নোয়াখালীতে হিন্দু তরুণীকে তুলে নেওয়ার ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়, পারিবারিক কলহ

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ৫৮
Thumbnail image

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত সোমবার পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই কার্যত ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। একই সময়ে ঘটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ মন্দির-বসতবাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা। এসবের মধ্যে কিছু ঘটনা সত্য যেমন আছে, তেমনি ছড়িয়েছে গুজব, ভুল তথ্যও। এসব গুজব ছড়িয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম থেকে, পেরিয়েছে দেশের গণ্ডিও। 

‘রেশমি সামান্ত (Rashmi Samant)’ নামের একটি ভারতীয় এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইট করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো একটি হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ১০–১২ জন তরুণ এক তরুণীকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলছেন। ভিডিওটি প্রায় একই দাবিতে ফেসবুকেও ছড়িয়েছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, ঘটনাটি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের। তরুণীর পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি মইশাই গ্রামের দুলাল পালের মেয়ে।

ভিডিওটি সম্পর্কে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্তের ফেসবুক পেজে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) একটি পোস্ট পাওয়া যায়। 

নোয়াখালীতে হিন্দু তরুণীকে তুলে নেওয়ার ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়, পারিবারিক কলহপোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে এভাবেই সিনেমা স্টাইলে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পালবাড়ি থেকে এই মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী। স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে। প্রসঙ্গত, মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আর যিনি তুলে নিয়ে যেতে এসেছিলেন, তিনি মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী। এর আগেও তিনি দুবার তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মেয়েটি তার স্বামীর সঙ্গে থাকবেন না, তাই যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু স্বামী জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিলেন। সেনাবাহিনী খবর পেলে ঘটনাস্থলে এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।’ 

ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে যোগাযোগ করা হয় আজকের পত্রিকার সেনবাগ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে। ভিডিওটি সম্পর্কে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুর রহমানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ওই তরুণীকে তুলে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলা বা নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি পারিবারিক কলহের বিষয়। 

আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, তরুণীটিকে তুলে নেওয়ার জন্য ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে একটি কালো মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে আটক করে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এই তিনজনের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম প্রসেনজিৎ, তিনি কুমিল্লার বিজয়পুরের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই তরুণীকে তুলে নিতে ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৪ জন পালিয়ে যান। 

প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ আগস্ট) সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে হিন্দুদের মন্দিরে এবং যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনায় বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। দিনাজপুরে হিন্দুদের ৪০টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া রংপুরের তারাগঞ্জে আহমদিয়াদের উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ দেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে চার জেলায় ৯টি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তারা দাবি করেছে। সোমবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতির বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খুলনা জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিমান বিহারি অমিত ও যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি অনিমেষ সরকার রিন্টুর শহরের টুটপাড়ার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। 

আরও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত