না থাকার এক বছর

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১২: ৫৪
Thumbnail image

ঢাকা: দেখতে দেখতে একটা বছর অতিক্রান্ত, আজও মেনে নিতে কষ্ট হয় ইরফান খান আর নেই। গত বছর ২৯শে এপ্রিল চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন ভার্সেটাইল অভিনেতা ইরফান খান। অভিনয় করছেন-এই ব্যাপারটাই মনে হত না কখনও। নিজের দুইটা চোখের ওপর সে কী অদ্ভুত এক নিয়ন্ত্রণ! ইরফান খানের কাজ দেখে বুঝেছি- কমই বেশি, যত মাপা অভিনয় করা যায়, তত সুন্দর।

ইরফানের খানের স্ত্রী সুতপা আর তাঁদের বড় ছেলে বাবিলের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনেমা সমালোচক অনুপমা চোপড়া। চমৎকার সব প্রশ্ন আর তার চেয়েও চমৎকার উত্তর। ইরফানের সাথে স্মৃতি, বাবা হিসেবে ইরফান কেমন ছিলেন, স্বামী হিসেবে কেমন ছিলেন- সব উঠে এসেছে ইন্টারভিউতে। স্ত্রী, সন্তান দুইজনেই একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন- ইরফান ছিলেন আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড। সুতপা চমৎকার একটা লাইন বললেন- আমাদের বিয়ে ছিল না, আমাদের দুজনের একটা সংগঠন ছিল।

ইরফানের স্মৃতির পাশাপাশি খুব ছোট্ট করে নেপোটিজম, ফেমিনিজমের ব্যাপারেও আলাপ হল। এত সুন্দর করে বললেন সুতপা!

 ছবি: ইনস্টাগ্রামএমনই একটি সাক্ষাৎকার যেখানে যিনি প্রশ্ন করছেন তিনি কান্না করছেন, যিনি সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তিনিও কান্না করছেন-আর দর্শক হিসেবে সেটা দেখে আপনিও কাঁদবেন।

ডিয়ার ইরফান খান, আই মিস ইউ লাইক হেল! স্বামীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগে একান্ত সাক্ষাত্কারে ইরফান খানের জীবনের নানান অজানা কথা জানিয়েছেন স্ত্রী সুতপা শিকদার।

নিজের যা পছন্দ নয়, কোনওভাবেই সে কাজ করতেন না ইরফান। তাই তো সচরাচার কোনও বলিউড পার্টিতে দেখা মিলত না ‘মকবুল’ তারকার। সুতপা শিকদার স্মৃতির সরণি বেয়ে জানান, একবার এক প্রথম সারির নায়িকার সামনে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন ইরফান।

 ছবি: ইনস্টাগ্রামরূপের প্রশংসা পছন্দ সব নারীরই। আর তিনি নায়িকা হলে তো কথাই নেই! নায়িকাকে নিজের হাতের জাদুই ছোঁয়া যিনি আরও সুন্দরী করে তোলেন সেই রূপটান শিল্পীরও যে যথেষ্ট প্রশংসা প্রাপ্য তা অনেকসময়ই আমরা ভুলে যাই। কিন্তু ভোলেননি ইরফান। সেই মেক-আপ আর্টিস্টের মন খুলে প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু পাশে বসে থাকা সেই অভিনেত্রীর সৌন্দর্যে বিন্দুমাত্র প্রশংসা করেননি। মুখে কোনওরকম শব্দ উচ্চারণ না করলেও এই ঘটনায় স্বভাবতই মনোক্ষুণ্ন হয়েছিলেন সেই নায়িকা, তা বলাই বহুল্য।

ইরফানের এমন আচরণের জন্য অনেকেই হয়ত তাঁকে অহংকারি ভেবে ভুল করত জানান সুতপা, তবে ইরফান পত্নীর কথায়-‘কে কি বললো তার তোয়াক্কা করতেন না ইরফান। আমরা সকলেই জানি এই ইন্ডাস্ট্রিতে শো অফ কতটা জরুরি।  পার্টি যে ফেক কিছু একটা, সেই কারণে ও পার্টিতে যেত না। খুব বেশি মেলামেশা করত না। কারণ ও মিথ্যা বলতে পারত না। ও কাউকে দেখে বলতে পারত না- উফ ফিল্মটা দুর্দান্ত হয়েছে, যদি না মন থেকে ও সেটা অনুভব করত বা বিশ্বাস করত’।

 ছবি: ইনস্টাগ্রামধর্ম নিয়ে কোনো দিনই বেশি মাতামাতি করতেন না ইরফান। সুতপা জানিয়েছেন, ইরফানের এক বার এক ঘটনা সকলকে চমকে দিয়েছিল। শিবের বারে উপোস করবেন বলে, একবার উদ্যত হয়েছিলেন। সকল আত্মীয় স্বজনকে চমক দিয়ে ইরফান বলেছিলেন, দু’ বছর ধরে চেষ্টা করছেন তবে করে উঠতে পারেননি। তবে এবার থেকে সপ্তাহে একদিন তিনি উপোস করবেন। সুতপার কথায়, ইরফান নিজের ধর্ম নিজে তৈরি করতেন এবং তাঁর কাছে ধর্ম মানে আধ্যাত্মিকতা।

ইরফান স্ত্রী সুতপা বলেন, ‘আমার তো মনে হত ও নিজের ধর্ম নিজেই তৈরি করত। যদি কোনো কিছুই না হত, অথবা ওর ক্যানসার না হত, হয়তো ও শোবিজের দুনিয়া ত্যাগ করে, নিজের সন্ধানে কোনো কিছুর চেষ্টা করতো। হয়তো সে নিজের সন্ধান, এই দুনিয়া বা আরো অন্য কিছুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়তেন। ও এসবের মধ্যে ছিল এবং এসব নিয়ে চর্চা ও পড়াশোনা করত। কীভাবে ঠিক বোঝাবো? একধরণের দার্শনিক হয় না এই জগতে, ঠিক তেমন! এমন একটা সত্যি যেটাকে তিনি বিশ্বাস করতেন। ধর্ম মানে ওর কাছে আধ্যাত্মিক বিষয় ছিল। একটা সময় ও উপনিষদ, রামকৃষ্ণ পরমহংস, বিবেকানন্দ পড়েছে... কিন্তু ও ধার্মিক গোছের মানুষ ছিল না। অশ্ব, মহাবীর ও সব পড়েছে’। সুতপা বলেন,  ইরফান কখনোই কোনও লিঙ্গবৈষম্য, ধর্মীয় ভেদাভেদে বিশ্বাসী ছিলেন না।

 ছবি: ইনস্টাগ্রামস্বামীর ব্যাপারে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ইরফান-স্ত্রী জানান,‘ইরফানের অন্যতম গুণ ছিল যে উনি মিথ্যা কথা বলতেন না। কোনওরকম ভণিতা করতেন না। যদি রেগে যেতেন সেটা যতটা সত্যিভাবে প্রকাশ করতেন আবার যখন ভালোবাসতেন কোনও কিছু সেটাও উচ্চস্বরে খোলাখুলি প্রকাশ করতেন!’

ইরফান-পুত্র বাবিল জানালেন মৃত্যুর আগে তাঁকে কাছে টেনে ইরফান বলেছিলেন, তিনি আর বাঁচবেন না। মৃত্যুশয্যায় তাঁর বাবা’র বলা শেষ কিছু কথার মধ্যে যা অন্যতম ছিল বলেই জানিয়েছেন বাবিল।

 ছবি: ইনস্টাগ্রামবাবিল আরও জানান যে, ইরফানের মৃত্যুর দু’তিনদিন আগে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তখন জ্ঞান হারাচ্ছেন মৃত্যুমুখী ইরফান। এরপর ইশারায় বাবিলকে ডেকে হাসিমুখে, ধীর স্বরে তিনি বলেন,‘আমার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে এবার।’ যা শুনে তৎক্ষণাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে প্রতিবাদ করে ওঠে ইরফানপুত্র। বাবিলের কথায়,‘আমার মুখে একথা শোনার পর ফের একবার মুখে হাসি ফুটিয়ে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়েন বাবা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত