মাফিয়ার নিয়ন্ত্রণে মালায়ালাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি, নারীরা নিপীড়িত: বিচার বিভাগীয় তদন্ত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০: ৩৭
Thumbnail image

ভারতের কেরালা রাজ্যের সিনেমা জগৎ পরিচিত মালায়ালাম সিনেমা নামে। সম্প্রতি বিচারবিভাগীয় এক তদন্তে এই মালায়ালাম সিনেমা জগতের ভয়াবহ সব তথ্য উঠে এসেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে ‘মাফিয়া’ রাজত্বের পাশাপাশি পুরুষ প্রাধান্য বজায় রাখতে গিয়ে নারীদের যৌন নির্যাতনসহ অন্যান্য বিষয়ের ভয়াবহ চিত্রও উঠে এসেছে সাবেক বিচারপতি কে হেমা কমিশনের প্রতিবেদনে। 

বিচারপতি কে হেমার নেতৃত্ব এই কমিশন গঠিত হয় ২০১৭ সালে। প্রায় দুই বছর তদন্ত শেষে কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৯ সালে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সেই প্রতিবেদন এত দিন প্রকাশিত হয়নি। অবশেষে কেরালা হাইকোর্টের এক আদেশের পর গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। 

প্রতিবেদন অনুসারে, ভুক্তভোগী নারীদের মতে—একেবারে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখার দিন থেকেই শুরু হয় নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। তাঁদের বলা হয়, সিনেমায় কাজ পেতে চাইলে ‘তাল মিলিয়ে’ ও ‘ছাড় দিয়ে’ চলতে হবে। এই দুটি শব্দবন্ধ দিয়ে মূলত বোঝানো হয় চাওয়ামাত্র সংশ্লিষ্ট নারীদের যৌনতায় লিপ্ত হতে হবে। 

মালায়ালাম চলচ্চিত্রে পুরুষ প্রাধান্য কতটা সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এক ভুক্তভোগী অভিনেত্রী জানান, একটি সিনেমার সেটে তাঁকে ১৭ বার একটিমাত্র দৃশ্যের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে। আরও আশঙ্কার ব্যাপার হলো, যার সঙ্গে সেই দৃশ্যটি ছিল, সেই অভিনেতা তাঁকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। 

কেবল তাই নয়, নারীদের অনেক ক্ষেত্রে সিনেমার অনেক দৃশ্য বিশেষ করে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ব্যাপারে জানানো হয় না আগেভাগে। এ বিষয়ে আরেক অভিনেত্রী জানান, একটি সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের জন্য পরিচালক তাঁকে আগে থেকে কিছু জানাননি। তারপরও তাঁকে সেই দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়। পরে তিনি সেই দৃশ্যটি বাদ দেওয়ার অনুরোধ করলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় যে, তাঁর এসব দৃশ্য সবার সামনে উন্মুক্ত করা হবে। 

প্রতিবেদনটিতে বিনোদন জগতে বহুল আলোচিত ‘কাস্টিং কাউচের’ দৃষ্টান্তও উঠে এসেছে। দেখা গেছে যেসব নারী প্রথমবার সিনেমায় আসেন, তাঁদের প্রায়ই নিজেদের সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবার সঙ্গে আনেন। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয় তা নয়। এমনকি অনেক অভিনেত্রী অভিযোগ করেছেন, সিনেমা জগৎসংশ্লিষ্ট পুরুষেরা প্রায়ই গভীর রাতে তাঁদের বাড়ির দরজায় হানা দেয়। এ সময় দরজা না খুললে সহিংস হয়ে ওঠে তারা। 

তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, যদি কোনো অভিনেত্রী ‘ছাড় দিতে’ ও ‘তাল মিলিয়ে’ চলতে রাজি না হন, তাহলে শুটিং সেটে তাঁদের খাবার, স্যানিটেশন ইত্যাদি মৌলিক অধিকারও হরণ করা হতো। এ কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়া সব নারীই জানিয়েছেন, ‘আউটডোর শুটিংয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই পায়খানা রাখা হতো না, কাপড় পরিবর্তনের জন্য আলাদা কক্ষ দেওয়া হতো না। এই অবস্থায় নারীদের একপ্রকার বাধ্য হয়ে ঝোপঝাড়ে মলমূত্র ত্যাগ, কাপড় পরিবর্তন করতে হতো। কখনো কখনো অন্য সহকর্মীরা চারদিক থেকে কাপড় দিয়ে ঘিরে একটি জায়গা তৈরি করতেন, সেখানেই কাপড় পরিবর্তন করতে হয়েছে। এমনকি সুপেয় পানিও দেওয়া হতো না।’ 

 ২০১৯ সালে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও এত দিন ধরে তা প্রকাশিত কেন হয়নি তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ধারণা করা হচ্ছে, মালায়ালাম চলচ্চিত্রশিল্পের ‘মাফিয়া’ গোষ্ঠীই এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে। অবশেষে কেরালার বর্তমান পিনারাই বিজয়ন সরকার এই প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। তবে তারপরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে এই প্রতিবেদন থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত