Ajker Patrika

ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম ও যশোরে মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ২৮
ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম ও যশোরে মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু

১৯৮৯ সালে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে যাত্রা শুরু করলেও ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামকরণ হয় ১৯৯৬ সালে। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে ও দেশে সে সময় চলমান স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদস্বরূপ পয়লা বৈশাখের আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু করা হয়েছিলো।

২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে আরও একটু পেছনে তাকাতে হবে।

১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ: বাংলা ১৩৯০ সন, স্থান: চট্টগ্রামের নন্দনকানন

চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৌদ্ধমন্দির সড়ক হয়ে শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার, কে সি দে সড়ক, লালদীঘি, আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড হয়ে আবার ডিসি পাহাড়ে ফিরে আসে। সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের আয়োজনে পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সেই প্রথম শোভাযাত্রার শুরু হয় চট্টগ্রামে।

১৯৭৮ সালে নগরে প্রথম নববর্ষের আয়োজন হলেও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এর ছয় বছর পর। শুরুতে এ আয়োজনে অবশ্য শোভাযাত্রা ছিল না। পরবর্তী সময়ে আয়োজনে যুক্ত হয় বর্ষ বিদায়ের অনুষ্ঠান এবং শোভাযাত্রা।’

চট্টগ্রামে পয়লা বৈশাখের দিনই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন শুরু হয় বাংলা ১৪১৩ সনের (২০০৬ সালে) নববর্ষে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চারুশিল্পী সম্মিলন। (সূত্র: প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল ২০১৭)

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ: বাংলা ১৩৯১ সন, স্থান: যশোর

চারুপাঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল - পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরও অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিবিসি বাংলা, ১৩ এপ্রিল ২০১৭)

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে যশোরের শোভাযাত্রা


১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ: বাংলা ১৩৯৬ সন। স্থান: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যশোরের ওই শোভাযাত্রার আয়োজকদের কেউ কেউ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে ঢাকায় আয়োজন শুরু করেন ১৯৮৯ সালে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। পরের বছরও চারুকলার সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। তবে শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না।

১৯৮৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্মবার্ষিকীতে জয়নুল উৎসবে চারুকলার একদল ছেলে-মেয়ে বিশাল বিশাল রঙ তুলি, রঙের টিউব, এসব তৈরি করে চমক সৃষ্টি করে। তখনই তাদের মাথায় বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতীকগুলোকে বৃহৎ আকারে তৈরি করার ভাবনা আসে। সেই ভাবনা থেকেই পরের বছরের পহেলা বৈশাখের উৎসবে মঙ্গলশোভাযাত্রা শুরু হয় যেখানে বাংলার লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন জিনিসের বিরাট বিরাট প্রতিকৃতি নিয়ে আসা হয়েছিল।

১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ: বাংলা ১৪০৩ সন। স্থান: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিল্পীদের উদ্যোগে হওয়া সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য, লেখক, শিল্পীসহ সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেয়।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ‘শোভাযাত্রা; বৈশাখ উৎসব’ নামেই পরিচিত ছিল

শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ডসহ মিছিলটি নাচে গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রং বেরংয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে শিশু একাডেমি হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে এই আয়োজনের নাম দেয়া হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

প্রতি বছর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন। তাতে সামিল হন লাখো মানুষ। দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে প্রথমবারের মতো ২০২০ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা স্থগিত করা হয়েছিলো। এবছরের পহেলা বৈশাখেও একই কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত