Ajker Patrika

কোচিং বন্ধে কঠোর নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ

রোবেল মাহমুদ, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) 
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৯
কোচিং বন্ধে কঠোর নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা খাতুন কোচিং বন্ধের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়ে নিজেই সহকর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মানসিক হেনস্তার অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি। একই সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেছেন। 

মাউশির মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ থেকে জানা যায়, খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের দুই সহকারী শিক্ষক মাহমুদুর রহমান ও মামুনুর রশিদ; সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান, কবির আহমেদ ও খুরশেদুজ্জামান প্রায়ই বিদ্যালয়ে গরহাজির থাকেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়াই স্কুল কামাই করছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষকেরা স্কুল সময়ে বাসায় কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। 

বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত এবং কোচিং ও প্রাইভেট বন্ধ করতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও ইউএনওর পরামর্শে বায়োমেট্রিক হাজিরা স্থাপন করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকেরা গত ২৮ মার্চ শিক্ষক মিলনায়তনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ করে মারধর করতে উদ্যত হন। এ সময় অন্য সহকর্মীদের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান তিনি। গত ২৯ মার্চ তিনি হেনস্তার শিকার হয়ে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গফরগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেই সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। 

এ ঘটনার পর ওই শিক্ষকদের বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে গত ৩ এপ্রিল কারণ দর্শানোর নোটিশও দেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। 

বিদ্যালয়ের টানাপোড়নে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, শিক্ষকেরা এখন দলাদলিতে ব্যস্ত, ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে পাঠদান করা হচ্ছে না। 

আরেক অভিভাবক হাবিবুর রহমান বলেন, একটি স্বনামধন্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষকেরা কোচিং ও প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিনিয়র শিক্ষক মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজে আমি জড়িত নই। বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসি। এ ছাড়া কোনো কোচিং সেন্টারে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’ 

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাসায় কোচিং ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সহকারী তিন শিক্ষক তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, করোনা ও রমজানের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বল্পতায় পাঠদান কম হচ্ছে। 

ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়ে ক্লাস রেখে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ সত্য নয়। বায়োমেট্রিক বা ডিজিটাল হাজিরা অন্য স্কুলে নেই। তবু আমাদের এখানে চালু থাকবে এটা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। 

ভৌত বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, কোচিংয়ের বিষয় নিয়ে ভারপ্রাপ্ত নারী প্রধান শিক্ষককে মারতে যাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। 

প্রধান শিক্ষক রহিমা খাতুন বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছি। স্কুল সময়ে কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষকদের ছাড় দেওয়া হবে না। অনৈতিক সুবিধা দিইনি বলে আমাকে যারা হেনস্তা করেছেন, তাঁদের শাস্তি চেয়ে অভিযোগ করেছি।’ 

বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবিদুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা খাতুনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত