বিয়ের শর্ত ‘শহীদ’ হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২১, ১০: ৫৬
Thumbnail image

কলেজপড়ুয়া জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলার (১৯) নানা বিষয়ে হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ করেন বাবা-মা। তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁদের মেয়ে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। সমস্যা সমাধানে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। মেয়ে বিয়েতে রাজিও হন। কিন্তু শর্ত জুড়ে দেন—তাঁর সঙ্গে জিহাদের ময়দানে ‘শহীদ’ হতে হবে। তাহলেই বিয়ে করবেন।

শেষ পর্যন্ত বিয়ে আর হয়নি। নাবিলা নামের সেই মেয়েটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে জঙ্গিবাদের প্রচার চালাতে শুরু করেন। এরপর গত ২৬ আগস্ট বাড্ডায় আত্মীয়র বাসা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

এ নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান গতকাল রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করে গত ২৬ আগস্ট বাড্ডায় আত্মীয়ের বাসা থেকে নাবিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। তাঁর বাবা জোবায়দার একজন শিক্ষক। এই তরুণী আনসার আল-ইসলামের সক্রিয় সদস্য। তিনি সহিংস জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রথমে ছেলে হিসেবে তাঁকে নজরদারিতে রেখেছিলাম। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর দেখি তিনি একজন কলেজপড়ুয়া মেয়ে। এই জঙ্গি সংগঠনটিতে এর আগে কোনো নারী সদস্য ছিল কি না, আমাদের জানা নেই। তবে তিনি প্রথম নারী সদস্য, যাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। আর কোনো নারী এ সংগঠনে যুক্ত আছে কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

 আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে পরিচয় গোপন করে একটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। একসময় তিনি ফেসবুকে আনসার আল-ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পান। তখন তিনি এই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল-ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও লেখা পড়তে শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। পরে ‘তিতুমীর মিডিয়া’র পেজের অ্যাডমিন আনসার আল-ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক দেন তাঁকে। ওই লিংক থেকে জোবায়দা আনসার আল-ইসলামের সেসব অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকতে শুরু করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে জঙ্গিবাদ প্রচারণার জন্য নাবিলার দুটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, একটি ‘শার্পওয়্যার’ (মেজেসিং অ্যাপ) ও চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির বেশি চ্যানেল নিজে খুলে তা পরিচালনা করতেন। এসব চ্যানেলে আনসার আল-ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করতেন তিনি। তাঁর নিজের সব কটি টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবক্রাইবার রয়েছেন। যাঁরা নিয়মিত তাঁর চ্যানেলগুলো অনুসরণ করেন।

এই তরুণীর বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। তিনি আদালতের আদেশে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে আছেন। তবে তরুণীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত