সাক্ষাৎকার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে

বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন আইএটিএর ডেটা কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন রাহাত ইয়াসির। তাঁর প্রোগ্রামিংয়ে আসা, আইএটিএর নিয়োগপ্রক্রিয়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বাংলাদেশিদের সফল হওয়ার উপায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন রাহাত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ

প্রশ্ন: বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন হলো ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ডেটা কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন। কী কী কাজ করছেন?
উত্তর: ১৯৪৫ সালে আইএটিএ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রধান কার্যালয় কানাডার মনট্রিলে। এখানে আমার টিমকে বলা হয় গ্লোবাল এভিয়েশন ডেটা ম্যানেজমেন্ট। আমরা ফ্লাইটের সেফটি, সিকিউরিটি এবং অপারেশনের জন্য বিশ্বের তথ্য বিনিময় প্রোগ্রামগুলোকে হোস্ট করে থাকি। আমার প্রধান কাজ হলো বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্মের ডেটা কোয়ালিটি, ডেটা লাইনেজ এবং তাদের ফাংশনগুলো নিশ্চিত করা। আমি এভিয়েশন ডেটার অ্যাডভান্স অ্যানালাইটিকস দেখাশোনা করি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফ্লাইট অপারেশন, সেফটি এবং সিকিউরিটি-সংক্রান্ত বিভিন্ন কেস স্টাডি সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে থাকি।

প্রশ্ন: আইএটিএর নিয়োগপদ্ধতি সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: একটি বৈশ্বিক অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে আইএটিএ আন্তর্জাতিক নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সব ধরনের খালি পদ লিংকডইনে দেওয়া হয়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ আবেদন করতে পারে। নিয়োগকারী ব্যবস্থাপকেরা সব সিভি সতর্কতার সঙ্গে রিভিউ করে থাকেন। তাঁরা ফোনকল, বাড়িতে করার জন্য একটি কাজ, টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ এবং ম্যানেজারিয়েল কলের মাধ্যমে তাঁদের সেরা আবেদনকারীকে নিয়োগ করে থাকেন।

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে প্রোগ্রামিংয়ে এলেন?
উত্তর: আমি ২০১০ সালে প্রোগ্রামিং শুরু করি। তখন আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করছিলাম। আমি ভাবতাম, প্রোগ্রামিং শিখলে সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্যাগুলো ম্যাজিকের মতো সমাধান করতে পারব। সে লক্ষ্যে প্রোগ্রামিংয়ে আসা।
 
প্রশ্ন: আপনি স্নাতক করার সময় সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। এ অভিজ্ঞতা আপনার ক্যারিয়ার গঠনে কীভাবে কাজে লেগেছে?
উত্তর: স্নাতক শুরুর সময় নিশ্চিত ছিলাম না যে আমার জন্য কোনটা ভালো? প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, নাকি সফটওয়্যার প্রকল্প প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ছোট ছোট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা যায়, আর সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বজনীন যেকোনো সমস্যার সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান করা যায়। কিছুদিন ভাবার পর বুঝতে পারি, প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চেয়ে সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতা আমাকে বেশি টানে। আমি স্ক্র্যাচ (শূন্য) থেকে যেকোনো কিছু তৈরি এবং উন্নত করতে পছন্দ করতাম এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ব্যবহারকারীরা কী করছেন, সে পর্যন্ত যুক্ত থাকতে চাইতাম। ফলে আমি আমার স্নাতক পড়ার সময়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম এবং অনেক পুরস্কার জিতেছিলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন হলো ২০১২ সালে মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপের বাংলাদেশ রাউন্ডে রানারআপ হয়েছিলাম, একই বছরে প্যানাসনিক আইডিয়াস চেঞ্জ লাইভস প্রতিযোগিতায় সেরা আটটি আইডিয়ার একটি ছিল আমাদের আইডিয়া, ২০১৩ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত হওয়া নকিয়া ফিউচার ক্যাপচার হ্যাকাথনের ফাইনালিস্ট ছিলাম, ২০১৭ সালে কানাডা থেকে ইমার্জিং অ্যাগ্রিকালচার বেস্ট প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলাম এবং ২০১৬ সালে কানাডার উসাক রিসার্চ ফেস্টে দ্বিতীয় বেস্ট রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম।

২০১৮ সালে আমি কানাডার টপ সফটওয়্যার ডেভেলপার ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হই। আমার এসব অর্জনের মূল কারণ ছিল, আমি প্রথম দিক থেকে একটি সফটওয়্যারের সিস্টেম বোঝার চেষ্টা করতাম। আমি সব সময় যেকোনো সফটওয়্যারের ইউজার ইন্টারফেস থেকে ডেটাবেইস, সিস্টেম ডিজাইন থেকে ডেটা কম্পোন্যান্ট বোঝার চেষ্টা করতাম, যা আমাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন: আপনি দশমবারের মতো মাইক্রোসফট মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্রফেশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। কোনো ব্যক্তির কী যোগ্যতা থাকলে মাইক্রোসফট এ পুরস্কার দিয়ে থাকে?
উত্তর: এ বছর দশমবারের মতো মাইক্রোসফট এমভিপি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। সাত বছর ধরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্যাটাগরিতে এমভিপি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। মাইক্রোসফট বিশ্বব্যাপী টপ টেকনোলজি প্রফেশনালদের মধ্যে তাদের জ্ঞান, কমিউনিটি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার ভিত্তিতে এ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। আমি বিগত কয়েক বছরে শতাধিক অফলাইন ও অনলাইন কনফারেন্সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি। বিনা মূল্যে ব্লগ লিখি, ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করি, ই-বুক রিলিজ দিই এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে মেন্টরিং করে থাকি। এসব কার্যক্রমের কারণে মাইক্রোসফট আমাকে এই অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে।

প্রশ্ন: আমাদের জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়ে বলুন।
উত্তর: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে। এখন আর এটি হাইপের মধ্যে নেই। স্মার্টফোনের মাধ্যমে রাইডশেয়ারিংয়ে রাইড অর্ডার দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, খবর, ওয়েব, মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবস্থার ব্যবহার রয়েছে। আমরা বর্তমানে দুই ধরনের এআই দেখতে পাই—প্রথাগত মেশিন লার্নিং এবং জিপিটিভিত্তিক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল।

আমি বিশ্বাস করি, অদূর ভবিষ্যতে জিপিটিভিত্তিক আইওটি ডিভাইস এবং রোবোটিক সিস্টেমের ট্রেন্ড বৃদ্ধি পাবে। এলএলএম মডেলের সাহায্যে হার্ডওয়্যার ব্যবস্থা আরও স্মার্ট হবে। হার্ডওয়্যার মানুষের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করবে, মানুষের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে এবং আরও ভালো কমান্ড দিতে পারবে। আশা করছি, আমাদের জীবদ্দশায় এ পরিবর্তন দেখে যেতে পারব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী হতে পারবে?
উত্তর: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সামনে অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশাল এবং এখানে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ট্রেন্ডস থেকে শিখতে পারবে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তারা স্থানীয় মার্কেট থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারবে এবং এআই ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইন টুলস ও প্ল্যাটফর্ম থেকে শিখতে পারবে এবং অনলাইন কোর্স করতে পারবে। আমি শিক্ষার্থীদের সব সময় উৎসাহ দেব, তারা যেন এআই ল্যাব ব্যবহার করে এবং বাস্তব সমস্যার সমাধান এআই দিয়ে করে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত