Ajker Patrika

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: হংকংয়ে পড়ার স্বপ্ন যাঁদের

রিয়াসাদ হক 
আপডেট : ১১ জুন ২০২৩, ০৯: ৪৫
বিদেশে উচ্চশিক্ষা: হংকংয়ে পড়ার স্বপ্ন যাঁদের

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা একটু কম খরচে উন্নতমানের উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান, তাঁদের কাছে হংকং একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। কারণ, এখানে উচ্চ র‍্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি আছে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। আর পড়াশোনা শেষে ভালো বেতনের হাতছানি তো রয়েছেই। হংকংয়ের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র‍্যাংকিংয়ে সেরা ৫০০-এর মধ্যে জায়গা করে নেয়। এর মধ্যে ২১তম ছিল দ্য ইউনিভার্সিটি অব হংকং। হংকংয়ে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আরও রয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি অব হংকং, হংকং ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটি, লিংনান ইউনিভার্সিটি এবং দ্য হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

কেন পড়বেন

  • ভাষা: এখানে কোনো ভাষাগত সমস্যা নেই। চায়নিজের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও আপনি পড়াশোনা করতে পারবেন। এমনকি এখানকার দোকানপাটগুলোতেও ইংরেজি প্রচলিত আছে। তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষা কোনো সমস্যা না।
  • ইমিগ্রেশন: অন্যান্য দেশের মতো এখানকার ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা খুব একটা কঠিন নয়। আপনি খুব সহজেই স্টুডেন্ট ভিসায় এসে পড়াশোনা করতে পারবেন। তা ছাড়া এখানে পড়াশোনার খরচ খুবই কম। প্রায় সব শিক্ষার্থীই স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
  • এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম: আপনি এক বছর বা এক সেমিস্টারের জন্য হংকং বা বাইরের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন। তা-ও আবার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে। সঙ্গে আনুষঙ্গিক ভাতাও আপনাকে দেওয়া হবে। এতে আপনি অন্য সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হতে পারবেন।
  • শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ: এখানকার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের অনুকূলে থাকে। শিক্ষকেরা বন্ধুসুলভ আচরণ করেন। কিছু কিছু কোর্সে কখনো কোনো পরীক্ষা হয় না। বরং অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। কারণ, পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়া বুঝে বা না-বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা চলে আসে। তাই অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা নিজেরা গবেষণা করে এগুলো করেন। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আছে থেরাপি সেন্টারের ব্যবস্থা।
  • চাকরি: হংকংয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আপনি পড়াশোনা শেষেই মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি পেয়ে যাবেন। এমনকি এখানকার ইন্টার্নশিপগুলোতেও বেশ ভালো পরিমাণের বেতন দেওয়া হয়। যাঁরা সায়েন্সের বিষয়গুলোতে পড়াশোনা করছেন, তাঁদের জন্য রয়েছে সরকারি ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা। এখানে ব্যবসায় অনুষদের বিষয়গুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে ফাইন্যান্সের। তাই ফাইন্যান্স নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করতে চান, তাঁরা হংকংকে নিজেদের পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। এর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং, ফিনটেক, আইটি, ব্যাংকিং—এগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
  • গবেষণা: আপনার যদি গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে হংকং আপনার জন্য এক আদর্শ জায়গা। সেকেন্ড ইয়ার থেকেই আপনি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও হংকং সরকার থেকেই গবেষণার খরচ দেওয়া হয়। 

টিউশন ফি
বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে টিউশন ফির তারতম্য রয়েছে। সাধারণত বছরে গড়ে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার হংকং ডলার হয়ে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এখানে প্রায় সব শিক্ষার্থীই স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাই খরচটাও কমে আসে। মূলত একাডেমিক ফলাফল, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে এসব স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে।

আপনার যদি গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে হংকং আপনার জন্য এক আদর্শ জায়গা। সেকেন্ড ইয়ার থেকেই আপনি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবেন। 

আবেদন প্রক্রিয়া
হংকংয়ে ভর্তির সুযোগ থাকে বছরে দুবার—জানুয়ারির মাঝামাঝি ও সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। এখানে দুভাবে আবেদন করা যায়— অনলাইনে অথবা ডাকযোগে। দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ডাকযোগের চেয়ে অনলাইনে আবেদন করাই শ্রেয়। তবে মনে রাখবেন, সেশন শুরু হওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও আবেদনের কাজটি সেরে ফেলতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাঠানোর পরের ধাপেই ভিসা আবেদন করতে হবে। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয় হংকং কনস্যুলেট অথবা চীনা দূতাবাসে। ভিসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ছয় সপ্তাহ লাগে। আবেদন করতে প্রথমেই হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি লিস্ট তৈরি করে ফেলুন। এরপর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখুন, কোনটা আপনার কাছে ভালো মনে হয়। হাই র‍্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয়েই যে আবেদন করতে হবে, তা নয়। একটু নিচের সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো গবেষণার সুযোগ তুলনামূলক বেশি। প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

আপনি যদি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার আইইএলটিএস দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু এ লেভেলের সার্টিফিকেট ও মার্কশিট দিলেই হবে। বাংলা মাধ্যমের হলে এসএসসি-এইচএসসি সার্টিফিকেটের পাশাপাশি আইইএলটিএস স্কোরও প্রয়োজন।

আবেদনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তবে স্নাতক লেভেলে সবাইকেই সাক্ষাৎকার দিতে হবে। এ ছাড়া আপনি যদি স্কলারশিপ পেতে চান, সে ক্ষেত্রে ‘এ’ লেভেলে ‘এ স্টার’ এবং এইচএসসিতে আপনাকে ৯০-৯৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • পাসপোর্ট
  • ভিসা
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • অফার লেটার
  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস
  • রিকমেন্ডেশন লেটার
  • মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
  • ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্টের কাগজপত্র
  • হেলথ ইনস্যুরেন্স

রিয়াসাদ হক, শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স, হংকং ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটি

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেলেন সেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম

হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ খুনের পেছনে ধর্ষণচেষ্টা: পুলিশ

যাত্রার ৪৫ দিন আগে ভিসার আবেদন করতে বলল থাই দূতাবাস

মেয়ে ধর্ষণের শিকার, মামলার ১০ দিনের মাথায় বাবাকে হত্যা

নারায়ণগঞ্জে যুবককে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত