Ajker Patrika

উত্তরাঞ্চলে ‘বেড়াতে আসা’ চিতা বাঘদের কি এভাবেই মরতে হবে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫: ১১
উত্তরাঞ্চলে ‘বেড়াতে আসা’ চিতা বাঘদের কি এভাবেই মরতে হবে

গত ২০ ডিসেম্বর নীলফামারীতে একটি চিতা বাঘকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে গ্রামবাসী। গত বছর একই জেলায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা পড়ে অপর একটি চিতা বাঘ। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় এর আগেও চিতা বাঘকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। এই চিতা বাঘেরা আসছে কোথা থেকে এবং এদের কীভাবে এমন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে লেখাটিতে।

২০ ডিসেম্বর। দুপুরের দিকে হঠাৎ এক প্রতিনিধির পাঠানো নিউজে চোখ আটকে গেল। চিতা বাঘের আক্রমণে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর। প্রথম দেখাতেই ধরে নিয়েছিলাম মেছো বিড়ালকে ভুল করে চিতা বাঘ লেখা হয়েছে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চিতা বাঘকে মেছো বিড়ালের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। তার পরই নিউজটির পড়তে গিয়ে দেখলাম ঘটনাস্থল নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা। তখনই সন্দেহটা দানা বাঁধল। তাড়াতাড়ি প্রতিনিধি কী ছবি পাঠিয়েছেন দেখায় মন দিলাম। আরে, এ তো চিতা বাঘই। আরও পরিষ্কারভাবে বললে ছবিগুলো মৃত চিতা বাঘের। এবার নিউজটি পড়ে জানলাম, বন বিভাগের লোকেরা পৌঁছার আগেই চিতা বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে গ্রামবাসী। মনটা কেঁদে উঠল, আহহা! আবার নীলফামারী! আবার চিতা বাঘের মৃত্যু!

উত্তরাঞ্চলে কেন বারবার প্রাণ দিতে হয় চিতা বাঘদের
২০ ডিসেম্বরের ঘটনার বর্ণনায় পরে আসছি। আগে নীলফামারীর প্রসঙ্গে কেন নড়েচড়ে বসেছিলাম সেটা পরিষ্কার করা দরকার। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ঘটনা। নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়া গ্রাম। সেখানকার এক মুরগির খামারে ৩ হাজারের বেশি মুরগি আছে। বনবিড়াল ও শিয়ালের কবল থেকে মুরগি বাঁচাতে খামারমালিক পুরো খামারটি জিআই তার দিয়ে ঘিরে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেন। তবে সেখানে এক বৃহস্পতিবার রাতে (১৭ মার্চ ২০২২) ঘটল অস্বাভাবিক এক কাণ্ড। রাত তখন পৌনে ৩টা। খামারের পেছনে বন্যপ্রাণীর আওয়াজ পাওয়া গেল। দেরি না করে সুইচ টিপে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পরই একটি জন্তু বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ার শব্দ। তবে আওয়াজটা বলে দিচ্ছিল বন বিড়াল বা শিয়াল নয়, অনেক বড় কোনো জন্তু আটকা পড়েছে ফাঁদে। আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির মানুষ টর্চলাইট জ্বেলে চমকে ওঠেন। একটি চিতা বাঘ বিদ্যুতায়িত তারের স্পর্শে মরে পড়ে আছে। 

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে উঠে আসে চিতা বাঘটিকে পিটিয়ে মারার দৃশ্য। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীতবাঘ মারা পড়েছে—এটা তো বড় আনন্দের খবর; অন্তত আমাদের কাছে, তাই না! সকালে মৃত বাঘটির গলায় দড়ি পেঁচিয়ে বাইরে আনা হতেই একে দেখতে জড়ো হলো আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। তখন কেউ কেউ ওই খামারের পেছনের ভুট্টাখেতে ওপর অপর একটি চিতা বাঘ অদৃশ্য হওয়ার কথা বললেও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। পত্রিকা মারফত এবং পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহর সঙ্গে কথা বলে নীলফামারীর চিতা বাঘ সম্পর্কে মোটামুটি এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম।

তবে দ্বিতীয় কোনো চিতা বাঘ সেদিন থেকে সেখানে থাকলে তার ভাগ্যটা ভালোই বলতে হয়। না হলে মানুষের পিটুনিতে ওটাকে হয়তো পৃথিবীর মায়া কাটাতে হতো। তবে ২০ ডিসেম্বরের দুর্ভাগা চিতা বাঘটি মারা গেছে মানুষের পিটুনিতেই। 

এ সুযোগে একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, ‘ডিটেকটিং দ্য স্পটস: আ রিভিও অন ল্যাপার্ড অকারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি গবেষণাপত্রে থেকে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে শুধু উত্তরের, মানে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে মানুষের পিটুনিতে মারা পড়েছে ছয়টি চিতা বাঘ। এর সঙ্গে ২০২২ ও ২০২৩ সালের ঘটনা দুটি যোগ করলে চিতা বাঘের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে আটে। কী আশ্চর্য বিষয়, ঠিক না! এমন অদ্ভুত সুন্দর একটি প্রাণীর বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই নেই!

২০২২ সালে নীলফামারীতে চিতা বাঘের পায়ের ছাপ খুঁজছে বিশেষজ্ঞ দল। ছবি: আজকের পত্রিকাদুর্ভাগা চিতা বাঘ
এবার তাহলে গত ২০ ডিসেম্বরের ঘটনাটির দিকে নজর দেই। বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ থেকে ও খোঁজখবর নিয়ে যদ্দুর জানা যায়, এদিন অর্থাৎ বুধবার বেলা ১১টার দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রংপুর-দিনাজপুর তিস্তা ক্যানেল ব্রিজসংলগ্ন গাছে একটি চিতা বাঘ দেখতে পান কৃষকেরা। জায়গাটি পড়েছে মাগুরা ইউনিয়নের আকালীবেচাপাড়া গ্রামের সীমানায়। ওই লোকগুলো চিৎকার দিলে এলাকার লোকজন বাঘ দেখার জন্য ভিড় জমায়। গাছটির দিকেও ঢিলও ছোড়ে অনেকে। সবকিছু মিলিয়ে সম্ভবত ঘাবড়ে যায় প্রাণীটি। গাছ থেকে নেমে পালাতে যায়। এ সময় প্রাণীটির সামনে পড়া গ্রামের কয়েক জন এর আক্রমণে আহত হয়। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। স্থানীয় লোকজন বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। শুধু তাই নয়, ওটাকে গাছের মধ্যে ঝুলিয়ে দিল। আর এই মৃতদেহ দেখতে ভেঙে পড়ল আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ।

পরে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে নালার মধ্যে চিতা বাঘটির বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ি করা এবং একে মারার দৃশ্য দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। যেভাবে বহু মানুষ মিলে তাড়া করে এত সুন্দর একটি প্রাণীকে মেরে ফেলল, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রাণীটির নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পরও চলছিল আঘাত।

সত্যি কী এমন মৃত্যু প্রাপ্য চিতা বাঘেদের?
এখন মুরগির খামারের মুরগি চুরি নিঃসন্দেহ গৃহস্থের ক্ষতির কারণ। তেমনি মানুষ আক্রান্ত হওয়া তার চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে এমন মৃত্যু কি চিতা বাঘেদের প্রাপ্য? এমন একটি সুন্দর প্রাণীকে মারার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখা কতটা মানবিক? ঘটনা হলো, একটা সময় আমাদের উত্তরাঞ্চলে অনেক চিতা বাঘই ছিল। তখন মানুষের বসতি কম ছিল, অনেক গ্রামীণ বন ছিল। কিন্তু আমরা মানুষই তো ওই বন ধ্বংস করে দিয়েছি। তাই এখানে চিতা বাঘ হয়ে গেছে এক অপরিচিত প্রাণী। এদিকে চিতা বাঘগুলো যখন এই এলাকায় আসে, তখন থাকার মতো জায়গা বা খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত বন্যপ্রাণী না থাকায় এরা লোকালয়ে চলে আসে। এদিকে আমাদের মধ্যেও যে বন্যপ্রাণী দেখলে, এমনকি এরা কোনো ক্ষতি করলে তাদের মেরে ফেলার একটা প্রবণতা আছে তাতে সন্দেহ নেই। মানুষ এদের বিরক্ত না করলে অনেক সংঘাতই মনে হয় এড়ানো যেত।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মৃত চিতা বাঘ দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড়। ছবি: সংগৃহীতএল কীভাবে?
কিন্তু ঘটনা হলো, নীলফামারীতে চিতা বাঘ এল কীভাবে? এটা সত্যি—একসময় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম এলাকায় চিতা বাঘের দেখা মিলত বিস্তর। কিন্তু এই এলাকায় এখন বড় বন নেই। গ্রামীণ বনও কমে গেছে। তাই এদিকটায় চিতা বাঘের বসতির খবরও শোনা যায়নি। তবে কথা হলো, আমাদের উত্তরের এই জেলাগুলোর ওপাশেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও ডুয়ার্স এলাকা। চিতা বাঘের আড্ডাখানা। এখানকার চিতা বাঘেরা কোচবিহারে ও ডুয়ার্সের সবুজ চা-বাগানে ঘুরে বেড়ায় মনের আনন্দে। আর ওগুলোর মধ্যে যেগুলো একটু দুর্ভাগা, সেগুলোই হয়তো আমাদের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এলাকায় চলে আসে। তারপর কোনো গৃহস্থের মুরগির খামারে হানা দেওয়ার অপরাধে কিংবা নিজেদের হলুদে-কালোয় মেশানো সুন্দর চেহারাটা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার কারণে মারা পড়ে গ্রামবাসীর পিটুনিতে। অথচ আমাদের বরং প্রকৃতির আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীগুলো এখনো এদিকটায় পা দেওয়ায় খুশি হওয়ার কথা। 

এই অঞ্চলের পঞ্চগড়েই জীবিত চিতা বাঘের দুর্লভ একটি ছবি তুলছিলেন বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ। সেটা ২০১৮ সালে। একটা ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটা। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা। মরিয়া চিতা বাঘটা হুংকার দিচ্ছিল, লেজ নাচাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে ঝোপ থেকে লাফ দেবে। এর মধ্যেই কাছে গিয়ে কয়েকটা ছবি তোলেন সাবাহ। অবশ্য উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে আশ্চর্য সুন্দর সেই বাঘকে বাঁচানো যায়নি। 

ফিরোজ আল সাবাহ এ ছাড়া তিনবার চিতা বাঘের আনাগোনার খবর পান বলে জানান। ২০১৫ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ভজনপুরের ডাহুক নদীর তীরে চিতা বাঘ দেখা গেছে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে পায়ের ছাপ পেয়েছেন। ২০২০ সালে ভজনপুর ১০ মাইল এলাকায় চিতা বাঘ দেখা যাওয়ার খবর পান। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর দেখা পাননি। ২০২২ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়ও চিতা বাঘের আস্তানা গাড়ার সংবাদ পেয়েছিলেন।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মানুষের তাড়া খেয়ে পালাচ্ছে চিতা বাঘ। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীতএবার একটু অন্যদিকে দৃষ্টি দিচ্ছি। ভারত থেকে আসছে এই চিতা বাঘ, ঠিক আছে। তবে এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ঘটনাটা যেখানে ঘটেছে, সেখান থেকে ভারতের সীমান্ত অনেক দূরে। তেমনি গত ২০ ডিসেম্বরের ঘটনাস্থল কিশোরগঞ্জের ওই গ্রাম থেকেও সীমান্ত মোটামুটি কিলোমিটার চল্লিশেক দূরে বলে জেনেছি। চিতা বাঘের পক্ষে বড় দূরত্ব পেরোনো কঠিন কিছু নয়। তবে কথা হলো, এত লম্বা একটা এলাকা লোকবসতির মধ্যে পেরোল কীভাবে? আর এগুলো কি দেখা যাওয়ার দু-এক দিন আগেই সীমান্ত পেরিয়ে আসে? তারপর এত দূর চলে আসে? নাকি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে চিতা বাঘের স্থায়ী কোনো বসতি না থাকলেও দীর্ঘ সময় কাটানোর মতো জায়গা আছে! 

বর্তমানে শিক্ষাকালীন ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড় থেকে শুরু করে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত সীমান্তের ওই পাশে ভারতে প্রচুর চা-বাগান আছে। এসব চা-বাগান ও আশপাশের জঙ্গলে প্রচুর চিতাবাঘ আছে। ওই দিক থেকে বাংলাদেশের অংশে সহজে চিতা বাঘ চলে আসতে পারে। তবে আমার ধারণা, এসব চিতা বাঘ এক-দুই দিনের জন্য আসে না। বরং বাংলাদেশের এই অংশে এদের নিয়মিত বিচরণ আছে। কখনো কখনো দীর্ঘ সময় এদের এই এলাকায় বাস করাও বিচিত্র নয়। এখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভুট্টা ও আখখেত। এসব জায়গায় চিতা বাঘ অনায়াসে লুকিয়ে থাকতে পারে। ছোটখাটো প্রাণী শিকার করেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ, মোটামুটি দীর্ঘ সময় থাকার জায়গা হিসেবেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নির্জন এলাকা ব্যবহার করার সম্ভাবনা চিতা বাঘদের। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এসব চিতা বাঘ রক্ষা করা।’

এদিকে ফিরোজ আল সাবাহও উত্তরের কোনো জেলায় চিতা বাঘের মোটামুটি দীর্ঘ সময় আস্তানা গাড়ার সম্ভাবনার সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, এপাশে এলে চিতা বাঘের থাকার জায়গা চর এলাকাগুলো। এই চর এলাকাগুলো ভুট্টা ও আখখেতে ভর্তি থাকে। অনেক চরে মানুষের আনাগোনা নেই। এসব এলাকায় বনবিড়াল, বুনো খরগোশ, শিয়ালের মতো প্রাণীও আছে। এ বছর ও ২০২২ সালে চিতা বাঘের মৃত্যুর ঘটনা দুটো যে জায়গাগুলোয় ঘটেছে, সেগুলো সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। পরপর দুই বছর দুটি চিতা বাঘ মারা যাওয়ায় ধারণা করছি, চর এলাকায় এদের দীর্ঘ সময় কাটানোর মতো আবাসস্থল আছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান অবশ্য মনে করেন, ভারতের অংশের বন থেকে আসা চিতা বাঘদের দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকার মতো পরিবেশ কিংবা পরিস্থিতি নেই এদিকে। কারণ বড় একটি প্রাণী থাকলে একে দেখা না গেলেও ছাগল-কুকুর মারা পড়ত। ভারতের অংশের সংরক্ষিত এলাকাগুলোর গ্রাস ল্যান্ডে অনেক সময় আগুন দেওয়া হয়। তখন এরা এদিকে হয়তো আসে। তবে পঞ্চগড়ে চা-বাগান তৈরি হওয়ায় এখানে ডুয়ার্সের দিক থেকে আসা চিতা বাঘদের বেশি সময় আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা আছে বলে মনে করেন মনিরুল খান।

বান্দরবানে ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী চিতা বাঘ। ছবি: ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সআমাদের কী করা উচিত
এখন আমাদের তাহলে কী করা উচিত? কীভাবে আমরা এদের রক্ষা করব? ভারতের অনেক জায়গাতেই মানুষ-চিতা বাঘ পাশাপাশি অবস্থানের নজির আছে। ভারতের রাজস্থানের বেরা, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স প্রভৃতি এলাকায় মানুষের আশপাশেই প্রচুর চিতাবাঘ বাস করে। তাহলে আমাদের দেশেই কেন চিতা বাঘ দেখলেই মেরে ফেলতে হবে? তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

মুনতাসির আকাশের মতে, সুন্দরবন অঞ্চলে যেমন টাইগার রেসপন্স টিম কিংবা গারো পাহাড় অঞ্চলে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম কাজ করে, এখানে তেমনি ল্যাপার্ড রেসপন্স টিম গঠন করা যেতে পারে, যারা সাধারণ মানুষকে চিতা বাঘ দেখলেই মেরে না ফেলার ব্যাপারে সচেতন করবেন। তেমনি লোকালয়ে চিতা বাঘ দেখা গেলে এদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে দিতে কাজ করবে।

মনিরুল খান বলেন, এরা সাধারণত আক্রান্ত হলেই মানুষকে আক্রমণ করে। মিডিয়ায় সাধারণত আসে মানুষকে আক্রমণ করায় এদের পিটিয়ে মারা হয় এমন খবর। মানুষকে সচেতন করাই একমাত্র উপায়। চিতা বাঘ দেখা গেলেই যেন বন বিভাগকে জানানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 

২০১৮ সালে পঞ্চগড়ে আসা চিতা বাঘটি একটা ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা। ছবি: ফিরোজ আল সাবাহবন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘প্রাণীটা আমাদের দেশের নয়। বাইরে থেকে (সীমান্ত পেরিয়ে) আসে। নীলগাইয়ের মতো প্রাণী এলে মানুষ সাধারণত আতঙ্কিত হয় না। কখনো অবশ্য খাওয়ার জন্য শিকার করে ফেলে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চিতা বাঘের নামের সঙ্গে বাঘ থাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানুষ যখন এদের ঘিরে বড় জমায়েত করে কিংবা একে আক্রমণ করে, তখন এরাও নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে পাল্টা আক্রমণ করে। যেকোনো প্রাণী এটাই করে। তখন মানুষ আরও ক্রুদ্ধ হয়ে এদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। ওই এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান দেখছি। ইদানীং এ ধরনের চিতা বাঘ মারা পড়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা উচ্চ পর্যায়ে মিটিং করে একটা সিদ্ধান্ত নেব। খুব সম্ভব আমাদের অ্যাওয়ারনেস বা সচেতনতা বৃদ্ধির যেসব প্রোগ্রাম আছে, তার আওতাভুক্ত করা হবে এটিকে।’

আশা রাখতে চাই
বাংলাদেশের বনে যে চিতা বাঘের মতো এত আশ্চর্য সুন্দর একটি প্রাণী আছে, এটি শিশুরা তো বটেই, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই জানেন না। তবে গবেষকদের গবেষণায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বনে চিতা বাঘের স্থায়ী বসতি যে এখনো আছে, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তেমনি সিলেট বিভাগের কোনো কোনো অরণ্যেও এদের দেখা যাওয়ার কথা শোনা যায় কখনো কখনো। এদিকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও এদের আনাগোনার খবর মিলছে নিয়মিত বিরতিতেই। এখানে এলে এদের করুণ পরিণতির শিকার হওয়ার পরও আশার কথা, পূর্বপুরুষের পুরোনো আস্তানাকে এখনো একেবারে ভুলে যায়নি নয়া জমানার চিতা বাঘেরা। এখন জরুরি মানুষের সঙ্গে এদের সংঘাতটা এড়ানো। আর যখন বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এদের বিচরণ থাকে, তখন দরকার মানুষের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ একটি অবস্থান নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ সকালে তাপমাত্রা ১৬.৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আকাশ আজ বুধবার ভোর থেকে ছিল হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে হাড়কাঁপানো শীত পড়েনি।

আজ সারা দিন ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮০ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় পড়েছে হালকা শীত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। তাপমাত্রাও গতকালের মতো রয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল সোমবার ছিল ১৭ দশমিক ১। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন তথ্য বলছে, আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি উষ্ণ হয়েছে পৃথিবী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী ঠিক কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে—এই প্রশ্নের উত্তর নতুন এক বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সামনে এনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানীর প্রকাশিত নতুন তাপমাত্রা ডেটা-সেট দেখাচ্ছে—শিল্পবিপ্লব শুরুর আগের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা হয়তো আমরা এত দিন যতটুকু ভেবেছি, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত আধুনিক জলবায়ু বিশ্লেষণে ১৮৫০ সালের তাপমাত্রাকে ‘প্রাক-শিল্পযুগ’ বা শিল্পযুগ শুরুর আগের তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ব এখন প্রাক শিল্প যুগের আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু ‘গ্লোসেট’ (GloSAT) নামে নতুন ডেটা-সেট প্রাক-শিল্পযুগের তাপমাত্রার হিসেবটিকে নিয়ে গেছে আরও পেছনে, ১৭৮১ সাল পর্যন্ত। গবেষকদের মতে, এই বাড়তি সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা ওই সময়ের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়েছিল।

গ্লোসেট ডেটা দেখাচ্ছে—১৮ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবী ১৮৫০–১৯০০ সময়কালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঠান্ডা ছিল। ফলে সেই সময়ের বিপরীতে বর্তমান উষ্ণতা হিসেব করতে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও বেশি মাত্রায় ঘটেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে যে উষ্ণতাটুকু বেড়েছিল, তার সবটাই মানুষের কারণে নয়। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে তাম্বোরা সহ একাধিক বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই শীতলতার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিরাজ করেছে, সেটিও উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি) আগেই জানিয়েছিল, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মানুষের কারণে উষ্ণতা বেড়েছিল ০ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। নতুন গবেষণাগুলো সেই সীমার মাঝামাঝি অবস্থান করছে—প্রায় ০.০৯ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই গবেষণার বড় দিক হলো—পুরোনো তাপমাত্রা রেকর্ড। ইউরোপের বিভিন্ন শহর যেমন, সুইডেনের উপসালা, জার্মানির হোহেনপাইসেনবার্গের মতো স্থানে শত শত বছর ধরে সংরক্ষিত তথ্য এবং ১৮ শতকের জাহাজযাত্রার সময় নথিভুক্ত সামুদ্রিক বায়ুর তাপমাত্রা একত্র করে তৈরি হয়েছে এই বৈশ্বিক চিত্র। যদিও প্রাচীন তথ্যগুলো অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা বেশি, তবু বিজ্ঞানীদের মতে একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবী তখন আরও ঠান্ডা ছিল।

তাহলে এর অর্থ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন তথ্যের প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির মতো বর্তমান জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থাৎ প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করে রাখার নৈতিক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায় না। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বোঝা ও মোকাবিলায় আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাই দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দূষণ বাড়ছে বাতাসে, যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শেষ দিন আজ। বাতাসে শীতের আমেজ। তবে শীতল আবহাওয়া নিয়ে আসা শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকার অবস্থান ৮ম।

আজ সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৫৮, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। শহরটির বায়ুমান ৩৪৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের করাচি, কুয়েতের কুয়েত সিটি, মিশরের কায়রো ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২০১, ১৮৯, ১৮৯ ও ১৮১।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত