Ajker Patrika

সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১৪: ৪৮
সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ

ঢাকা: সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্র বেশির ভাগ সময়ই আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে। মূলত তাঁর তৈরি করা ফিচার ফিল্মগুলোর দিকেই চোখ থাকে মানুষের।

বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাস জানে, বিভিন্ন দেশের সেরা মনীষীদের নিয়ে অনেক তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই মানুষদের জীবনের পথ অথবা তাঁদের শৈল্পিক পদচারণা বিবৃত হয়েছে তাতে। এসব তথ্যচিত্র নির্মাতাদের কেউ কেউ নির্মাণে রাখতে পেরেছেন তাঁর স্বকীয়তার স্বাক্ষর, বলেছেন নতুন কথা। আবার কেউ কেউ পেশাদারি ভঙ্গিতে স্রেফ তুলে ধরেছেন জীবনালেখ্য।

সত্যজিৎ রায়ও বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। তবে সেগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন নিয়ে করা তথ্যচিত্রটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়। রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে নির্মিত ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬১ সালে।

একটু আগে থেকেই শুরু করি। ১৯৫৯ সালে অনেকে বুঝতে পারলেন, বাংলা ভাষার সেরা কবির জন্মশতবার্ষিকী দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে, এখন কিছু একটা করা দরকার। তখন একটি শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি গঠন করা হলো। সেই কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয়, এ উপলক্ষে রবীন্দ্র–জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হবে। কে করবেন ছবি নির্মাণ? কে লিখবেন চিত্রনাট্য? সত্যজিৎ রায় তো ছিলেনই। তবে তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছিলেন আরও কেউ কেউ। সত্যজিৎকে যারা সমর্থন করলেন, তাঁরা বললেন, সত্যজিতের মধ্যে রাবীন্দ্রিকতা আছে। রবীন্দ্রনাথকে বোঝেন সত্যজিৎ। ১৯৬১ সালেই সত্যজিতের তিন কন্যা মুক্তি পায় (পোস্টমাস্টার, মনিহারা আর সমাপ্তি)। এর পর সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথের কাহিনি নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘নষ্টনীড়’ আর ‘ঘরে বাইরে’। আমরা অবশ্য তথ্যচিত্রটির দিকেই দৃষ্টি রাখব।

যারা সত্যজিতের মতো শিল্পীর হাতে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের কথা হলো—জন্মশতবার্ষিকীতে যদি ছবি করতেই হয়, তাহলে তার ভার দেওয়া উচিত কোনো ইতিহাসবিদকে। কারণ, ইতিহাসবিদই রবীন্দ্রনাথকে সাল অনুযায়ী তুলে ধরতে পারবেন। এটা ইতিহাসবিদেরই কাজ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীতএই বিতর্ককে বাড়তে দেননি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও ছিলেন উদ্‌যাপন কমিটির একজন সদস্য। এ কথা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না যে, রাজনীতিবিদের বাইরেও একজন ইতিহাসবিদ ও লেখক হিসেবে জওহরলাল নেহরুর সুনাম ছিল। নেহরু দৃঢ়ভাবে বললেন, তথ্যচিত্র নির্মাণ করা কোনো ইতিহাসবিদের কাজ নয়; এটা নির্মাণ করতে পারেন কোনো শিল্পী। কমিটির বেশির ভাগ সদস্য নেহরুর প্রস্তাবে সায় দিলেন। সত্যজিৎ রায় পেলেন ছবিটি তৈরি করার ভার। সত্যজিৎ রায়ের এই দায়িত্বভার পাওয়াটা আকস্মিক ব্যাপার ছিল না। যৌবনকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথের গুণগ্রাহী ছিলেন সত্যজিৎ। সত্যজিৎ অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, তাঁর কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেননি, শুধু একবার তিনি রবীন্দ্রনাথকে দেখেছিলেন ও তাঁর বক্তব্য শুনেছিলেন শান্তিনিকেতনে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নান্দনিক দর্শন, সামাজিক মূল্যবোধ বিপুলভাবে প্রভাব ফেলেছিল সত্যজিৎ রায়ের ওপর। সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাববলয়ের ভেতরের মানুষ—এ কথা বলা হলে তা বাড়িয়ে বলা হবে না বোধ হয়। তাই তথ্যচিত্রের জন্য সেই রবীন্দ্রনাথকেই তুলে আনলেন সত্যজিৎ, যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পরিচিত।

এখন অনেকেই জেনে ফেলেছে, তথ্যচিত্রটি দুভাবে তৈরি হয়েছিল। একটি ছিল বড়, তাতে ছিল ছয়টি অংশ। এই তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। এখানে স্বয়ং সত্যজিৎ রায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন। এই ছবি দেখানো হয়েছিল বাংলায়, আর বাইরের দেশগুলোয়। অন্যটিতে ছিল দুটি অংশ। ভারতের অন্যান্য প্রদেশে দেখানোর জন্য। অনেকগুলো ভাষায় তা নির্মিত হয়েছিল। যে প্রদেশে দেখানো হচ্ছিল, সে প্রদেশের ভাষায় তাতে কণ্ঠ দেওয়া হয়েছিল। আলোচিত হয়েছে বড় তথ্যচিত্রটিই।

তথ্যচিত্রটি শুরু হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ও শেষকৃত্য দিয়ে। সেখানে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে সত্যজিৎ ইংরেজিতে যা বলছেন, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় মারা গেছেন একজন মানুষ। তাঁর দেহ পোড়ানো হলো আগুনে। কিন্তু তিনি যে সম্পদ রেখে গেছেন, কোনো আগুনেরই ক্ষমতা নেই, তা পুড়িয়ে দেবে।’ শ্মশানের লেলিহান শিখার জায়গায় এর পর দেখা যায় ভোরের সূর্য, সেটাই প্রতিনিধিত্ব করে রবীন্দ্রনাথের। যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল উদ্‌যাপন কমিটিতে—কে বানাবেন ছবি, সে বিতর্কের গায়ে যেন কালি লেপে দিলেন সত্যজিৎ। ইতিহাসের পথ ধরে না এগিয়ে সূর্যের ছবি তুলে তিনি বলে দিলেন, ‘তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ’। বাঙালি জীবনের সুকঠিন বাস্তবতায় ঠাকুর পরিবারের লড়াইকে টেনে আনলেন। রবীন্দ্রনাথের গল্প বলতে গিয়ে কবির শৈশব থেকে শুরু করেন না সত্যজিৎ, বরং চলে যান তাঁর পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের কাছে। দ্বারকানাথ ঠাকুরের গল্প বলে তিনি দর্শক–শ্রোতাকে প্রস্তুত করেন পরের দুই প্রজন্মের গল্প শোনার জন্য। পরের প্রজন্মের জীবনে দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রভাব একটি বড় বিষয়। যদিও একেবারে বিপরীতমুখী ভাবনার অধিকারী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মস্ত প্রভাব ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর, কিন্তু পুরো পরিবারের সংগ্রামী জীবনটা উঠে এসেছে দ্বারকানাথ ঠাকুরের মাধ্যমেই, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

রবীন্দ্রনাথ তথ্যচিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীতছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রীয় সমস্যায় পড়েছিলেন সত্যজিৎ। তথ্যচিত্র তৈরি করতে গেলে অনেক নির্মাতাই এ ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকেন। ছবিটিকে প্রাণবন্ত ও সত্য করে তোলার জন্য, চলচ্চিত্রের ভাষা তৈরি করার জন্য এমন কিছু চলচ্চিত্রীয় উপাদান তিনি গ্রহণ করেন, যা ছবিটিকে বিশ্বাসযোগ্য ও উপভোগ্য করে তোলে। ছবির শুরুর দিকের অনেক কিছুই তাই পুনর্নির্মাণ করতে হয়। সেখানে নতুনভাবে অভিনয় করিয়ে ঘটনা তুলে আনতে হয়, তাতে রবীন্দ্রনাথের পরিবার উঠে আসে অনবদ্যভাবে। আর সেই পুনর্নির্মিত সেলুলয়েডের অন্তর ভেদ করে বাজতে থাকে সত্যজিতের প্রায় নিরাসক্ত বর্ণনার সুর। ছবিটি দেখলে যে কেউ এই অসাধারণ ব্যাপারটি লক্ষ্য করবেন। কিন্তু সবাই এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাবে না। ছবিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য কখনো কখনো যা করা হয়েছে, তাতে খাদ রয়েছে। যেমন, দ্বারকানাথ ঠাকুর লন্ডনের হাইডপার্কে যাচ্ছেন গাড়িতে চড়ে, সেটা দেখাচ্ছেন সত্যজিৎ, কিন্তু দর্শক দেখতে পাচ্ছে নাটকের পোশাকে গাড়িতে করে একজন চলেছেন পথে, পেছনে প্রজেক্টরে ভেসে উঠছে হাইডপার্ক। এই পুনর্নির্মাণের চিন্তা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তথ্যের মাধ্যমে বিষয়টা তুলে ধরলে কাজটি সহজ হতো। কিন্তু সত্যজিৎ তো শুধু কাহিনি বর্ণনা করতে চাননি। তিনি তো মূর্ত করে তুলতে চেয়েছেন ঠাকুর পরিবারের যাত্রাপথ। সাধারণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পথ ধরে সত্যজিতের এই ছবির বিচার হয় না। তথ্যচিত্রের অভ্যাসের বাইরের একটা ব্যাপারই ঘটিয়েছেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে জীবন বর্ণনার পথ বেছে না নিয়ে তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সঙ্গে রবীন্দ্র–জীবন যুক্ত করে তার আবেগীয় বর্ণনা দিয়ে দর্শককে আকৃষ্ট করেছেন।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন রবীন্দ্রনাথকে জমিদারী রক্ষার জন্য গ্রামবাংলায় পাঠান, তখনকার কোনো ছবিই তো পাওয়া যাচ্ছে না মহাফেজখানায়। সত্যজিৎ এখানেও করলেন পুনর্নির্মাণ। অবাক কাণ্ড হলো, এত বছর পরও সে এলাকার কৃষকের জীবনযাত্রা খুব কম বদলেছে। মনে হতে পারে, রবীন্দ্রনাথের জমিদারিতে তাঁরই উপস্থিতিতে বুঝি ছবি তোলা হলো।

ছবিতে রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষপর্ব যেখানে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে তৎকালীন সংকট। ফ্যাসিজম, আর নাৎসিজমের অন্ধকারে পৃথিবী তখন নিমজ্জিত। সে সময়ই রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশি বছরের জন্মদিন উপলক্ষে লিখলেন ‘সভ্যতার সংকট’। চলচ্চিত্রের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মতোই সত্যজিৎ রায় তা বর্ণনা করলেন। সাইরেনের শব্দ, মাদ্রিদে ভয়ার্ত মানুষের প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা, গুলিতে অবসিত মানুষের মৃত্যু—এ রকম অসংখ্য নৃশংস দৃশ্য একটার সঙ্গে একটা শুধু বদল হতে থাকে, আর তার সঙ্গে চলদে থাকে সভ্যতার সংকট নিয়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে সত্যজিতের পাঠ। মানুষের প্রতি যে বিশ্বাস রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তার পরাজয়ে তখন তিনি শোকার্ত। কিন্তু পর মুহূর্তেই ভেসে আসে কবির উচ্চারণ, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে।'

এবং তারপর?

এবং তারপর পর্দাজুড়ে ভোরের আকাশ, ধীরে ধীরে সূর্যোদয় হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ মূর্ত হয়ে ওঠেন। তথ্যচিত্রটিকে পরিণত করেন নান্দনিক এক শিল্পে।

এই তথ্যচিত্রের পেছনে বিস্তর সময় দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। যেকোনো চলচ্চিত্র নির্মাণের চেয়েও বেশি সময় দিয়েছেন। ফিচার ফিল্ম আর তথ্যচিত্র এক নয়, সেটা হয়তো ছবি প্রলম্বিত হওয়ার একটা কারণ, কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নির্মাতার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। নির্মাতা ছবিটিকে তৈরি করেছেন `আপন মনের মাধুরি মিশায়ে'।

কতটা সফল হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়? সত্যিই কি এই তথ্যচিত্রে শিল্পের শক্তি ছিল?

অন্য কিছু বলব না। শুধু একটি তথ্য দিয়েই আজকের লেখা শেষ করব।

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ছবিটি প্রদর্শিত হয় ১৯৬১ সালের ৪ মার্চ। সেদিন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মন ছিল খুব খারাপ। কাছের এক বন্ধু মারা গেছেন। তাই মন ছিল বিধ্বস্ত। বিধ্বস্ত মন নিয়েই তিনি দেখতে বসেছিলেন ছবিটি। ছবি শেষ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের মানবিক আত্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে। বিধ্বস্ত নেহরু যেন তা থেকে প্রাণ খুঁজে পেলেন। এক ঘণ্টা আগের মুমূর্ষু অবস্থা কাটিয়ে উঠলেন তিনি। ফিরে পেলেন আত্মবিশ্বাস।

এর দু মাস পর যখন সত্যজিৎ রায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছিলেন নেহরু, তখন তিনি সত্যজিৎ রায়ের এই অসামান্য সৃষ্টির কথা স্মরণ করেছিলেন শ্রদ্ধাভরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বছর পর বিচ্ছেদের খবর দিলেন বিন্দু

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৯
বিন্দু। ছবি: সংগৃহীত
বিন্দু। ছবি: সংগৃহীত

২০১৪ সালে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিককে বিয়ে করেন অভিনেত্রী আফসান আরা বিন্দু। বিয়ের পর শোবিজ থেকে পুরোপুরি নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। অভিনয় ছেড়ে হয়ে ওঠেন সংসারী। বিয়ের চার বছর পর গুঞ্জন রটে, সংসার ভেঙেছে বিন্দুর। তবে বিচ্ছেদ নিয়ে তখন কোনো কথা বলেননি বিন্দু কিংবা তাঁর স্বামী। অবশেষে নিজের বিচ্ছেদের বিষয়টি নিশ্চিত করলেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিন্দু জানান, ২০২২ সালে বিচ্ছেদ হয়েছে তাঁর।

২০২২ সালে বিচ্ছেদ হলেও ২০১৭ সাল থেকেই স্বামীর সঙ্গে সেপারেশনে ছিলেন বিন্দু। পাঁচ বছর পর তাঁরা চূড়ান্তভাবে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। বিন্দু বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, আমি এখনো বিবাহিত। কিন্তু না, আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আমার সংসারের জার্নিটা অনেক ছোট ছিল।’

বিচ্ছেদের কারণ জানিয়ে বিন্দু বলেন, ‘আলাদা হওয়ার জন্য অনেক সময় বড় কারণ থাকে, বড় ঘটনা ঘটে। অনেক সময় আবার তেমন কোনো কারণও দরকার হয় না। আমার এই জার্নিতে আরও একজন মানুষ জড়িত। তারও ব্যক্তিগত জীবন আছে। বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না।’

২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা দিয়ে শোবিজে যাত্রা শুরু হয় বিন্দুর। অল্প দিনেই হয়ে ওঠেন মিডিয়ার নিয়মিত মুখ। অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়ার আগে ২০১৪ সালের শুধু কোরবানির ঈদেই প্রচারিত হয় তাঁর অভিনীত ৫২টি নাটক। ছোট পর্দার পাশাপাশি বিন্দু অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও।

ক্যারিয়ারের শুরুতে আরিফিন শুভর সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। পর্দায় তাঁদের জুটি অনেক জনপ্রিয় ছিল। অনস্ক্রিন কেমেস্ট্রির প্রভাব পড়েছিল দুজনের বাস্তব জীবনেও। একসময় শুভর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিন্দু। সেই প্রেমের কথা স্বীকারও করেছেন অভিনেত্রী। কেন তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল? বিন্দুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘এর উত্তর আমার কাছে নেই। দুটি মানুষের জার্নি যে একসঙ্গে একই গন্তব্যে শেষ হবে, এমন তো কোনো কথা নেই।’

প্রায় এক দশকের বিরতি কাটিয়ে ২০২৩ সালে ‘উনিশ ২০’ ওয়েব ফিল্ম দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন বিন্দু। মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় এতে বিন্দুর বিপরীতে ছিলেন সেই আরিফিন শুভই। তবে এরপর আর কোনো কাজে দেখা যায়নি বিন্দুকে। তবে তিনি নিয়মিত অভিনয় করতে চান। বিন্দু বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত। এখন আমাকে নিয়ে কাজ করার চিন্তা, আমার পেছনে ইনভেস্ট করার বিষয়গুলো ভাবতে হবে। এমন ধরনের কাজ করতে চাই, যেগুলো এখনো করিনি। আমি চাই, নির্মাতারা আমাকে নিয়ে এমনভাবে ভাবুক, যেমনটা আগে ভাবা হয়নি।’

অভিনয় ছেড়ে দিয়ে বছর পাঁচেক আগে ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছেন বিন্দু। গুলশানে রয়েছে তাঁর একটি বুটিক হাউস। ‘আফসান বিন্দু ডিজাইনার স্টুডিও’ নামের এ ব্র্যান্ডের পোশাক বিন্দু নিজেই ডিজাইন করেন। ২০২০ সালে যখন প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন বিন্দু, তখন তাঁর কর্মীর সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। তবে এখন তাঁর সঙ্গে ১৫ জন কাজ করেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ইত্যাদি’র নতুন পর্ব এবার চুয়াডাঙ্গায়

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দৃশ্য
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দৃশ্য

নব্বইয়ের দশক থেকে স্টুডিওর চারদেয়ালের বাইরে বেরিয়ে শিকড়ের সন্ধানে দেশের নানা প্রান্তে শুটিং করা হচ্ছে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির। তারই ধারাবাহিকতায় ইত্যাদির নতুন পর্ব ধারণ করা হয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ প্রাচীন জনপদ চুয়াডাঙ্গায়।

এবারের ইত্যাদির মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে তৈরি শতাধিক বছরের প্রাচীন হাজারদুয়ারি নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী স্কুল নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এবারের পর্বে গান রয়েছে দুটি। একটি গান গেয়েছেন লোকসংগীতশিল্পী বিউটি ও পান্থ কানাই। গানটির কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়াডাঙ্গার কৃষ্টিকথা ও ইতিহাসগাথা নিয়ে রয়েছে শাহ আলম সনির কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় নৃত্যশিল্পীরা। এ ছাড়া ইত্যাদির নতুন পর্বে থাকছে চুয়াডাঙ্গা নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন। রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান-স্থাপনার ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।

ইত্যাদির নিয়মিত আয়োজন চিঠিপত্র পর্বে উঠে এসেছে চুয়াডাঙ্গার একজন ব্যতিক্রমী ছড়াকারের গল্প। আরও রয়েছে সামাজিক অসংগতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গনির্ভর নাটিকা। দানের নামে ফটোসেশন, সংসারের ভারে স্বপ্নভঙ্গ, মিষ্টি নিয়ে অনাসৃষ্টি, ইংরেজির দাপটে অসহায় বাংলা ভাষা, বোঝা না বোঝার বোঝা, স্টাইলিশ আইকনের বিপত্তি, লোম বাছতে কম্বল উজাড়সহ কয়েকটি নাট্যাংশে অভিনয় করেছেন সোলায়মান খোকা, সুভাশিষ ভৌমিক, আবদুল্লাহ রানা, আমিন আজাদ, কাজী আসাদ, মুকিত জাকারিয়া, আনোয়ার শাহী, শাহেদ আলী, জামিল হোসেন, আনন্দ খালেদ, তারিক স্বপন, আবু হেনা রনি প্রমুখ।

ইত্যাদির এই পর্ব দেখা যাবে ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনে রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকের চার দিনে সাত প্রদর্শনী

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকের দৃশ্য
‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকের দৃশ্য

গত বছর ডিসেম্বরে মঞ্চে এসেছিল অনুস্বর নাট্যদলের নাটক ‘মহাশূন্যে সাইকেল’। বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে পাঁচ দিনে নাটকটির আটটি প্রদর্শনী হয়েছিল। বছর ঘুরে আবারও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মহাশূন্যে সাইকেল নাটকের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে অনুস্বর। ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর টানা চার দিন দেখা যাবে নাটকের সাতটি প্রদর্শনী।

কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের লেখা একই শিরোনামের গল্প অবলম্বনে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন লেখক নিজে। নির্দেশনায় সাইফ সুমন। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখা যাবে মহাশূন্যে সাইকেল। ২৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর প্রতিদিন বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চস্থ হবে আরও ছয়টি প্রদর্শনী।

নাট্যকার শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কিছু কথা অনেকের সঙ্গে বলি, কিছু কথা নির্দিষ্ট মানুষের সঙ্গে বলি আর কিছু কথা শুধু নিজের সঙ্গে বলি। যেকোনো ক্রান্তির সময় নিজের সঙ্গে এই বোঝাপড়ার মাত্রা এবং ব্যাপ্তি সম্ভবত বেড়ে যায়। মহাশূন্যে সাইকেলের মূল ভাবনাটা এ রকম। গত বছর এই গল্পের নাট্যরূপ দিই। একজন ব্যক্তি নিজেকে দুই ভাগ করে তার এই দুই সত্তার সঙ্গে মঞ্চে কথোপকথন করছে। দর্শক হিসেবে একজন ব্যক্তির এই একান্ত বিভক্ত সত্তার ভেতরে এই কথোপকথন দেখার ভেতরে একটা গোপন কৌতূহল হয়তো আছে। কিংবা নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার আনন্দ আছে।’

নির্দেশক সাইফ সুমন বলেন, ‘ভোগবাদিতা আর ব্যক্তিস্বার্থের কারণে মানুষ এখন প্রতিনিয়তই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। পরিবার, বন্ধু, সমাজ থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হচ্ছি আমরা। কখনো কখনো মানুষের মধ্যে বাস্তবের চেয়ে কল্পনা বা অলৌকিক জগৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবারের সঙ্গে থেকেও একা অনুভব করে। সেই কথাই বলার চেষ্টা হয়েছে নাটকে।’

মহাশূন্যে সাইকেল নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোহাম্মদ বারী, এস আর সম্পদ, প্রশান্ত হালদার, নুরুজ্জামান সরকার, রীমা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন লুকে চমকে দিলেন কিয়ারা আদভানি

বিনোদন ডেস্ক
কিয়ারা আদভানি। ছবি: সংগৃহীত
কিয়ারা আদভানি। ছবি: সংগৃহীত

‘কেজিএফ’ সিনেমার দুই পর্বের ব্যাপক সাফল্যের পর কন্নড় সুপারস্টার ইয়াশ যুক্ত হয়েছেন মালয়ালম নির্মাতা গিতু মোহনদাসের সিনেমায়। ‘টক্সিক: আ ফেয়ারিটেল ফর গ্রোনআপস’ নামের কন্নড় ভাষার এ সিনেমায় প্রথমবারের মতো ইয়াশের নায়িকা হয়েছেন কিয়ারা আদভানি। টক্সিকে কিয়ারার চরিত্রের নাম নাদিয়া। গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে এ সিনেমায় কিয়ারার চরিত্রের লুক।

শোবিজে কিয়ারার এক যুগ হতে চলেছে। ২০১৪ সালে ‘ফুগলি’ দিয়ে যাত্রা শুরুর পর এ পর্যন্ত ২০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। প্রতিটিতেই দেখা দিয়েছেন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে। তবে টক্সিকে কিয়ারার চরিত্রটি যে একেবারেই আলাদা হতে চলেছে, সে আভাস পাওয়া গেল সদ্য মুক্তি পাওয়া ফার্স্ট লুক পোস্টারে। এতে তাঁকে দেখা যাবে একজন সার্কাসশিল্পী হিসেবে।

ফার্স্ট লুক পোস্টারে আলো ঝলমলে সার্কাসের সেটে অফ-শোল্ডার ভেলভেট গাউন পরে দাঁড়িয়ে আছে কিয়ারা অভিনীত নাদিয়া চরিত্রটি। চোখে-মুখে বিষণ্নতা, ক্লান্তির ছাপ। সার্কাসের মঞ্চে জাঁকজমক আবহে নৃত্যরত যে শিল্পীকে দেখা যায় দর্শকের সামনে, তার মনের ভেতরে অনেক সময় চলে দুঃখের দোলাচল। ভেতরে জমাট কষ্ট নিয়েই হাসিমুখে দর্শকের সামনে পারফর্ম করে তারা। টক্সিকের পোস্টারে তেমনটাই ধরা পড়েছে। এমনই এক জটিল চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে আসবেন কিয়ারা।

ভিএন প্রোডাকশন এবং মনস্টার মাইন্ড ক্রিয়েশনসের ব্যানারে নির্মিত বিগ-বাজেট সিনেমা টক্সিক মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ। দক্ষিণি মেগাস্টার যশ ও কিয়ারার এই নতুন রসায়ন বড় পর্দায় দেখার জন্য এখন থেকেই অপেক্ষায় অনুরাগীরা। এতে আরও অভিনয় করেছেন নয়নতারা, তারা সুতারিয়া, হুমা কুরেশি, অক্ষয় ওবেরয় প্রমুখ।

ইংরেজি ও কন্নড়—দুই ভাষাতেই টক্সিক সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। পাশাপাশি হিন্দি, তেলুগু, তামিল, মালয়ালমসহ বিভিন্ন ভাষায় ডাব করা হবে। এতে কিয়ারার পারফরম্যান্স নিয়ে নির্মাতা গিতু মোহনদাস বলেন, ‘কিছু পারফরম্যান্স শুধু পর্দায় নয়, প্রভাব ফেলে শিল্পীর জীবনেও। টক্সিক সিনেমায় কিয়ারা যা করেছে, তার কোনো তুলনা হয় না। সিনেমাটি নিয়ে আমাদের প্রথম আলাপের মুহূর্ত থেকেই তিনি চরিত্রটির প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করেছেন। তিনি শুধু নাদিয়া চরিত্রে অভিনয় করেননি, নিজেও চরিত্রটির মতো করেই যাপন করেছেন।’

প্রসঙ্গত, বলিউডের তারকা দম্পতি কিয়ারা আদভানি ও সিদ্ধার্থ মালহোত্রার সংসারে নতুন সদস্য এসেছে গত ১৫ জুলাই। এখন সন্তানকে নিয়েই পুরো সময়টা কাটছে অভিনেত্রীর। আর একটু একটু করে নিচ্ছেন আবার শোবিজে ফেরার প্রস্তুতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত