Ajker Patrika

তিস্তার তীর রক্ষা প্রকল্প

তোলা হচ্ছে বাঁধের পাশের বালু

  • বাঁধের ৩০ মিটার দূর থেকে বালু তুলে ভরা হচ্ছে জিও ব্যাগে।
  • নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বোমা মেশিন ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে বালু।
  • এলাকাবাসী বলছেন, বাঁধের কাছ থেকে বালু তুলে জলে ফেলা হচ্ছে টাকা।
মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
তিস্তার তীরে ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে সেই ব্যাগ ভরতে বালু তোলা হচ্ছে ভাঙনপ্রবণ এলাকা ও বাঁধের পাশ থেকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিস্তার তীরে ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে সেই ব্যাগ ভরতে বালু তোলা হচ্ছে ভাঙনপ্রবণ এলাকা ও বাঁধের পাশ থেকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নিষিদ্ধ বোমা মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে পাউবোর ঠিকাদার। বালু তোলার কারণে পাড়ের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজসহ আশপাশের গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন এলাকায় বালু উত্তোলন করা হলেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেই পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসনের। অবৈধভাবে বালু তোলায় জলে যাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার এ প্রকল্প।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর এলাকায় ১০৭০ মিটার তীরে জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প চলমান। এতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে পাউবো। তবে কাজ সম্পন্ন করছে সাব ঠিকাদার। এ ছাড়া জরুরি কাজের নামে দরপত্র ছাড়াই ঝুনাগাছ চাপানির ভেণ্ডাবাড়ী ও সোনাখুলি স্পার বাঁধ রক্ষায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলছে ডালিয়া পাউবো।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব স্পার বাঁধ রক্ষায় দুটি প্রকল্পে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। জিও ব্যাগ ভরাট করা হয়েছিল বাঁধের নিচের বালু তুলে। তবে বছর না ঘুরতেই জিও ব্যাগ ধসে পড়ে নদীতে বিলীন হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বাইশপুকুর, ভেণ্ডাবাড়ী ও সোনাখুলি স্পার বাঁধের নিচে ভাঙন এলাকা থেকে বালু তুলে ভরা হচ্ছে ব্যাগে। বাঁধ থেকে ৩০ মিটার দূরত্বে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বোমা মেশিনে ১০ ইঞ্চি পাইপ যুক্ত করে বালু তোলা হচ্ছে। যদিও এমন মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমনকি নদীর তীর ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বালু তোলা নিষেধ। তবে এরপরও উত্তোলন করা পলিমিশ্রিত চিকন বালু দিয়ে পাশেই ভরা হচ্ছে জিও ব্যাগে। অথচ শুষ্ক ও মোটা বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভরাটের নিয়ম রয়েছে।

কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কাজের ঠিকাদারদের অধীনে প্রায় আট দিন ধরে বালু তোলার কাজ করছেন। আর স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার অধিক মুনাফার লোভে কোনো আইন না মেনে নদীর ভাঙন যেখানে বেশি, সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে বস্তাগুলো (জিও ব্যাগ) কাজে আসবে না। প্রশাসন তা বন্ধও করে না। এ ক্ষেত্রে পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করেন তাঁরা।

সোনাখুলি ভাঙনকবলিত এলাকার সামছুল হক বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিবছর বড় বড় বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয় নদীতে। নদীর তলদেশে যেখানে ভাঙনটা হয়, সেখানে মেশিন দিয়ে বালু তুলে আবার সেখানেই বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ তৈরি করা হয়। এই প্রতিরোধব্যবস্থা শুধু পানিতে টাকা ফেলা।

একই এলাকার জমির উদ্দিন অভিযোগ করেন, বানের জলে এসব বালুর বস্তা নদীর গভীরে চলে যায়। আর একই প্রক্রিয়ায় বছরের পর বছর কাজ হচ্ছে। সরকারি টাকা পানিতে যায়, অথচ ভাঙন রোধে তেমন কাজে আসে না।

বাইশপুকুর এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বস্তার মধ্যে মোটা বালু দেওয়ার কথা, কিন্তু ঠিকাদারেরা দিচ্ছেন নদীর চিকন বালু-মাটি। মোটা বালু দিয়ে নদীর মধ্যে বস্তা ফেললে, তা শক্ত ও মজবুত হতো।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, নদী এলাকায় বালু উত্তোলন করলে তা হবে আত্মঘাতী। এতে নদীর তলদেশে বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সে গর্তে নদীর তীর ধসে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। বাঁধ টিকিয়ে রাখতে অর্থ খরচ করা হচ্ছে ঠিকই, তবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এ অর্থ ব্যয় কোনো কাজে আসবে না।

এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভাঙন এলাকায় মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। তিনি বোমা মেশিন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘ইতিমধ্যে ইউএনওকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম আমরা বরদাশত করব না। কেউ নির্দেশনা না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেব। আর পাউবোর এক্সিয়েনকে বলব এইভাবে যাতে টাকার অপচয় করা না হয়, বালু যেখান থেকে তুলবে সেখানেই জিও ব্যাগ ফেলার মানে হয় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ