সুশান্ত পালও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে বিসিএস ক্যাডার— ভাইরাল তথ্যটি গুজব

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১৬: ৪৬
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৯: ৩৪

গত কদিন ধরেই দেশের সংবাদমাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার তুঙ্গে বিভিন্ন সরকারি চাকরি বিশেষ করে বিসিএসের প্রশ্নফাঁস। এই আলোচনার সূত্রপাত দেশের বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ২৪–এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সূত্রে। পরে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীন বিসিএসের ক্যাডার এবং নন–ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক–বর্তমান ১৭ কর্মকর্তা–কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, তাঁদের একজন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আবেদ আলী। এরপর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

এমনই একটি তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, আবেদ আলীর ফাঁস করা প্রশ্নে বিসিএস ক্যাডার হওয়া ১০৫ জনের তালিকায় ১১ নম্বরে আছেন ৩০ তম বিসিএসে দেশসেরা ও জনপ্রিয় ক্যারিয়ার বিষয়ক বক্তা সুশান্ত পাল। দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪–এর ওয়েবসাইটে গত ১০ জুলাই ‘আদালতে সব বলে দিয়েছেন আবেদ আলী, তালিকা হচ্ছে সেই বিসিএস ক্যাডারদের’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সৈয়দ আবেদ আলী। তিনি জানান, তাঁর হাত ধরে অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, সব ক্যাডারেই রয়েছে ‘তাঁর লোক’। 

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, আবেদ আলীর হাত ধরে বিসিএস ক্যাডার হওয়াদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) থেকে এ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। তবে প্রতিবেদনটিতে এমন ক্যাডারের সংখ্যা বা কোনো ক্যাডারের সুনির্দিষ্ট নাম পাওয়া যায়নি। 

জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে একইদিনে ‘ফাঁস হওয়া প্রশ্নে চাকরি পাওয়া ক্যাডারদের তালিকা করছে সিআইডি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাচ থেকে ক্যাডার হওয়া অনেকের নাম বের হয়ে আসছে। 

প্রতিবেদনটিতে কোনো বিসিএস কর্মকর্তার নাম বা সংখ্যা উল্লেখ নেই। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। সিআইডি আপাতত ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হওয়াদের নামের তালিকা তৈরি ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

দেশের অন্য কোনো সংবাদমাধ্যম সূত্রেও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হওয়াদের নামের তালিকা বা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যায়নি। 

ফাঁস করা প্রশ্নে বিসিএস ক্যাডারদের তালিকায় সুশান্ত পালের নাম থাকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কালবেলা। ছবি: কালবেলাদাবিটি সম্পর্কে আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকে ভাইরাল কিছু পোস্টে সুশান্ত পাল সংক্রান্ত কথিত দাবিটির সূত্র হিসেবে জাতীয় দৈনিক কালবেলার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। 

তবে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের যাচাইয়ে দৈনিক কালবেলায় সুশান্ত পালকে নিয়ে এমন কোনো তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। দৈনিকটিও ইতিমধ্যে দাবিটি প্রসঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, কালবেলা সুশান্ত পালকে নিয়ে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। কালবেলার লোগো সংবলিত যে ফটোকার্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, সেটিও কালবেলার প্রকাশিত নয়। 

সুতরাং এটি স্পষ্ট, আবেদ আলীর ফাঁস করা প্রশ্নে বিসিএস ক্যাডার হওয়া ১০৫ জনের মধ্যে ৩০ তম বিসিএসে ক্যাডার সুশান্ত পাল থাকার দাবিটি সঠিক নয়। 

প্রসঙ্গত, দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ও প্রশ্ন ফাঁসের আলোচনার মধ্যে গতকাল শুক্রবার (১২ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন সুশান্ত পাল। 

পোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘কোটা এবং প্রশ্নফাঁস বিষয়ে কিছু না লিখলে যদি আপনাদের খারাপ লাগে, তাহলে এত কথা না বলে আমাকে আনফলো করে দিন। (আরও ভালো হয় ব্লক করে দিলে।) এসব নিয়ে আমি আপনার মনের মতো করে লিখব না। এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এত বেশি বিরক্ত করবেন না। আমি আপনার ফরমাশের চাকর নই।’ 

চলমান কোটা আন্দোলন ও প্রশ্ন ফাঁস প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান জানিয়ে সুশান্ত পালের ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সুশান্ত পালের ফেসবুক পেজ 

পোস্টটিতে তিনি আরও লেখেন, ‘এভাবে সহজ করে বুঝিয়ে বলার পরও যদি বিরক্ত করে যান, তাহলে বুঝব, আপনার কোনো লজ্জাশরম ও কাণ্ডজ্ঞান নেই। আপনি আমাকে ব্লক না করলে আমি আপনাকে ব্লক করব এবং অবশ্যই করব। এতে আপনার সম্মান বাড়বে না, কমবে। আমি আপনাকে সম্মান করি, আপনি নিজেও নিজের সম্মান বজায় রাখুন। আপনার হাতে কাজ নেই, আর আমার হাতে সময় নেই। এ কারণেই আমি চাইছি না যে, আপনি মনে এত কষ্ট নিয়েও আমাকে ফলো করুন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত