Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শিল্পী বাছাইয়েও ভিউ হয়ে উঠছে মানদণ্ড

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

৮০-এর দশকে শিশুশিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে যাত্রা শুরু অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদের। মাঝে বিরতি দিয়ে ২০০০ সালে আবার ছোট পর্দায় ফেরেন। একক ও ধারাবাহিক নাটকের নিয়মিত মুখ নাদিয়ার অভিনয়জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হলো এ বছর। নাদিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ

শিহাব আহমেদ 
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫৬

অভিনয়জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হলো। কেমন ছিল এই জার্নি?

এতটা সময় পার করেছি, বুঝতেই পারিনি। অনেক স্মুথ ছিল জার্নিটা। সব সময় দর্শকের সাপোর্ট পেয়েছি, পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি; বিশেষ করে আমার মায়ের কথা বলতে হয়। তিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। তাঁর আদর্শেই চলার চেষ্টা করেছি। মায়ের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। সহকর্মী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের সমর্থন পেয়েছি। আমি থিয়েটার করা শিল্পী নই। যা শিখেছি তাদের কাছ থেকেই। নিজেকে আমি পরিচালকের শিল্পী ভাবতে পছন্দ করি। তাদের গাইডের কারণেই আমার চলার পথ আরও মসৃণ হয়েছে।

শিশুশিল্পী হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই গল্পটা শুনতে চাই।

একদম ছোটবেলায় নাচ দিয়ে সংস্কৃতিচর্চা শুরু। অভিনয় শুরু হয় নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায়। সেখানে নাচের পাশাপাশি অভিনয় ক্যাটাগরিতে অংশ নিই। আমার বাবার বন্ধু ম হামিদ তখন টেলিভিশনের প্রযোজক। ওনার থিয়েটার দল থেকে এডওয়ার্ড বাড়ই নামে একজনকে পাঠান। উনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পোস্টমাস্টার’-এর রতন চরিত্রের একক অভিনয়টুকু শেখান। অভিনয় করে আমি তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছিলাম, কিন্তু সেটাই আমার কাছে প্রথম পুরস্কারের মতো ছিল। এরপর বিটিভি থেকে একটি ধারাবাহিক নাটকের জন্য ডাকা হয়। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা এবং আলাউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় ‘বারো রকম মানুষ’ নাটকে বৈচি চরিত্রে অভিনয় করি। নাটকটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। অনেকে আমাকে বৈচি নামে ডাকা শুরু করে। মানুষজন চিনতে পারছে, সেটা ভালো লাগলেও তখনো অভিনয়ের প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়নি। নাচটাই আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল। এ ছাড়া তখন আমি স্কুলে পড়ি, তাই অভিনয়ে নিয়মিত হইনি।

নিয়মিত হলেন কীভাবে?

অভিনয়ে আসার পেছনেও ছিল নাচের প্রতি ভালোবাসা। নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়াটা কঠিন ছিল। ছোটবেলায় বড় বড় অনেক প্রোগ্রাম করেছি, কিন্তু একটু বড় হয়ে দেখলাম, যাঁরা মডেলিং বা অভিনয় করেন, তাঁদেরকেই বিশেষ দিনের অনুষ্ঠানে সলো পারফরম্যান্সের জন্য ডাকা হয়। অনেকে আমাকে বলত অভিনয় বা মডেলিং করতে। তাই সিদ্ধান্ত নিই মডেলিং করার। এরপর নাটকে এলাম। প্রথম অভিনয় করি মোহন খানের ‘দূরের মানুষ’ ধারাবাহিকে। কিন্তু প্রথম প্রচারিত হয় রেজানুর রহমানের ‘ছায়াকায়া’। ১৯৯৯ সাল থেকে অভিনয় শুরু। টিভিতে প্রচার শুরু ২০০০ সালে থেকে। শুরুতে কিছুটা অনিয়মিত হলেও ২০০৪ সাল থেকে নিয়মিত অভিনয় করি।

ক্যারিয়ারের ২৫ বছরে এসে নিজেকে কতটুকু সন্তুষ্ট মনে হয়?

আমি শুরু থেকে একজন শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। আমার কাছে জীবনে দুটি জিনিসের প্রয়োজন বেশি—সম্মান ও ভালোবাসা। শিল্পী হিসেবে সেটা আমি পেয়েছি। পছন্দের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পেরেছি, সেটাই বড় সন্তুষ্টির জায়গা। আমি সব সময় পজিটিভ থাকার চেষ্টা করি। অনেক কিছুর প্রয়োজন আমার হয় না কখনোই। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে খুশি। তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। যেদিন আমার ২৫ বছর পূর্তির নিউজ হলো, সেদিন অনেকে কমেন্ট করেছিল, মিডিয়ার সবচেয়ে লক্ষ্মী মেয়ে। সব সময় এ রকম একটা ট্যাগ আমাকে দেওয়া হয়। এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। সবার ভালোবাসা পাওয়া খুব কঠিন, সেই সৌভাগ্য আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

কোনো অপ্রাপ্তি আছে?

আমি ভিন্ন ধরনের অনেক চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। সেগুলো এখনো করা হয়ে ওঠেনি। যদি পরিচালকেরা আমাকে সে ধরনের চরিত্রে ভাবেন, তাহলে ক্যারিয়ারে আরও প্রাপ্তি যোগ হবে।

অভিনীত কোন চরিত্রটি এখনো আপনার মনে দাগ কাটে?

সাহিত্যের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। কাজী নজরুল ইসলামের অনেকগুলো কাজ করা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই সময়ে আমার অভিনীত একটি চরিত্র নিয়ে অনেকে বলছে। বকুলপুর ধারাবাহিকের দিবা চরিত্র। এই ধারাবাহিকে পাঁচ বছর কাজ করেছি। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে ৫ বছর একটি ধারাবাহিকে কাজ করেছি, এটা তো বিশাল ব্যাপার। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও জনপ্রিয় হয়েছে ধারাবাহিকটি।

ওটিটিতে কাজ করছেন না কেন?

কারণটা নির্মাতারা জানেন। প্রায় সময় এই প্রশ্ন শুনতে হয়। ওটিটির প্রস্তাব যে একেবারে আসেনি তা নয়। দু-একটা প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু গল্প সেভাবে টানেনি। এমন একটি কাজ দিয়ে ওটিটিতে আসতে চাই, যে গল্প ও চরিত্র আমার ভালো লাগবে।

এ মুহূর্তে আমাদের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন?

শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি এখন নিম্নগামী। ভালো গল্পের অভাব, ভালো লেখকদের কাজ কম। যাঁরা আগে ভালো নাটক লিখতেন, তাঁদের কাছ থেকে গল্প নেওয়া হয় না। গল্প এখন খাওয়ার জিনিস। যে ধরনের গল্প দর্শক খায়, সেটা নিয়েই কাজ হয়। আগে পরিবারকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে অনেক কাজ হতো। আমি মনে করি, এখনো এমন কাজের প্রয়োজন আছে। অনেকে বলে, নাটক দেখে শেখার কিছু নেই, এখানে জ্ঞান দিতে আসিনি। কিন্তু আমি মনে করি, নাটক থেকে শেখার অনেক বিষয় আছে। এখান থেকে ভাষাচর্চা যেমন হয়, তেমনি কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে, সেটাও শেখা যায়। নাটককে বলা হয় সমাজবদলের হাতিয়ার। এখনো সেটাই হওয়া উচিত।

এখন কাজের ক্ষেত্রেও ভিউ, ভাইরাল প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে আপনার কী মন্তব্য?

অনলাইনে নাটক আসার পর প্রচারের ব্যাপকতা বেড়েছে। আমি যে সময় কাজ শুরু করেছি, তখন এমনটা ছিল না। তখন ইউটিউবের ব্যাপারটা থাকলে অনেক দর্শক আমাদের কাজ দেখতে পারত। বাংলা নাটক আরও ছড়িয়ে যেত। তখনকার কাজগুলোতে মূল্যবোধের যে বিষয় ছিল, সেটা এখন নেই। এখন সব শর্টকাট হয়ে গেছে। তাই স্বল্প সময়ে হাসি বা আনন্দের কিছু দেখতেই পছন্দ করছে সবাই। এখন হালকা বিষয়ের ভিউ বেশি। ভিউর বিচারে কনটেন্ট নির্মিত হচ্ছে। কী দিলে ভিউ বেশি হবে, সবার মাথায় সেই চিন্তা। মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও একই বিষয়। শিল্পী বাছাইয়েও ভিউ হয়ে উঠছে মানদণ্ড। যার যত ভিউ, তার তত কাজ। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। ঘুরেফিরে সব একই চেহারা। তাই শিল্পীদের কাজ কমে গেছে, গুণী অনেক শিল্পী হারিয়ে যাচ্ছেন।

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

নৃত্যশিল্পী হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে বলুন।

ছোটবেলায় মা আমাকে শিশু একাডেমিতে নাচের ক্লাসে ভর্তি করান। আমার গুরু ছিলেন প্রয়াত হাবিবুল চৌধুরী। খুব ছোট থাকতেই জাতীয় শিশু পুরস্কার পাই। সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে শিশু প্রতিনিধিদলের হয়ে চীনে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য নির্বাচিত হই। এরপর আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সাত বছরের একটি ডিপ্লোমা করি। রেজাল্ট ছিল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এরপর শিবলী মহম্মদ, শামীম আরা নিপার কাছে শিখেছি। দীপা খন্দকারের কাছে ফোক শিখেছি, তামান্না রহমানের কাছে মণিপুরি, বেলায়েত হোসেনের কাছে ভরতনাট্যম শিখেছি। আরও অনেকের কাছে শেখা হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে লিখনের সঙ্গে আমার একটা জুটি তৈরি হয়। সে সময় নাচের জুটির প্রচলন ছিল। শেখা, পারফর্ম, বিদেশ সফর মিলিয়ে চলেছে আমার নৃত্যের ক্যারিয়ার। নাচের কারণেই তো আমার অভিনয়ে আসা।

নৃত্যকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি কি তৈরি হয়েছে?

আমাদের দেশে অসংখ্য নৃত্যশিল্পী আছেন। আমার সিনিয়র অনেকে শুধু নৃত্যকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কোনো অনুষ্ঠান কিন্তু নাচ ছাড়া চলে না। তবে অভিনয়শিল্পটা যেভাবে পেশাদারির সঙ্গে এগিয়ে গেছে, নাচের ক্ষেত্রে অতটা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিল্পকলায় নাট্যতীর্থের আয়োজনে ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শিল্পকলায় নাট্যতীর্থের আয়োজনে ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’

আজ থেকে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে নাট্যতীর্থ আয়োজিত ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’ শীর্ষক আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আয়োজিত এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে আট দলের আটটি নাটক। ১৯ থেকে ২৬ ডিসেম্বর প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় দেখা যাবে নাটকগুলো। উৎসবে ছয়জন নাট্যব্যক্তিত্বকে দেওয়া হবে নাট্যবন্ধু সম্মাননা।

উৎসব শুরু হবে আজ সন্ধ্যা ৬টায়। উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যতীর্থের দলপ্রধান ও নাট্যমেলার আহ্বায়ক তপন হাফিজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মঞ্চস্থ হবে তীরন্দাজ রেপার্টারির প্রযোজনা দীপক সুমনের নির্দেশিত ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’।

আগামীকাল শনিবার মঞ্চস্থ হবে আরণ্যক নাট্যদলের ‘রাঢ়াঙ’। রচনা ও নির্দেশনায় মামুনুর রশীদ। এদিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন সামিনা লুৎফা নিত্রা। সম্মাননা পদক দেওয়া হবে অধ্যাপক আবদুস সেলিমকে।

২১ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে বাতিঘরের প্রযোজনা ‘প্যারাবোলা’, নির্দেশনায় মুক্তনীল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন আফজাল হোসেন ও সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন শাহীন খান।

২২ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে বহুবচনের প্রযোজনা আরহাম আলো নির্দেশিত ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। এদিন সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন সামিউন জাহান দোলা।

২৩ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে নাট্যতীর্থের প্রযোজনা ‘জুলিয়াস সিজার’, নির্দেশনায় তপন হাফিজ। সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন বাপ্পাদিত্য চৌধুরী। ২৪ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হবে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের প্রযোজনা গোলাম সরোয়ার নির্দেশিত ‘ঘর জামাই’। সম্মাননা দেওয়া হবে খন্দকার সাইফুল ইসলাম নিপুকে।

২৫ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) প্রযোজনা ‘আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর’। নির্দেশনা সুদীপ চক্রবর্তী। সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন মাহফুজা হিলালী। নাটক প্রদর্শনীর আগে এদিন বিকেল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রবীণের ঐতিহ্যালোকে নবীনের শিল্পযাত্রা’ শীর্ষক সেমিনার।

২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে নাট্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে নাট্যতীর্থের কর্মীদের মধ্য নির্বাচিত নাট্যকর্মীকে দেওয়া হবে ‘নাট্যতীর্থ সর্বোচ্চ উপস্থিতি সম্মাননা পদক’। সমাপনী অনুষ্ঠানের পর মঞ্চস্থ হবে আবদুল্লাহ আল-মামুন নির্দেশিত থিয়েটার প্রযোজনা ‘মেরাজ ফকিরের মা’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘রাক্ষস’-এর গল্প বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে সুস্মিতাকে

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

মেহেদী হাসান হৃদয়ের ‘রাক্ষস’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের। এ মাসের শুরুতেই শোনা গিয়েছিল এমন খবর। জানা গিয়েছিল দেশের বাইরে রাক্ষস সিনেমার দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ে যোগ দেবেন তিনি। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে গত বুধবার বিএফডিসিতে রাক্ষস সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় উপস্থিত হলেন নায়িকা। জানালেন রাক্ষসের গল্পই তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাক্ষস সিনেমায় যুক্ত হওয়ার কারণ জানিয়ে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্মাতা হৃদয়ের কাছ থেকে গল্পটা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। গল্পের জন্যই এ সিনেমায় যুক্ত হওয়া। কারণ এই গল্পে নায়িকার অনেক কিছু করার আছে। চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে নিজের ২০০ ভাগ দিয়ে চেষ্টা করব।’

প্রথমবার ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি ভীষণ এক্সাইটেড, এই প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি, সিনেমায় অভিনয় করছি। এই দিনটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল। অনেকবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। ভালো একটি টিমের সঙ্গে প্রথমবার বাংলাদেশি সিনেমায় অভিনয় করতে চলেছি, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

ঢাকাই সিনেমায় কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে করলেও সবার সহায়তায় সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করতে চান সুস্মিতা। পেতে চান বাংলাদেশের দর্শকদের ভালোবাসা। সুস্মিতা বলেন, ‘যখন সিনেমায় নাম লেখাই তখন কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কাউকেও চিনতাম না। অডিশন দিয়ে অনেক কষ্ট করে সিনেমায় এসেছি। ওটাও যেমন আমার জন্য কঠিন ছিল, তেমনি এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রথম কাজটা চ্যালেঞ্জিং হবে। কিন্তু এখানে এসে টিমের সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে চ্যালেঞ্জটা উতরে যেতে পারব। তাঁরা একবারের জন্য আমাকে মনে করতে দিচ্ছে না যে আমি অন্য দেশ থেকে এসেছি। আমি এ দেশের দর্শকদের ভালোবাসা নিতে এসেছি, আশা করছি অনেক ভালোবাসা পাব।’

ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছেন সুস্মিতা। পড়াশোনায়ও ছিলেন খুব ভালো। তাই পরিবারের চাওয়া ছিল আগে পড়াশোনা শেষ হবে, তারপর অন্য কাজ। মা-বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন সুস্মিতা। পড়াশোনা শেষে বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু চাকরিটা করা হয়নি। তিনি হেঁটেছেন ছোটবেলার স্বপ্নের দিকে, অভিনেত্রী হতে।

২০২১ সালে ‘প্রেম টেম’ সিনেমা দিয়ে টালিউডে অভিষেক হয় সুস্মিতার। এরপর কাজ করেছেন ‘চেঙ্গিজ’, ‘মানুষ’সহ একাধিক সিনেমায়। এবার নাম লেখালেন ঢাকাই সিনেমায়। রুপালি পর্দায় নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সুস্মিতা বলেন, ‘প্রেম টেম সিনেমার সুস্মিতা আর রাক্ষসের সুস্মিতার মধ্যে অনেক পার্থক্য। চার বছর হয়ে গেছে প্রেম টেম সিনেমার। এই সময়ে অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে আমার কাজে, ব্যক্তিত্বে। আশা করছি পর্দায় সেটা বুঝতে পারবেন সবাই।’

রাক্ষস সিনেমায় সুস্মিতার বিপরীতে আছেন সিয়াম আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয় সিনেমার অ্যানাউন্সমেন্ট টিজার। ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে ভয়ংকর এক সিয়ামকে দেখা গেল। ফ্লোরের চারদিকে রক্তের ছোপ, রক্তমাখা সাদা স্যুট পরা সিয়ামের এক হাতে চায়নিজ কুড়াল অন্য হাতে পিস্তল। কামড়ে ধরে আছেন একটি গোলাপ। হাতের অস্ত্র উঁচিয়ে বাথটাবে পড়ে থাকা একটি মৃত বাঘের দিকে গুলি ছুড়লেন।

টিজার দেখে বোঝাই যাচ্ছে বরবাদ সিনেমার মতো রাক্ষসেও ভরপুর অ্যাকশন, ভায়োলেন্স দেখাবেন নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়। নির্মাতা জানালেন, এ সিনেমায় একটি প্রেমের গল্প আছে, যে প্রেমের কারণে সিয়াম অভিনীত চরিত্রটি রাক্ষস হয়ে ওঠে। এতে আরও অভিনয় করছেন বাপ্পারাজ, আলীরাজ প্রমুখ। সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রিয়েল অ্যানার্জি প্রোডাকশনের ব্যানারে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে শুটিং। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের রোজার ঈদে মুক্তি পাবে রাক্ষস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় দুই কনসার্টে গাইলেন আতিফ আসলাম

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এ মাসে ঢাকায় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী আতিফ আসলামের দুটি কনসার্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে শঙ্কা জেগেছিল অনুমতি নিয়ে। স্থগিত হওয়ার শঙ্কা আছে জেনে দুটি কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে যৌথভাবে ১৩ ডিসেম্বর একটি কনসার্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেইন স্টেজ ও স্পিরিটস অব জুলাই। তাতেও হয়নি শেষরক্ষা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয় সেই কনসার্ট। তবে কনসার্ট বাতিল হলেও ঢাকায় এসেছেন আতিফ আসলাম। একের পর এক প্রাইভেট কনসার্টে গান শোনাচ্ছেন তিনি।

গতকাল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) আয়োজিত ‘মিউজিক বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ’ শীর্ষক কনসার্টে গান শোনান আতিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত এ কনসার্টে প্রবেশের সুযোগ ছিল শুধু এআইইউবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের। বহিরাগতদের প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি।

আতিফের কনসার্ট ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল এআইইউবিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কনসার্ট দেখতে মাঠে প্রবেশ করতে ছিল দীর্ঘ লাইন। বেলা ২টায় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত হলেও সকাল থেকেই কনসার্টের স্থলে ভিড় করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তিল ধরার জায়গা ছিল না মাঠে। আতিফও নিরাশ করেননি তাঁদের। গেয়ে শোনান তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো। আতিফের আগে এই কনসার্টে গান শোনান দেশের সংগীতশিল্পী মিনার রহমান।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে ‘দ্য ফাইনাল নোট’ শিরোনামের আরেকটি কনসার্টে গান শোনান আতিফ আসলাম। ওই কনসার্টে শুধু গুলশান ক্লাবের সদস্যরাই আমন্ত্রিত ছিলেন। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকায় আতিফের ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রিকেট খেলায় মেতেছেন তিনি।

এর আগে পাকিস্তানের আলী আজমত ও ব্যান্ড কাভিশের কনসার্ট বাতিল হলেও তাঁরাও বাংলাদেশে এসেছিলেন। শোনা গেছে, তাঁরাও ঢাকায় একাধিক প্রাইভেট কনসার্টে পারফর্ম করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এ সপ্তাহের ওটিটি: ‘সাবা’সহ মুক্তির তালিকায় যেসব সিনেমা-সিরিজ

প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পাচ্ছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।

বিনোদন ডেস্ক
মিসেস দেশপান্ডে সিরিজে মাধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মিসেস দেশপান্ডে সিরিজে মাধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সাবা (বাংলা সিনেমা)

  • মুক্তি: হইচই (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মেহজাবীন চৌধুরী, মোস্তফা মনওয়ার, রোকেয়া প্রাচী
  • গল্পসংক্ষেপ: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সাবা। বাবা গত হয়েছে। মা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মেয়ে সাবা। পরিবার আর মায়ের সেবায় নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে উঠতে পারেনি সাবা। অর্থের টানাটানিতে দিনরাত এক করে মাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা তার।

রাত আকেলি হ্যায়: দ্য বানসাল মার্ডারস (হিন্দি সিনেমা)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী, রাধিকা আপ্তে, চিত্রাঙ্গদা সিং
  • গল্পসংক্ষেপ: ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া ক্রাইম থ্রিলার ‘রাত আকেলি হ্যায়’ সিনেমার সিকুয়েল এটি। ইন্সপেক্টর জটিল যাদব এবার ফিরছে নতুন মামলা নিয়ে। কানপুরের ধনী ও প্রভাবশালী বানসাল পরিবারে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পড়ে জটিল যাদবের ওপর। ঘটনার অন্তরালের লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জাল উন্মোচন করে সে।

মিসেস দেশপান্ডে (হিন্দি সিরিজ)

  • মুক্তি: জিওহটস্টার (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মাধুরী দীক্ষিত, প্রিয়াংশু চ্যাটার্জি, সিদ্ধার্থ চান্দেকর
  • গল্পসংক্ষেপ: ফরাসি থ্রিলার ‘লা ম্যান্টে’র অনুপ্রেরণায় তৈরি এ সিরিজে মাধুরীকে দেখা যাবে একজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২৫ বছর সাজা হয় মিসেস দেশপান্ডের। তার খুন করার ধরন কপি করছে আরেকজন। তাকে ধরতে পুলিশ সহায়তা নেয় মিসেস দেশপান্ডের।

এমিলি ইন প্যারিস সিজন ৫ (ইংরেজি সিরিজ)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১৮ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: লিলি কুপার, ফিলিপাইন লেরয়-বিউলিউ, অ্যাশলে পার্ক
  • গল্পসংক্ষেপ: চতুর্থ সিজনে এমিলি কুপারের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনেক কিছু অমীমাংসিত ছিল। সেসব প্রশ্ন ও কৌতূহল নিয়েই শুরু হচ্ছে পঞ্চম সিজন। এবার শুধু প্যারিসে নয়, এমিলির জার্নি বিস্তৃত হবে রোম শহরেও।

থাম্মা (হিন্দি সিনেমা)

  • মুক্তি: প্রাইম ভিডিও (১৬ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: আয়ুষ্মান খুরানা, রাশমিকা মান্দানা, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
  • গল্পসংক্ষেপ: ভৌতিক গল্পের এ সিনেমার শুরুতে পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে গিয়ে বিপদে পড়ে অলোক নামের এক সাংবাদিক। পথ ভুলে পৌঁছায় এমন এক ডেরায়, যেখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির বাস। সেখানেই অলোকের দেখা হয় মানুষরূপী এ প্রেতাত্মার সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত