Ajker Patrika

সীমাবদ্ধতা স্বীকার করাও বুদ্ধিমত্তা

সাব্বির হোসেন
সীমাবদ্ধতা স্বীকার করাও বুদ্ধিমত্তা

জীবনে আমরা অনেকে এমন কিছু বিশ্বাস ধারণ করি, যা হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভুল প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেগুলো বদলানোর পরিবর্তে আমরা আরও বেশি নিশ্চিত হয়ে যাই যে আমাদের চিন্তাই সঠিক। অ্যাডাম গ্র্যান্টের মতে, এটি ‘জ্ঞানীয় অলসতা’—যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের শেখার পথ রুদ্ধ করে ফেলি। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক যদি মনে করেন তাঁর পড়ানোর পদ্ধতিই সেরা, তাহলে তিনি নতুন কোনো কৌশল শিখতে চাইবেন না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষতা কম থাকা সত্ত্বেও মানুষ যখন নিজেকে খুব দক্ষ ভাবে, তখনই বিপত্তি ঘটে। এটি ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট নামে পরিচিত।

উদাহরণস্বরূপ: একজন নতুন গাড়িচালক যদি মনে করেন তিনি খুব দক্ষ, তবে তিনি প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেবেন না; যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যাডাম গ্র্যান্টের বই ‘থিংক এগেইন’ আমাদের শেখায়, কেবল জানাই যথেষ্ট নয়; বরং শিখতে শেখাই আসল দক্ষতা। আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে কাজ করে যে একবার কোনো তথ্য গ্রহণ করলে, আমরা সেটিকেই চূড়ান্ত ধরে নিই এবং নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে ভয় পাই। এই মানসিকতা আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে পিছিয়ে দেয়।

বিশ্বাস রাখুন, শিখতে থাকুন

নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করাও একধরনের বুদ্ধিমত্তা। গ্র্যান্ট একে বলেন, ‘কনফিডেন্ট হিউমিলিটি’—এটি এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে আপনি আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু নতুন শেখার জন্য উন্মুক্ত। চিন্তার একটি চমৎকার উপায় হলো, জীবনকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মতো দেখা।

উদাহরণস্বরূপ: একটি কোম্পানি যদি নতুন কোনো পণ্য বাজারে আনতে চায়, তবে তারা সরাসরি বড় বিনিয়োগের পরিবর্তে ছোট স্কেলে পরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পারে। এটি তাদের ভুল সংশোধন এবং নতুন কৌশল গ্রহণের সুযোগ দেয়।

মতবিরোধ কি সব সময় খারাপ?

আমরা প্রায়ই মতবিরোধকে নেতিবাচক বলে ধরে নিই। কিন্তু গ্র্যান্ট বলেন, ‘টাস্ক কনফ্লিক্ট’ বা কাজ সম্পর্কিত মতবিরোধ আসলে একটি ইতিবাচক দিক; যা সৃজনশীল চিন্তার সুযোগ তৈরি করে দেয়। তবে যদি এটি ‘ইমোশনাল কনফ্লিক্ট’ হয়ে যায় এবং সেখানে যদি ব্যক্তিগত আক্রমণ চলে, তখন তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। স্টিভ জবস এবং তাঁর ডিজাইন টিমের মধ্যে প্রায়ই মতবিরোধ হতো, কিন্তু সেটাই অ্যাপল পণ্যের নকশাকে অনন্য করে তুলেছিল। একইভাবে, কর্মজীবনে এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যারা আপনার চিন্তার সীমাবদ্ধতাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে।

বিতর্ক কি যুদ্ধ, নাকি সহবত?

একটি ভালো বিতর্ক যুদ্ধের মতো নয়, বরং একটি নাচের মতো; যেখানে দুই পক্ষ একসঙ্গে চিন্তার নতুন পথ তৈরি করে। ভালো বিতর্কের কয়েকটি কৌশল হলো সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করা; যেমন—উভয় পক্ষই যদি চায়

উন্নতি হোক, তাহলে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনা করা সহজ হয়। কম যুক্তি ব্যবহার করা—গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি যুক্তি দিলে উল্টো প্রতিপক্ষ প্রতিরোধমূলক আচরণ করে। বেশি প্রশ্ন করা—কোনো বিষয়ে সরাসরি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে অপরপক্ষকে চিন্তা করতে উৎসাহিত করা।

শেখার সংস্কৃতি কীভাবে গড়ে তোলা যায়?

বাইনারি বায়াস এড়ান—অনেক সমস্যাকে আমরা হয় ‘সঠিক’ নয় ‘ভুল’ এই দুইভাবে দেখি, কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। যেমন—রাজনীতির ক্ষেত্রে শুধু ডান-বামের বিভাজন করলে গভীরতর সমস্যাগুলো আড়ালে থেকে যায়।

বৈজ্ঞানিক চিন্তা করুন—শুধু তথ্য গ্রহণ করলেই হবে না, বরং সেটি যাচাই করাও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, শিশুদের মুখস্থ করানোর পরিবর্তে প্রশ্ন করতে শেখানো উচিত—‘এই তথ্যের সোর্স কী?’ বা ‘এটি কোন গবেষণায় প্রমাণিত?’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত