Ajker Patrika

ব্রিটিশ এমপি খুনে কি কাতার যোগ

অনলাইন ডেস্ক
ব্রিটিশ এমপি খুনে কি কাতার যোগ

গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের এমপি ডেভিড অ্যামেস খুন হন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার একটি গির্জায় তিনি মারাত্মকভাবে ছুরিকাহত হয়েছিলেন। বিষয়টি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক মহলকে হতবাক করেছে। এ ঘটনায় ২৫ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলী হার্বি আলী নামে ওই যুবক ব্রিটিশ নাগরিক এবং সোমালিয়ার এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তার ছেলে।

এ বিষয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী সব সম্ভাব্য বিষয়েকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে উঠে আসছে নানা তত্ত্ব। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি তত্ত্ব হলো- ডেভিড অ্যামেসের কাতার যোগ।

গত শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ইসলামি চরমপন্থার সঙ্গে যুক্ত একটি সম্ভাব্য মোটিভ তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু রোববার গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে টাইমস বলছে, সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁরা নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন না।

আরেকটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের সঙ্গে অ্যামেসের সম্পর্কই তাঁর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। টাইমস পত্রিকা অ্যামেসকে উপসাগরীয় দেশটির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্রিটিশ রাজনীতিক হিসেবে বর্ণনা করেছে। কাতার সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল্লাহি মোহাম্মদকে সমর্থন করে। এই কনজারভেটিভ এমপি কাতার সম্পর্কিত সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের সভাপতি ছিলেন। ঘটনার আগের সপ্তাহেই দেশটি সফর করেছিলেন তিনি। 

দ্য টাইমসের ডেভিড রোজ বলছেন, কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, সোমালিয়ার দুর্দশার পেছনে দোহার সঙ্গে মোহাম্মদের এই সম্পর্কের ভূমিকা আছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদের চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি তিনি। এ নিয়ে দেশটিতে ভয়াবহ সহিংসতার সূত্রপাত হয়। 

সোমালিয়ার ওপর কাতারের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ দেশটির তরুণদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে, রাজপথে বিভিন্ন ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁরা। 

এমআই ফাইভ ধন্দে পড়েছে
দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত আরেকটি তত্ত্ব হলো, অ্যামেসকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়নি। যে কোনো জাতীয় রাজনীতিবিদকে হত্যার চক্রান্তের অংশ হিসেবে দৈবচয়নে অ্যামেসকে বেছে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, আলী আসলে একক ও স্বাধীন ভাবে কাজটি করেছেন। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদীদের বলা হয় ‘লন উলফ’। এ ধরনের হামলায় পরিকল্পনা থাকে খুব সামান্যই আর পুরো কার্যক্রমটি ততটা গোছানো থাকে না। সরকারের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র টেলিগ্রাফকে জানিয়েছে, হামলাকারী নির্দিষ্ট কাউকে টার্গেট করেনি। এখানে অ্যামেসকে একজন ‘দুর্ভাগ্য’ বলা ছাড়া কোনো ভাবে ঘটনাটির ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। 

পত্রিকাটি বলেছে, এই তত্ত্বটিই শেষ পর্যন্ত ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেখানে অ্যামেস একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক। তিনি তাঁর মূল্যবোধ, মতামত বা ধর্মের কারণেই হামলাকারীর টার্গেট হয়ে থাকতে পারেন। 

ডেইলি মেইল বলছে, অ্যামেসকেই কেন হত্যার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভও ধন্দে পড়েছে। 

হামলাকারীর অতীত ইতিহাস
ডেইলি মেইল বলেছে, আলীর নাম তার কৈশোরের শেষ লগ্নে ব্রিটেনের চরমপন্থা-বিরোধী স্কিম ‘প্রিভেন্ট’-এ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি তাঁর সোমালিতে জন্ম নেওয়া বাবা-মার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির সময়ের সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে মিলে যায়। 

তবে বিবিসি বলছে, আলী কখনোই এমআই ফাইভের নজরে ছিলেন না। গোয়েন্দা সংস্থাটি তাকে কখনো সন্দেহের চোখে দেখেনি। এতে বোঝা যায়, ব্রিটেনের প্রিভেন্ট স্কিমে কাউকে তালিকাভুক্ত করা একটি স্বেচ্ছা মূলক বিষয় এবং এতেই কারও অপরাধী হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। 

শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা (এনএইচএস) এবং অন্যান্য ব্যক্তি কারও নাম স্থানীয় পুলিশ প্যানেল পাঠাতে পারেন। সমাজকর্মী এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা ঠিক করেন সেই ব্যক্তির জীবনে হস্তক্ষেপ করা হবে কি-না এবং করলে তা কীভাবে করা হবে তা নির্ধারণ করেন। 

সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক আছে কি? 
দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বাস করে যে এই হামলার পেছনে আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট এবং সোমালিয়ায় সক্রিয় আল-শাবাবের মতো ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর অনুপ্রেরণা থাকতে পারে। 

আলীর সোমালি ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু তার জন্ম যুক্তরাজ্যে, বেড়ে উঠেছেন ক্রয়েডনে। কাছাকাছি সময়ে সোমালিয়া ভ্রমণ করেছেন এমন কোনো প্রমাণও নেই। 

দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলীর বাবা হার্বি আলী কুলেন সোমালিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যোগাযোগ পরিচালক ছিলেন। হার্বি নিজেও ইসলামপন্থীদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। আল-শাবাব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনো সোমালিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। হার্বি আলী দেশে থাকাকালে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। এ কারণেই তাঁকে টার্গেট করা হয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। 

হার্বি আলী এখন উত্তর লন্ডনে বসবাস করেন। সানডে টাইমসকে তিনি বলেন, ছেলেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তিনি মর্মাহত। এমন কিছু ঘটবে তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। 

হোয়াইট হল সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলীর বিদেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগ ছিল এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গোয়েন্দারা একটা সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন আর সেটি হলো- লকডাউনের সময় ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে হয়তো সে ধরনের কিছু কনটেন্ট তিনি পেয়েছেন যেখান থেকে নিজেই ‘মৌলবাদে’ দীক্ষা নিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

খামেনিকে চিঠি দিয়ে যে প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারী বাধ্যতামূলক ছুটিতে, মামলা এখন আদালতের এখতিয়ারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত