Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /লক্ষ্মীপুরে হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবিটি সঠিক নয়, যা বলছেন ভুক্তভোগীরা

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
লক্ষ্মীপুরের একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
লক্ষ্মীপুরের একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

লক্ষ্মীপুরের একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ‘লক্ষ্মীপুর জেলার ১৮ নং কুশাখালী ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।’ (বানান অপরিবর্তিত)

ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটির শুরুতে এক যুবককে রাতের বেলা হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁর পিঠের পোড়া দাগ। ভিডিওর পরবর্তী অংশে গাছপালা বেষ্টিত ঘরবাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

Arif Arif’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত সোমবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাত ১টা ১৮ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটি মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ১ হাজার ১০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। পোস্টটিতে ২৬০টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৪ হাজার ১০০।

এসব কমেন্টে অনেকে দাবিটি মিথ্যা উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করে কমেন্ট করেছেন। Ranjit Kumar নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘কি বলবো ভাষা নেই। তবে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Tusar Mal লিখেছে, ‘এটা কোন ধরনের বর্বরতা?’ (বানান অপরিবর্তিত)

বঙ্গবন্ধু সৈনিক’, ‘Bellal Hossen Biplob’, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিশ্বাসী’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও কারাগার নামে পেজ থেকেও একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

এ ছাড়া নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার দুপুরে ভিডিওতি শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি ভারতের ‘Headlines Tripura’ নামের একটি সংবাদ মাধ্যমের ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি একই দাবিতে প্রচারিত হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Lakshmipur News 24.Net Live নামে একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দৃশ্যটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরের দিকে প্রকাশিত। ভিডিওটির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা যুবকের পোড়া দেহের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

লক্ষ্মীপুরের হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Lakshmipur News 24. Net Live ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
লক্ষ্মীপুরের হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Lakshmipur News 24. Net Live ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘লক্ষ্মীপুরে ভয়াবহ অ-গ্নিকা-ণ্ডে ৪ হিন্দু পরিবারের ঘর পুঁ-ড়ে ছাই, অ-গ্নিদ-গ্ধ প্রতিবন্ধী যুবক।’ (বানান অপরিবর্তিত)

একই ক্যাপশনে ১৭ মার্চ রাতে ‘ক্যামেরাম্যান আকবর’ এবং ‘লক্ষ্মীপুর ব্রেকিং নিউজ’ নামে ফেসবুক পেজ থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে। তবে এসব পেজের পোস্টের কোথাও অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ নেই।

এসব তথ্যসূত্র গুগলে সার্চ করলে ঢাকা মেইলে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার (১৭ মার্চ) রাতে লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব কল্যাণপুর জনতা কলেজ সংলগ্ন ঠাকুর বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। দ্রিজেন্দলাল আচার্য, দুলাল আচার্য, পুরবী রানী পাল ও সুরেশ চন্দ্র পালের দুটি বসত ঘর ও দুটি রান্না ঘর পুড়েছে এবং রনি আচার্য নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক দগ্ধ হয়েছেন।

মঙ্গলবার ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

সবগুলো প্রতিবেদনেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই ঘটনায় অগ্নিসংযোগের সূত্রপাতের বিষয়ে জিজ্ঞেসা করা ওসি বলেন, ‘যাদের ঘরে আগুন লেগেছে তাঁদের তথ্য মতে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। আগুনের কারণে রান্নাঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিসংযোগের বিষয়টি গুজব।’

এরপর লক্ষ্মীপুরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার রঞ্জিত কুমার সাহার সঙ্গে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম। যাদের ঘরে আগুন লেগেছে তাঁরা আমাদের জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত হয় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে। পরবর্তীতে আগুন অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে যায়।’

রঞ্জিত কুমার সাহার কাছ থেকে প্রত্যক্ষদর্শী কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে তিনি লক্ষ্মীপুরের জনতা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তিতাস সেনের ফোন নম্বর দেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা। গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে যায়।’

ভিডিওতে থাকা হাফপ্যান্ট পরিহিত দগ্ধ যুবকের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলে, ‘তাঁর নাম রনি আচার্য। তিনি দুলাল আচার্যের ছেলে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী।’

তিতাস সেনের কাছ থেকে দুলাল আচার্যের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘বহিরাগত কেউ আগুন দেয়নি। বিদ্যুতের আগুন থেকে আগুন লেগেছে। রনি আচার্য এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন।’

সুতরাং, লক্ষ্মীপুরের হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের আগুন থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতেই বাড়িঘর পুড়ে যায়। বিষয়টি ভুক্তভোগীরাই নিশ্চিত করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার উপযুক্ত বয়স কত বলে মনে করে বাংলাদেশিরা

ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ছিনতাই

সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র

নেত্রকোনায় সেহরির সময় বাড়িতে হামলা, নারী নিহত

আ.লীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত, পরে বিএনপি ও ছাত্রদলের দুই পক্ষের হাতাহাতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত