয়। আরিফ ও সাব্বির মিলে কমিশনের মাধ্যমে এ ইন্টারনেট কানেকশন নিয়েছেন। তারা তাদের রুমসহ বেশ কয়েকটি রুমে ফ্রি সার্ভিস ও পাশাপাশি বড় অঙ্কের টাকা নিতেন। 

সূত্র আরও জানায়, সিফাত ঢাবির শিক্ষার্থী নন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঢাবি শিক্ষার্থী না হয়েও হলের ৩৪৩ নম্বর কক্ষে থাকেন এ ছাত্রলীগ নেতা। আরিফুল ইসলাম ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের বাইকার ও সিফাত সব সময় সঙ্গে থাকেন। তারা উভয়ে শয়নের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। 

সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপে দেখা যায়, সম্প্রতি হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুনভাবে ইন্টারনেট কানেকশন নিচ্ছেন হলের শীর্ষপদ প্রত্যাশীরা। 

হলে দীর্ঘদিন যাবৎ ইন্টারনেট না থাকার বিষয়ে কথা হয় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারাও হলে ইন্টারনেট না পাওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগে উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও সহ. সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সিফাতের দৌরাত্ম্যের কথা বলেন। 

মাস্টারদা সূর্যসেন হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হলে যখন ছাত্রসংসদ ছিল, তখন ইন্টারনেটের বিষয়ে সরাসরি ছাত্রসংসদ ডিল করত। কিন্তু এখন নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধি নেই। ছাত্রলীগের নেতারা ইন্টারনেট নিয়ে আসে এবং তারা কমিশন নিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়, তাদের রুমগুলোতে ফ্রি দিতে হয়। কিন্তু মূল টাকাটা শিক্ষার্থীদের পকেট থেকে যায়। এত কিছুর পরেও ২৪ দিন যাবৎ হলে কোনো ইন্টারনেট নেই। যারা ইন্টারনেট দিত, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায় না।’ 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক সাব্বির আহমদে (সিফাত)দর্শন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘চলতি মাসের বিল দেওয়ার পরেও ইন্টারনেট নেই। কী কারণে নেই—সেটাও জানি না। যারা ইন্টারনেট নিয়ে এসেছেন, তারাও মুখ খোলেন না। অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পরে ভোগান্তি বেড়েছে।’ 

হলের ইন্টারনেট না থাকা, বিল নিয়ে সার্ভিস না দেওয়া এবং বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম ইন্টারনেট কানেকশন আনার বিষয়ে জড়িত নন বলে জানান। সিফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হলে যখন নেট কানেকশন দুর্বল ছিল তখন আমরা মিলেমিশে নতুন কানেকশন নিয়ে আসছিলাম। পরে এখন কেন দিচ্ছে না, সে বিষয়ে অবগত নই এবং কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নই।’ 

আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও ঢাবির হলে থাকেন—এমন প্রশ্ন করলে সুর পাল্টে ফেলেন সাব্বির। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট কানেকশন আনার বিষয়ে আমি জড়িত নই।’ হলে থাকার বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি তিনি।

গ্রিন অনলাইন জোন কোম্পানির নাম বলে ইন্টারনেট বিল তুলতেন রবিন। কোম্পানির লোক বলে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখভাল করতেন নাভিদ সাচ্চু নামের একজন। নাভিদ সাচ্চুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইন্টারনেট কানেকশনের কাজের সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান। এদিকে রবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গ্রিন অনলাইন জোনের ওয়েবসাইটে থাকা নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে টেকনিশিয়ান আশরাফুল ফোনকল রিসিভ করেন। মাস্টারদা সূর্যসেন হলে কোনো ইন্টারনেট কানেকশন দেওয়া হয় কি না—জানতে চাইলে আশরাফুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির কোনো লাইন ওখানে নেই। কোনো থার্ড পার্টি হয়তো আমাদের কাছ থেকে নিয়ে ওখানে সার্ভিস দেন।’ 

সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদের আগে থেকে ইন্টারনেট সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে মিটিং করেছি। তবে হল প্রশাসনের পক্ষে পুরো হল কাভারেজ করে ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা মিলেমিশে আগে এনেছে, এখন সমস্যা হয়েছে। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত