নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখে ইডেন কলেজ

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৩১
Thumbnail image

১৮৭৩ সালে ঢাকায় ‘শুভ স্বাধিনি সেবা’ নামক একটি মানবহিতৈষী সংস্থা ব্রাহ্মণ মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন গভর্নর লেফটেন্যান্ট স্যার অ্যাসলে ইডেনের নামানুসারে ১৮৭৮ সালে বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয় ইডেন বালিকা বিদ্যালয়। এরপর বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৯৫৮ সালে পরিচিতি পায় ‘ইডেন মহিলা কলেজ’ নামে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে ১৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানান বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক অর্চি হক

প্রশ্ন: ইডেন মহিলা কলেজ এ বছর ১৫০ বছর উদ্‌যাপন করছে। প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আপনার মন্তব্য কী? 
সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইডেন মহিলা কলেজ বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অন্যতম সেরা নারী বিদ্যাপীঠ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এ দেশের নারী শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়ী, আত্মনির্ভরশীল ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে ১৫০ বছরে পা দিয়েছে। ইডেন কলেজ আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার জায়গা। ১৫০ বছর উদ্‌যাপনের 
অংশ হওয়া, ইডেন কলেজকে উপস্থাপন করার 
এই আনন্দ সত্যিই গৌরবের। 

প্রশ্ন: কলেজটি আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। দুটি সময়কে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 
সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: পরীক্ষার ফলাফলে ইডেন কলেজের বরাবরই ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০১৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে সারা দেশের মহিলা কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান, ঢাকা বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থান ও জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত হওয়ার পরও এ ধারা অব্যাহত আছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তিত সিলেবাসের সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের গুণগত মান উন্নয়নের কাজ চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হওয়ার পর থেকে লেখাপড়া শেষ করে কর্মক্ষেত্রে (প্রাইভেট ও পাবলিক প্রতিষ্ঠানে) অধিকতর সুযোগ পাচ্ছে একই সঙ্গে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও অংশগ্রহণ—দুই-ই বেড়েছে। 

প্রশ্ন: মেয়েদের কলেজের মধ্যে ইডেনকে প্রথম অবস্থানে ধরা হয়, কীভাবে সম্ভব হয়েছে এটি? 
সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: একটু ফিরে দেখি, নারীর স্বাধীন সত্তার বিকাশের অন্যতম লক্ষ্য নিয়ে ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইডেন মহিলা কলেজ। এটি এই অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন নারী বিদ্যাপীঠ। কালের পরিক্রমায় শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রগতিশীলতায় সমৃদ্ধ এক গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এটি। স্বদেশি আন্দোলন, ভাষা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা।

প্রশ্ন: ইডেনের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল বরাবরই ভালো এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের হারও ভালো। একটি উদাহরণ হলো, ইডেন কলেজের ৪৮ জন বর্তমান শিক্ষক এ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, যাঁরা সবাই বিসিএস ক্যাডার। কীভাবে সম্ভব হয়েছে এটি? 
সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ, আবাসিক সুবিধা থাকায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ভালো ফল করতে সাহায্য করছে। এ ছাড়া ইডেনের ছায়াবীথি, ডিবেটিং ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, বিএনসিসি, রোভার ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশ, শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার সহায়ক।

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচকভাবে আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে আপনার ভাষ্য কী?
সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: দেখুন, ১৫০ বছরে পৌঁছে গেল একটি নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার এতগুলো বিভাগ, এত কার্যক্রম, কিন্তু শুধু রাজনৈতিক বা নেতিবাচক ঘটনাটুকু পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এমনকি ছোট ঘটনা হলেও তা পত্রিকায় জায়গা করে নেয়। কিন্তু এ দেশের নারী সমাজকে পরাধীনতার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে এবং দীর্ঘকাল ধরে এ দেশে নারী শিক্ষা বিশেষ করে নারীর উচ্চশিক্ষা অর্জন এবং কর্মক্ষেত্র, অর্থনীতি, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নে অনবদ্য ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানের অনেক সাফল্যের খবর সামনে আসে না। আমার কাছে মনে হয়, এই বিষয়ে আপনাদের গণমাধ্যমের কিছু দায়বদ্ধতা আছে।

প্রশ্ন: জানা গেছে, আবাসিক হলের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম, এই সংকট নিরসনে কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিবছর যে হারে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, সে হিসাবে আসন খালি হয় না। ফলে সিট সংকট থেকেই যায়। এ থেকে উত্তরণে নতুন হল তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই। ২০ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করা রাতারাতি সম্ভব না হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের বড় অংশ জুড়ে আছে আবাসন সংকটের সমাধান। অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে এই মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আছে। আশা করি এই সংকট আর থাকবে না।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য অধ্যক্ষ, ইডেন মহিলা কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত