Ajker Patrika

পরিচয় গোপন করে মাদ্রাসার শিক্ষকতা করত মজিদ মাওলানা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ২০
পরিচয় গোপন করে মাদ্রাসার শিক্ষকতা করত মজিদ মাওলানা 

১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগে ২০১৫ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানাকে (৮০)। ২০১৪ সালে মামলা হওয়ার পর বিচারকাজ চলাকালে আব্দুল মজিদ নেত্রকোনার ছেড়ে প্রথমে ঢাকার ফকিরাপুল, পরে মাদারীপুরে পরিচয় গোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে আত্মগোপনে ছিল। 

নিয়মিত বাসা পরিবর্তন, অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার, জনসমাগম, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চললেও অবশেষে গতকাল বুধবার রাতে মাদারীপুর সদর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। 

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, নেত্রকোনার কুখ্যাত রাজাকার মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা ১৯৭০ সালে পূর্বধলা থানার জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মজিদ রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদরের পূর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান হয়। পূর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের খালেকের বাড়িতে খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর সবাইকে গুলি করে হত্যা কর। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশটি পার্শ্ববর্তী কংস নদে ফেলে দেয়। এ ছাড়া অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দী করে ফেলে দিয়ে আস। 

তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগও কর। মজিদ পূর্ব মৌদাম গ্রামে একটি মুক্তি কয়েদখানা গড়ে তোল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করত মজিদ রাজাকার। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ৩৬তম রায়ের বিষয়ে র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন পালিয়ে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা খালেকের ভাই আব্দুল কাদের ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালে আরও তিনজনসহ মোট সাতজন আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। বিচার চলাকালে এই মামলার দুজন আসামি আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান মারা যায় এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যায় আরও দুই আসামি রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ। দুই আসামি আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ এখনো পলাতক। আর মামলার বিচার চলাকালে কোনো হাজিরা না দিয়ে ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। এরপর তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করে। 

র‍্যাব জানায়, ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই আব্দুল মজিদ প্রথমে ঢাকায়, পরে মাদারীপুরে চলে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে সে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত। এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সে অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। সে এবং তার ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত