Ajker Patrika

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের ২৬ কোটি টাকা লুটপাট 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৬: ০৬
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের ২৬ কোটি টাকা লুটপাট 

গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কোম্পানির কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার একটি চক্র সাধারণ কর্মচারীদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা লুটপাট করেছে। লুটপাট ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত এমন আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তার মো. মাইনুল ইসলাম (৩৯) গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি।

রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান মোহাম্মাদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। 

বুধবার কুমিল্লার সদর থানার মগবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এই ইউনিয়ন নেতার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ এবং ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি চেক জব্দ করা হয়।

এর আগে কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গত ৫ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে মাইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ডিবির প্রধান।

ডিবির প্রধান বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ৮০: ১০: ১০ অনুপাতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা থাকলেও ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নন’ এবং ‘কোম্পানি অলাভজনক’সহ বিভিন্ন অজুহাতে লভ্যাংশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে দাবি জানালে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯ জন শ্রমিককে বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকেরা শ্রম আদালতে ১৯০টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোম্পানির ও শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার যোগসাজশে মামলা তুলে নেওয়া হয়। 

হারুন অর রশিদ আরও বলেন, গত ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে বিগত ২০১০ সাল থেকে চলতি ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশের টাকা ও এই অর্থের সুদ হিসেবে আরও ৪ শতাংশ টাকা হারে কোম্পানি থেকে এই সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা জমা করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়। 

ডিবির প্রধান বলেন, শ্রমিকদের সব পাওনা এই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোনো অর্থ ছাড় করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন মিলে অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলে। 

গ্রেপ্তার মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকেসহ এই প্রতিষ্ঠানের আরও কর্মীদের অর্থের প্রলোভনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ইনডেমনিটি দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য এবং কর্মচারী ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবীকে অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি বা পারিতোষিক প্রদান করতে উৎসাহী করে।

৪৭৩ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে, বাকি টাকা কোথায় গেলে প্রশ্ন করা হলে ডিবির প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ 

ড. ইউনূস এর সঙ্গে জড়িত আছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ বিষয়ে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তে যা আসবে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত