ইউটিউবে প্রথম বিলিয়ন ভিউয়ের রেকর্ড, কোথায় হারিয়ে গেলেন গ্যাংনাম স্টাইলের সাই

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ২২: ৩০

২০১২ সালে ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ মুক্তির পর রাতারাতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান দক্ষিণ কোরিয়ার গায়ক সাই। সুপারস্টার হয়ে ওঠেন তিনি। ইউটিউবে আপলোড করার পর গানটির অদ্ভুত মিউজিক ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ইউটিউবের প্রথম বিলিয়ন (১০০ কোটি) ভিউ অর্জন করে এই গান।

গ্যাংনাম স্টাইলের ঘোড়সওয়ারের মতো ট্রেডমার্ক নাচটি দর্শকেরা হাজার হাজার বার অনুকরণ করেছে। এই গান দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যান সাই। কিন্তু এরপর আর তেমন একটা নাম শোনা যায়নি তাঁর। সাই তাহলে এখন কী করছেন?

সাই ওরফে পার্ক জায়ে–সাং–এর ষষ্ঠ স্টুডিও অ্যালবাম সাই ৬–এ গ্যাংনাম স্টাইল গানটি ছিল। অ্যালবামটির লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়েছে। সাই–এর ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ শুধু একাধিক ইউটিউব রেকর্ড ভাঙেনি, এটি ইউটিউব প্ল্যাটফর্মকেও বদলে দেয়। মিউজিক ভিডিওটি প্রথম কোনো কনটেন্ট হিসেবে ইউটিউবে এক বিলিয়ন ভিউয়ের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ আপলোড হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর ইউটিউবের ব্যাকএন্ড কোডে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয় গুগল।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ দ্রুতই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করা ভিডিও হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে সবচেয়ে বেশিবার দেখা হয়েছে। তবে সাই এখন আর ইউটিউবের রাজা নন। প্রয়াত অভিনেতা পল ওয়াকারকে নিয়ে ২০১৭ সালে উইজ খলিফা ও চার্লি পুথের ‘সি ইউ অ্যাগেইন’ গানটি গ্যাংনাম স্টাইলকে সিংহাসনচ্যুত করে।

গানটি যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, সাইকে নিয়ে নিয়ে আলোচনাও তখন তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের পপ সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেন তিনি। এমনকি আইফেল টাওয়ারের সামনে বিশাল একটি ফ্ল্যাশ মবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সামনেও তিনি পারফর্ম করেন।

যদিও সাই স্পটলাইট ও খ্যাতির সঙ্গে পাওয়া সমস্ত সুযোগ–সুবিধা উপভোগ করেছেন। তবে তিনি অন্ধকার সময়ের সঙ্গেও লড়াই করেছেন।

২০১৩ সানডে টাইমসের কাছে অতিরিক্ত মদ পানের কথা স্বীকার করেন সাই। সেসময় তিনি বলেন, ‘আমি খুশির সময় মদ খাই, দুঃখের সময়ও খাই!’ তবে সাই তাঁর এই আসক্তি নিরাময়ে বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়াকে আন্তর্জাতিক স্পটলাইটে রাখার পর ২০১৩ সালে দেশটি মোটা বেতনের পরিবর্তে সাইকে পর্যটন দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে সংগীত তারকা ন্যূনতম অর্থ গ্রহণ করেন। এর আগেও এই ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাঁর নিয়োগ অন্যান্য ব্যবসায়িক চুক্তির দরজাও খুলে দিয়েছিল। ২০১৩ সালের জন্য এশিয়ান এয়ারলাইনসের দূত হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

২০১৪ সালে, সাই ও মার্কিন র‍্যাপার স্নুপ ডগ ‘হ্যাংওভার’ শিরোনামের একটি গান করেন। এটি জিমি কিমেল লাইভ শোতে প্রথম প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে মিউজিক ভিডিওটি অনলাইনে অনেক জনপ্রিয়তা পায়।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সাই তাঁর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সপ্তম স্টুডিও অ্যালবাম চিলজিপ সাই–দা প্রকাশ করেন। আগের রেকর্ড ভাঙা যে প্রায় অসম্ভব সে ব্যাপারে তিনি সচেতন ছিলেন। সংগীতশিল্পী হিসেবে আরও সফল হওয়ার জন্য তিনি প্রচুর চাপ অনুভব করেছিলেন, একপর্যায়ে বিষণ্নতায় ডুবে গিয়েছিলেন।

সে সময়ে এন্টারটেইনমেন্ট উইকলিকে সাই বলেন, ‘আমি অ্যাডিলে (ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী) নই। গ্যাংনাম স্টাইলের পরে আমি সত্যিই খুশি ছিলাম। কিন্তু কখনো কখনো আমি অখুশিও ছিলাম। কারণ এটি আমার জীবনের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ও আমি সেই গানটির রেকর্ড ভেঙে শীর্ষ অবস্থানে যেতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেসময় আমি চাপ অনুভব করেছি। আমি কীভাবে এই রেকর্ড টপকে যেতে পারি তা ভাবছিলাম। তাই আমি গ্যাংনাম লোকটিকে নয়, নিজেকে খুঁজে পাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করেছি।’

২০১৫ সালে সাইয়ের ‘ড্যাডি’ গানটিও ইউটিউবে লাখ লাখ ভিউ পায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে টপ চার্টে উঠে আসে।

সাই যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপের বাজারে বেশি সক্রিয় না হলেও অন্যান্য দেশে এখনো পারফর্ম করেন। ২০১৫ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি পশ্চিমাদের কাছ থেকে যে আয় (প্রায় ৫৫ কোটি ডলার) করেন, এখন তিনি চীনের বাজার থেকে একই পরিমাণ আয় করেন। চীনের জনপ্রিয় পিয়ানোবাদক ল্যাং ল্যাংয়ের সঙ্গেও তিনি বেশ কয়েকটি গান তৈরি করেছেন।

নিজের গান ছাড়াও অন্যদের গান এবং ভিডিও পরিচালনা ও প্রযোজনার কাজও করেন এই গায়ক। আট বছর পর ২০১৮ সালে ওয়াইজে এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি শেষ করেন সাই। তিনি নিজেই একটি রেকর্ডিং কোম্পানি খোলেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব রেকর্ডিং কোম্পানি পি নেশন তৈরি করেন।

এই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার কে–পপ ব্যান্ড বিটিএস জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে। তাই সাইয়ের জন্য নতুন কোম্পানি শুরু করার এটিই সবচেয়ে ভালো সময় ছিল। সেসময় সাই বলেন, তিনি যা শিখেছেন তা পরবর্তী প্রজন্মের কে–পপ তারকাদের সঙ্গে শেয়ার করতে প্রস্তুত ছিলেন।

২০২২ সালে বিটিএসের সদস্য র‍্যাপার সুগার সঙ্গেও ‘দ্যাট দ্যাট’ শিরোনামের গান প্রকাশ করেন। এটিও অনেক জনপ্রিয়তা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকদের আকর্ষণ করতে মার্কিন বংশোদ্ভূত দক্ষিণ কোরীয় নারী র‍্যাপার জেসির সঙ্গে নতুন গান করার চুক্তি করে সাইয়ের পি নেশন।

জেসির সঙ্গে সাই আরও জনপ্রিয় কে–পপ শিল্পী নিয়োগের দিকে মনোযোগ দেন। তিনি গায়ক, র‍্যাপার ও গীতিকার হিউনার সঙ্গে চুক্তিও করেন। ২০০৭ সালে মেয়েদের গানের দল ওয়ান্ডার গার্লস–এর একজন সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে তাঁকে গ্যাংনাম স্টাইলের ভিডিওতেও দেখা যায়। এইভাবে তিনি তরুণ তারকাদের সঙ্গে দর্শকদের নতুন নতুন গান উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গ্যাংনাম স্টাইল শুধু সাই-এর ক্যারিয়ারকেই নয়, সংগীত শিল্পকেও বদলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, ইংরেজি ভাষার গান ছাড়াও একজন শিল্পী ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত