‘টেক নাম্বার আশি, নব্বই, এক শ-ও হয়ে গেছে’

মীর রাকিব হাসান
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৫৩

সংগীতজীবনে ইতিহাস গড়েছেন বহুবার। ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া সাবিনা ইয়াসমীন গান গাইছেন শিশুকাল থেকে। রেডিও, টেলিভিশন, প্লেব্যাক, অডিও, মঞ্চ সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে দৃপ্ত পদচারণা। আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাবিনা ইয়াসমীন

এ বছর জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন?

বাসায় থাকব। আজ বিশেষ কোনো ব্যস্ততাও নেই। সাধারণত বাসায়ই জন্মদিন পালন করা হয়। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আসে দেখা করতে। তাই বাসায়ই থাকার চেষ্টা করি। এবারও কয়েকজন আসবে, আগেই বলে রেখেছে। এখন তো করোনার সময় বিশেষ কিছু করার উপায় নেই। শৈশবে অনেক জাঁকজমক করে উদ্‌যাপন করা হতো দিনটা। বন্ধুবান্ধব, মিডিয়ার লোকজন মিলে দিনটা উৎসবের মতো করে ফেলত।

বর্তমানে ব্যস্ততা কী নিয়ে?

মাঝে মাঝে গান করছি। তবে রেওয়াজে দিনের অনেকটা সময় কেটে যায়। রেওয়াজ ছাড়া যেমন শিল্পী হওয়া যায় না, তেমনি রেওয়াজ ছাড়া কোনো শিল্পী থাকতেও পারেন না। অবসর সময়ে গান শোনা হয় খুব। গত সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর একটা গান করেছি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হয়েছে গানটি।

শিল্পী না হলে কী হতেন?

অন্য কিছু হওয়ার আগেই তো শিল্পী হয়ে গেলাম। অন্য কিছু হওয়ার চিন্তা আর কখন করতে পারলাম! হ্যাঁ, শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে হতো মাঝেমধ্যে। তবে শিল্পী হওয়ার পর সব সময় টেনশন থাকত–কাল যে রেকর্ডিংটা করব, সেখানে আমার বেস্টটা দিতে পারব কি না। যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারছি কি না। পরীক্ষার হলে যেমন প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়, তেমনি একটি গান গাওয়ার আগে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হতো। তাই ওই সময় অন্য কিছু ভাবার সুযোগই ছিল না।

রেকর্ডিংয়ের আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্সেল মিস করেন?

একটা গান নিয়ে শুধু ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয়, দিনের পর দিন রিহার্সেল করেছি। কখনো সংগীত পরিচালক, সুরকারদের বাসায় বসে, কখনো তাঁরাই এসেছেন আমার বাসায়। রেকর্ডিংয়ের সময় সব মিউজিশিয়ান, শিল্পী হাজির থাকতেন। তখনকার পরিবেশই ছিল অন্য রকম। এখন ডুয়েট গানও একসঙ্গে গাইছি না। এ কারণে গানে ফিলটাও থাকে না সেভাবে। টেক নাম্বার আশি, নব্বই, এক শ-ও হয়ে যায় কখনো কখনো। সেসব দিন তো মিস করিই।

সাবিনা ইয়াসমীননতুন প্রজন্মের গান শোনা হয়?

নতুন প্রজন্মের শিল্পী তো হাজার হাজার। শিল্পীর অভাব নেই। তবু তাঁদের গান তেমন শোনা হয় না। কারণ, কণ্ঠ চিনতে পারি না। সব গান মনে হয় এক কণ্ঠেই গাওয়া হচ্ছে। একই রকম লাগে। তাই শুনে মজা পাই না। কার গান কোনটি, সেটা যদি বোঝা-ই না যায়, তাহলে তার স্বকীয়তা কী! আর এক গান শুনলেই একটু পর ভুলে যাই কী গান শুনেছি। সে জন্য খুব একটা আগ্রহ পাই না। গাড়িতে থাকলে রেডিওতে মাঝেমধ্যে শুনি। কিন্তু সেটা মনে খুব একটা ধরে না। যারা শিল্পী হতে চায়, আমি চাই তারা বেশি বেশি রেওয়াজ করবে। নিজের স্বকীয়তা থাকবে। আমার পরিচয় হবে আমার কণ্ঠ। দেশি-বিদেশি গান শুনবে। যেটা আমি করি।

নতুন প্রজন্মের অনেকেই আপনাদের গান কাভার করছে…

আমরা অনেকে বসে গান তৈরি করতাম। এত যত্ন করে গান হতো বলেই এখনো গানগুলো বেঁচে আছে। একটা গান তৈরি করতে ঘেমে-নেয়ে উঠতে হতো। এখনো মানুষ সেসব গানই তো শুনতে চায়। নতুন শিল্পীরাও তো আমাদের ওই সব গানই গায়। তবে বেশির ভাগই আমাদের গান গাইলেও অনুমতি তো দূরের কথা, আমাদের নামই বলে না। এটা খুব খারাপ লাগে। অনুমতি নেওয়ার আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না জানি না; কিন্তু যখন টেলিভিশনে বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে গাইছে, তখন নামটা বলে স্মরণটা তো করবে!

কোনো অপ্রাপ্তি আছে?

আমার প্রাপ্তির ঝুলি অনেক বড়। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু নেই। ব্যক্তিগতভাবে অপ্রাপ্তির কিছু নেই। কিন্তু আমাদের শিল্পীদের পক্ষ থেকে একটা অপ্রাপ্তি আছে। আমাদের গানের কোনো রয়্যালটি দেওয়া হয় না। সারা বিশ্বে দেওয়া হয়। গানের রয়্যালটি যদি দেওয়া হতো, তাহলে শিল্পীরা, গানের কারিগররা দুস্থ হতো না। চাকরি করে অবসর নেয়, পেনশন পায়। গানই আমাদের সম্পদ। কিন্তু সেই সম্পদ বেহাত হয়ে যায়। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আলাউদ্দীন আলী ভাই মারা গেছেন। তিনিও অনেক চেষ্টা করেছেন। এখনো চেষ্টা চলছে। ফুয়াদ নাসের বাবু, হামিন আহমেদ, শেখ সাদী ভাইসহ অনেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানি না সেটা হবে কি না।

খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে কখনো?

এত মানুষের ভালোবাসা। এটা তো সবাই পায় না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমি মানুষের ভালোবাসা পাই। শ্রদ্ধা, সম্মান এক জীবনে সব পেয়েছি। আমাকে ঘিরে মানুষের ভিড়, অটোগ্রাফ, কথা বলতে চাওয়া। অবচেতন মনেও কখনো বিরক্ত হইনি। কারণ, এই ভালোবাসাটা তো সবার জীবনে পাওয়া সম্ভব হয় না। মানুষ সারা জীবন অর্থের পেছনে ছোটে। অর্থও এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এনে দিতে পারে না। শ্রোতারা আমার মাথার মণি। আগ্রহী সবার সঙ্গেই চেষ্টা করি কথা বলতে।

সাক্ষাৎকার: মীর রাকিব হাসান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত