বিদেশি পরামর্শে সেন্ট মার্টিনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন পরিবেশ উপদেষ্টা, ঢাবি শিক্ষার্থীদের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ০৬
আজ বুধবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে সেন্টমার্টিন নিয়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারিকেল জিঞ্জিরাখ্যাত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিতসহ সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। সেন্ট মার্টিন নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্য ‘অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত’ বলে দাবি করে তারা।

আজ বুধবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ দাবি করেন। ‘নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে যাতায়াত ও অবস্থানে সরকারি বাধা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে’ শীর্ষক ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব মজুমদার।

জিয়াউল হক বলেন, ‘বিদেশি জার্নালের রেফারেন্স টেনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, পর্যটকেরা কোরাল স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই ২০৪৫ সালের মধ্যে নাকি সব কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ (নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ) ডুবে যাবে। পরিবেশ উপদেষ্টার এই কথা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক। বাস্তবতা হচ্ছে, দ্বীপের কোরালগুলো অনেক বড়, অনেক ওজন, অনেক ধারালো এবং পানির অনেক নিচে থাকে যেগুলো মানুষের পক্ষে তুলে আনা সম্ভব নয়। কোরাল নিয়ে আসা দূরের কথা, জীবন্ত কোরালে হাত দিলেই হাত কেটে যায়। তাই কথিত বিদেশি জার্নাল কিংবা পরিবেশবাদীদের কোরাল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য সেটি অসত্য ও মিথ্যা প্রচারণা। তাই  মিথ্যা অজুহাতে দ্বীপে যাওয়া ও অবস্থানের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার রহস্য জনগণ জানতে চায়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি, পরিবেশ উপদেষ্টা বিদেশি পরামর্শে চলছেন কিন্তু দেশের মানুষের পরামর্শ ও দাবিদাওয়াকে পাত্তা দিচ্ছেন না। বিদেশি জার্নালের পরামর্শে তিনি নিজ দেশের পর্যটনশিল্প ও দ্বীপবাসীকে একটা মারাত্মক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যেটা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।’

জিয়াউল আরও বলেন, পরিবেশবাদীরা বলছে, দ্বীপের কোরাল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, কোরাল ক্ষয় হয় না, বরং প্রতিবছর গড়ে প্রায় ০.৫-২.৮ সেন্টিমিটার হারে বৃদ্ধি পায়। দ্বীপে সরেজমিন দেখা যায়, মৃত কোরাল জমে দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, কোরাল ক্ষয়ে নাকি দ্বীপ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে বিজ্ঞান ও বাস্তবতার মিল পাওয়া যায় না।  

স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব বলেন, ‘বাস্তবে নারিকেল দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুর। দ্বীপে কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ডেকে আনছে। ক্ষুধার্ত কুকুরের পাল সৈকতে আসা লাল কাঁকড়াকে আক্রমণ করে, কচ্ছপের ডিম খেয়ে ফেলে। দ্বীপে আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দ্বীপ থেকে সেই কুকুর অপসারণ করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ পরিবেশ উপদেষ্টা এখন পর্যন্ত নেননি।  

তিনি বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে। দ্বীপে ভ্রমণ বন্ধ রাখলে একসময় দ্বীপ জনশূন্য হয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের মগ, আরাকানি ও ভারতের জেলেরা একসময় দ্বীপটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে। তাই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ ভ্রমণে সব ধরনের সরকারি বাধা তুলে নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত