‘ভাই, ভুলে আপনাদেরটা চুরি করেছে, পাঠাইছিলাম অন্য জায়গায়’

কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২২, ১০: ২৬
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২২, ১০: ৫৯

‘ভাই, এটা কোনো কাজ করলেন! দুই-তিন বছরের মধ্যে তো আমাদের মিটার চুরি করার কথা ছিল না। আগেরবার যখন ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে মিটার ফেরত দিলেন, তখন তো এমনই কথা দিয়েছিলেন। উত্তরে মোবাইল ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে চোর চক্রের এক সদস্য বলেন, ‘ভাই, ভুলে আপনাদেরটা নিয়ে আসছে, পাঠাইছিলাম অন্য জায়গায়। ১৫ হাজার টাকা পাঠান, ফেরত দিয়ে দেব।’ গতকাল শনিবার মোবাইল ফোনে এই কথোপকথন হয় দুটি বৈদ্যুতিক মিটারের একজন গ্রাহক ও চোর চক্রের এক সদস্যের মধ্যে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের হরিনাথপুর থেকে পাঁচটি বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, চুরি যাওয়া মিটারের জায়গায় বিকাশ নম্বর রেখে গেছে চোর। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে মিটার ফেরত দেওয়া হবে বলে লেখা রয়েছে চিরকুটে। সেই নম্বরে যোগাযোগ করেন একটি মিটারের গ্রাহক উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। মোবাইল ফোনে কথোপকথনটি ছিল তাঁঁদের।

স্থানীয়রা বলছেন, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সোনামুখী ইউনিয়নের হরিনাথপুর উত্তরপাড়ার একই জায়গা থেকে পাঁচটি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। এগুলোর মধ্যে কাজীপুর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের চালকলের দুটি, শাহাদত হোসেন রাজের একটি, রুবেল মিয়ার একটি, অন্যটি বরেন্দ্র বহুমুখী সেচ প্রকল্পের। মিটারগুলো লোহার খাঁচা দিয়ে আটকানো ছিল। খাঁচা ভেঙে মিটারগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। চুরির পর সেখানে যোগাযোগের জন্য একটি নম্বর ও টাকা পরিশোধের জন্য বিকাশ নম্বর রেখে যায় চোর চক্র। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ওই মিটারগুলোই একই কায়দায় চুরি করেছিল চোর চক্র। তখন মিটারপ্রতি ৫ হাজার টাকা দিয়ে সেগুলো ফেরত নিয়েছিলেন তাঁরা।

চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শনিবার সকালে শ্রমিকেরা চালকলে গিয়ে দেখেন মিটার নেই। একটি কাগজে মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রেখে গেছে। এর আগেও আমাদের মিটার চুরি করেছিল চোর চক্র। তখন মিটারপ্রতি ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফেরত নিয়েছিলাম। সেবার বিকাশে টাকা নিয়ে এলাকারই একটা জায়গায় মিটার রেখে দিয়েছিল।’

আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে টাকা দিয়ে কেন মিটার নিচ্ছেন জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘একটা মিটারের দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেই জায়গায় ১০ হাজার টাকায় মিটিয়েছি। সবগুলো মিটারই ফেরত দেবে বলেছে। তা ছাড়া বিদ্যুৎ অফিস থেকে নতুন মিটার কিনতে গেলে টাকা ও সময় দুটোই বেশি লাগবে। সে কারণে আগেরবার অভিযোগ করি নাই। এবার থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, ‘শুনেছি মিটার চুরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত