ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত সোমবার পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কার্যত ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। ঘটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ মন্দির–বসতবাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা। এসবের মধ্যে কিছু ঘটনা সত্য যেমন আছে, তেমনি ছড়িয়েছে গুজব, ভুল তথ্যও। এসব গুজব ছড়িয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে, পেরিয়েছে দেশের গণ্ডিও। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স ও ফেসবুক মনিটরিংয়ে এমন কিছু দাবি নজরে এসেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের। অধিকাংশ অ্যাকাউন্টই ভারত থেকে পরিচালিত।
দাবি ১: ঢাকায় হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর হামলা
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১ মিনিট ২৬ মিনিটের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঢাকায় একটি হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী হামলা চালিয়েছে। হামলা থেকে বাঁচতে হোস্টেলের কার্ণিশে এসে ঝুলতে থাকেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী নিচে পড়ে যান আবার কেউ ভয়েও পড়ে যান। তাঁরা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা জানা যায়নি।
ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে ছাত্রলীগ–যুবলীগের ও স্বেচ্ছোসেবকলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের মধ্যে ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের ১৫–২০ জন কর্মী একটি ৫ তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনকারীরা ওই ভবনে উঠে মারধর শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা পাইপ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। অন্তত তিনজন ছাত্রলীগকর্মী ছাদ পড়ে যায়। ছাত্রলীগ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ১০০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে গত ১৭ জুলাই ‘চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে ৩ ছাত্রলীগকর্মী জখম’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা।
জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার হিন্দু হোস্টেল দাবিতে প্রচারিত ভবনটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের পাশে অবস্থিত। ভবনটির নাম মিরদাদ ম্যানশন।
দাবি ২: এক বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেই গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভাস্কর্যের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এক ব্যক্তির মরদেহের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঝুলিয়ে রাখা মৃত ব্যক্তিটি একজন বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী।
ভিডিওটি সম্পর্কে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘কর্পোরেট সংবাদ’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঝুলিয়ে রাখা ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম হিরণ (৭৫)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
এ সম্পর্কে ঝিনাইদহে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ভাইরাল ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটি শহিদুল ইসলাম হিরণই। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে হত্যা করে পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে।
দাবি ৩: বাংলাদেশে মুসলিম নারীরা হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে
‘সুদর্শন বাংলা (Sudarshan Bangla)’ নামের ভারতের একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে মুসলিম নারীরা।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একদল তরুণী দুইজন তরুণীকে পিলারের সঙ্গে বাঁধছেন। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু নারীদের মুসলিম নারীরা বেঁধে রেখেছেন দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের। ওই সময় বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের বেঁধে রাখেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হলগুলোকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করছিলেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছিল। ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজেও ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে বেঁধে রাখার ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ফুটেজটি ওই ঘটনার। তবে বেঁধে রাখা দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা যায়নি।
দাবি ৪: বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন
‘রুনিত অন্তিল (Ronit Antil)’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে অজ্ঞাত এক তরুণীকে নির্যাতনের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, ছবিটি বাংলাদেশে হিন্দু তরুণীকে নির্যাতনের। ছবিটিতে লেখা, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এভাবেই হিন্দুদের শিক্ষা দিতে হবে। সব হিন্দু ভারতের এজেন্ট। আন্দোলনের সময় ৪ থেকে ৫ জন তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দুদের সম্পদ লুট করেছে...।’
ভাইরাল ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভাইরাল ছবিটি ২০২১ সালের। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হয়। ছবিটি ওই ঘটনারই।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ভারতের পূর্ব ব্যাঙ্গালুরুর রামামুর্থিনগর এলাকার একটি ভবনে ধারণ করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীরা সবাই বাংলাদেশি। ভুক্তভোগী তরুণী আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দাবি ৫: বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে
‘রেশমি সামান্ত (Rashmi Samant)’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইট করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ১০–১২ জন তরুণ এক তরুণীকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলছেন। ভিডিওটি প্রায় একই দাবিতে ফেসবুকেও ছড়িয়েছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, ঘটনাটি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের। তরুণীর পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি মইশাই গ্রামের দুলাল পালের মেয়ে।
ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্তের ফেসবুক পেজে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) একটি পোস্ট পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে এভাবেই সিনেমা স্টাইলে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পালবাড়ি থেকে এই মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তাঁর প্রাক্তন স্বামী। স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে। প্রসঙ্গত, মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আর যে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল সে মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী। এর আগেও সে দুইবার তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটি তার স্বামীর সাথে থাকবে না। তাই যেতে চাইছিল না, কিন্তু স্বামী জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনী খবর পেলে ঘটনাস্থলে এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।’
ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে যোগাযোগ করা হয় আজকের পত্রিকার সেনবাগ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে। ভিডিওটি সম্পর্কে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুর রহমানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ওই তরুণীকে তুলে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলা বা নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি পারিবারিক কলহের বিষয়।
আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, তরুণীটিকে তুলে নেওয়ার জন্য ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে একটি কালো মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে আটক করে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এই তিনজনের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম প্রসেনজিৎ, তিনি কুমিল্লার বিজয়পুরের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই তরুণীকে তুলে নিতে ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৪ জন পালিয়ে যান।
দাবি ৬: বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে প্রকাশ্যে বেঁধে রাখা হয়েছে
মুখে স্কচটেপ, হাত পিছমোড়া করে বাঁধা এক তরুণীর একটি ভিডিও ‘দ্য জয়পুর ডায়লগস’ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, এটাই বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অবস্থা। বাংলাদেশে হিন্দু নারীরা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, এর সঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দু তরুণীদের ওপর নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি চলতি বছরের মার্চ মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর পারফরমেন্স আর্টের দৃশ্য। ওই মাসে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। আত্মহত্যার জন্য তিনি এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে যান। এ ঘটনার বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, একই ভিডিও কিছুদিন আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিন্ন দাবিতে ভাইরাল হয়। তখন এই তরুণীকে ছাত্রলীগ নেত্রী দাবি করা হয়। যা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত সোমবার পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কার্যত ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। ঘটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ মন্দির–বসতবাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা। এসবের মধ্যে কিছু ঘটনা সত্য যেমন আছে, তেমনি ছড়িয়েছে গুজব, ভুল তথ্যও। এসব গুজব ছড়িয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে, পেরিয়েছে দেশের গণ্ডিও। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স ও ফেসবুক মনিটরিংয়ে এমন কিছু দাবি নজরে এসেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের। অধিকাংশ অ্যাকাউন্টই ভারত থেকে পরিচালিত।
দাবি ১: ঢাকায় হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর হামলা
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১ মিনিট ২৬ মিনিটের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঢাকায় একটি হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী হামলা চালিয়েছে। হামলা থেকে বাঁচতে হোস্টেলের কার্ণিশে এসে ঝুলতে থাকেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী নিচে পড়ে যান আবার কেউ ভয়েও পড়ে যান। তাঁরা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা জানা যায়নি।
ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে ছাত্রলীগ–যুবলীগের ও স্বেচ্ছোসেবকলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের মধ্যে ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের ১৫–২০ জন কর্মী একটি ৫ তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনকারীরা ওই ভবনে উঠে মারধর শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা পাইপ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। অন্তত তিনজন ছাত্রলীগকর্মী ছাদ পড়ে যায়। ছাত্রলীগ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ১০০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে গত ১৭ জুলাই ‘চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে ৩ ছাত্রলীগকর্মী জখম’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা।
জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার হিন্দু হোস্টেল দাবিতে প্রচারিত ভবনটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের পাশে অবস্থিত। ভবনটির নাম মিরদাদ ম্যানশন।
দাবি ২: এক বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেই গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভাস্কর্যের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এক ব্যক্তির মরদেহের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঝুলিয়ে রাখা মৃত ব্যক্তিটি একজন বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী।
ভিডিওটি সম্পর্কে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘কর্পোরেট সংবাদ’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঝুলিয়ে রাখা ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম হিরণ (৭৫)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
এ সম্পর্কে ঝিনাইদহে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ভাইরাল ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটি শহিদুল ইসলাম হিরণই। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে হত্যা করে পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে।
দাবি ৩: বাংলাদেশে মুসলিম নারীরা হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে
‘সুদর্শন বাংলা (Sudarshan Bangla)’ নামের ভারতের একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে মুসলিম নারীরা।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একদল তরুণী দুইজন তরুণীকে পিলারের সঙ্গে বাঁধছেন। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু নারীদের মুসলিম নারীরা বেঁধে রেখেছেন দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের। ওই সময় বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের বেঁধে রাখেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হলগুলোকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করছিলেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছিল। ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজেও ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে বেঁধে রাখার ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ফুটেজটি ওই ঘটনার। তবে বেঁধে রাখা দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা যায়নি।
দাবি ৪: বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন
‘রুনিত অন্তিল (Ronit Antil)’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে অজ্ঞাত এক তরুণীকে নির্যাতনের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, ছবিটি বাংলাদেশে হিন্দু তরুণীকে নির্যাতনের। ছবিটিতে লেখা, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এভাবেই হিন্দুদের শিক্ষা দিতে হবে। সব হিন্দু ভারতের এজেন্ট। আন্দোলনের সময় ৪ থেকে ৫ জন তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দুদের সম্পদ লুট করেছে...।’
ভাইরাল ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভাইরাল ছবিটি ২০২১ সালের। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হয়। ছবিটি ওই ঘটনারই।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ভারতের পূর্ব ব্যাঙ্গালুরুর রামামুর্থিনগর এলাকার একটি ভবনে ধারণ করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীরা সবাই বাংলাদেশি। ভুক্তভোগী তরুণী আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দাবি ৫: বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে
‘রেশমি সামান্ত (Rashmi Samant)’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইট করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ১০–১২ জন তরুণ এক তরুণীকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলছেন। ভিডিওটি প্রায় একই দাবিতে ফেসবুকেও ছড়িয়েছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, ঘটনাটি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের। তরুণীর পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি মইশাই গ্রামের দুলাল পালের মেয়ে।
ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্তের ফেসবুক পেজে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) একটি পোস্ট পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে এভাবেই সিনেমা স্টাইলে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পালবাড়ি থেকে এই মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তাঁর প্রাক্তন স্বামী। স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে। প্রসঙ্গত, মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আর যে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল সে মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী। এর আগেও সে দুইবার তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটি তার স্বামীর সাথে থাকবে না। তাই যেতে চাইছিল না, কিন্তু স্বামী জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনী খবর পেলে ঘটনাস্থলে এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।’
ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে যোগাযোগ করা হয় আজকের পত্রিকার সেনবাগ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে। ভিডিওটি সম্পর্কে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুর রহমানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ওই তরুণীকে তুলে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলা বা নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি পারিবারিক কলহের বিষয়।
আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, তরুণীটিকে তুলে নেওয়ার জন্য ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে একটি কালো মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে আটক করে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এই তিনজনের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম প্রসেনজিৎ, তিনি কুমিল্লার বিজয়পুরের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই তরুণীকে তুলে নিতে ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৪ জন পালিয়ে যান।
দাবি ৬: বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে প্রকাশ্যে বেঁধে রাখা হয়েছে
মুখে স্কচটেপ, হাত পিছমোড়া করে বাঁধা এক তরুণীর একটি ভিডিও ‘দ্য জয়পুর ডায়লগস’ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, এটাই বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অবস্থা। বাংলাদেশে হিন্দু নারীরা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, এর সঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দু তরুণীদের ওপর নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি চলতি বছরের মার্চ মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর পারফরমেন্স আর্টের দৃশ্য। ওই মাসে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। আত্মহত্যার জন্য তিনি এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে যান। এ ঘটনার বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, একই ভিডিও কিছুদিন আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিন্ন দাবিতে ভাইরাল হয়। তখন এই তরুণীকে ছাত্রলীগ নেত্রী দাবি করা হয়। যা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি অডিও কল নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আজ শনিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হরতাল পালন করতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে প্রত্যেক এলাকায় মিছিল-মিটিংয়ের আয়োজনের কথা বলতে শোনা যায়। তবে শেখ হাসিনার পরিবার কিংবা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হরতালের বিষয়ে এখনও কিছু
১ ঘণ্টা আগেএকটি কার্ডে ‘সেইফ এক্সিট চেয়ে দেশ ছাড়তে চান ড. ইউনুস, পাইলস জনিত রোগ তীব্র আকার ধারন’ এবং আরেকটিতে ‘পাইলস জনিত রোগে উন্নত চিকিৎসায় আগামী সপ্তাহে ফ্রান্সে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা’—এমন লেখা রয়েছে। পরের কার্ডে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বরাত দেওয়া হয়েছে।
২ দিন আগেশেখ হাসিনা ভারতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছেন, এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘ভারতে প্রথমবার প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
৩ দিন আগেড. মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু লোক মানুষকে নির্যাতন করছে— এই দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, ‘ডঃ ইউনূস ক্ষমতা দখলের পর বাংলাদেশ একটি ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সে ও তার গুন্ডা দল জনগণকে নির্যাতন করছে। (বাংলায় অনুদিত) ’ ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে কয়েকজন মিলে মারধর করতে দেখ
৪ দিন আগে