কুবিতে শিক্ষার্থীদের পুলিশের লাঠিপেটার ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি প্রক্টর নন 

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ১৮: ৪১
Thumbnail image

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কদিন ধরেই উত্তাল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। অবরোধ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার কোটবাড়ী বিশ্বরোড অবরোধে যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে দুই সাংবাদিকসহ বেশ কজন শিক্ষার্থী আহত হন। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত। অমিত দত্তের উপস্থিতি ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, কুবি শিক্ষার্থীদের পুলিশ যখন পেটাচ্ছিল, তখন সহকারী প্রক্টর সেটির ভিডিও করছিলেন। 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ফেসবুক পেজ ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস নিউজ’-এ গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ১০টা ৪২ মিনিটে এমন দাবিতে প্রতিবেদনসহ একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। ফটোকার্ডটিতে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন শালবনে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করছে পুলিশ। এ সময় কয়েকজন মোবাইল ফোনে ঘটনাটির ছবি বা ভিডিও ধারণ করছেন। তাঁদের মধ্যে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তও আছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, অমিত দত্তও ছবি বা ভিডিও ধারণ করছেন। 

আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পোস্টটি প্রায় ২০০ শেয়ার হয়েছে। রিঅ্যাকশন পড়েছে দেড় হাজারের বেশি। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ঘটনাস্থলে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ভিডিওটি ধারণ করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার কেয়া। তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভিডিওটিতে ভাইরাল ছবির দৃশ্যটি রয়েছে। 

ভিডিওটি সম্পর্কে কেয়া বলেন, এটি ধারণ করা হয় পুলিশ যখন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে তখন।

২০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিও ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন শালবনে ঢুকে পড়েন। শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে পুলিশও শালবনে ঢুকে যায়। এ সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন বেশ কয়েকজন। ভিডিওটির ছয় সেকেন্ড সময়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তকে দেখা যায়। ওই সময় তাঁর পাশ দিয়ে নীল রঙের টিশার্ট পরা এক ব্যক্তিকে মোবাইল ফোন হাতে দেখা যায়। পরের সেকেন্ডেই ওই ব্যক্তিকে অমিত দত্তকে অতিক্রম করতে দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যে অমিত দত্তের হাতে কোনো মোবাইল ফোন দেখা যায়নি। 

ভিডিওটি ধারণ করছিলেন সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের পাশে থাকা আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোবাইল ফোন হাতে ছবি বা ভিডিও ধারণ করা নীল রঙের টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তিটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি আতিকুর রহমান তনয়। 

আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, ভিডিওটিতে মোবাইল হাতে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের কারণে মনে হচ্ছে, সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত ভিডিও ধারণ করছেন। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভিডিও ধারণকারী হাতটি আমার না। ঘটনাস্থলে স্টুডেন্টদের সঙ্গে পুলিশের যখন ধাক্কাধাক্কি হয়, আমরা তখন মাঝখানে ছিলাম। একপর্যায়ে আমি নিজেও পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পাই। তারপর উঠে দাঁড়াতেই দেখি কয়েকজন পুলিশ শালবনের ভেতরে ঢুকে যায়। স্টুডেন্টরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছিল, টিয়ার শেলের কারণে আমি নিজেও চোখে কম দেখছিলাম। আমার পাশ দিয়ে কে গেছে, সেটা আমার খেয়াল নেই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত