ব্যারিস্টার সুমনের জীবন ঝুঁকিতে: ডার্কওয়েবে পাওয়া গল্পের অনুকরণে নাটক সাজিয়েছিলেন তরুণ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ২২: ৫৮

ডার্ক ওয়েভ ব্যবহার করে হিটম্যান নেটওয়ার্ক নামে সাইটে ভারতীয় একটি গল্পের অনুকরণে টাকা আত্মসাতের জন্য হবিগঞ্জ–৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের জীবনের ওপর হুমকি আছে মর্মে বিভিন্ন ভিডিওতে প্রকাশ করেন মো. সোহাগ মিয়া (২৭)। 

গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে সিলেট মহানগর এলাকা থেকে ক্রাইম টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান। 

সোহাগ মিয়া মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের মো. মন্তাজ মিয়ার ছেলে। 

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যান সোহাগ মিয়া। ২০১৮ সালে দেশে আসেন। এরপর কিছু দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকার ১২ জন লোককে পর্তুগাল পাঠানোর কথা বলে ৮ / ১০ লাখ করে টাকা নিয়ে দালাল দিলেও তাঁদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন। পরে পাওনাদারের চাপে সোহাগ মিয়া ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে এক বছর থেকে দেশে আসেন। আর্থিক অনটন দূর করতে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করেন। তখনই তিনি ডার্ক ওয়েবের সঙ্গে পরিচিত হন। 

এরই ধারাবাহিকতায় ভিপিএনের মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবসাইট ব্যবহার করে হিটম্যান নেটওয়ার্ক লিংকসহ বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করেন সোহাগ। হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে ভারতীয় একটি গল্প পড়েন। প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তাঁর জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি গল্পে পান তিনি। কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাধবপুর–চুনারুঘাটের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের জীবনের ওপর হুমকি আছে মর্মে একাধিক ভিডিওতে প্রকাশ করেন। 

পুলিশ সুপার জানান, সোহাগ মিয়া হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে ওই গল্পের আঙ্গিকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ব্যারিস্টার সুমন কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল নম্বর না পেয়ে চুনারুঘাট থানার ওসির সরকারি মোবাইল নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। ব্যারিস্টার সুমনের কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য ওসিকে অনুরোধ করেন। 

সোহাগ মিয়াকে আটকের পর সংবাদ সম্মেলন করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার। ছবি: আজকের পত্রিকাসোহাগ মিয়ার পরিকল্পনা ছিল, ব্যারিস্টার সুমন কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী তাঁর কাছ থেকে কিলিং মিশনের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য চাইবেন। সেই তথ্য দেওয়ার বাহানা করে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করবেন। কিন্তু ব্যারিস্টার সুমনকে বিষয়টি জানানোর পরদিন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বার্তা দেন ও থানায় জিডি করেন। তখন সোহাগ ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যান। অবস্থান ট্র্যাক করা হচ্ছে বুঝতে পেরে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে চলে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ ও সিটিটিসি ঢাকার সমন্বয়ে তাঁকে সিলেট মহানগর এলাকা থেকে আটক করা হয়। 

পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানায় সোহাগ মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা হবে। এ ছাড়া হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মো. সোয়েব মিয়ার একটি প্রতারণা মামলায় সোহাগ মিয়াকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আর সৈয়দ সায়েদুল হকের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি যত দিন থাকবে, তত দিন গানম্যান নিযুক্ত থাকবে। 
 
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খলিলুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আমিনুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (চুনারুঘাট-মাধবপুর সার্কেল) নির্মলেন্দু ও চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায়, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ নুর হোসেন মামুন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত