আয়নাঘর গুজব ছিল—এমন মন্তব্য করেননি গুম কমিশনের চেয়ারম্যান

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২: ০১
Thumbnail image

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গুমের ঘটনা অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমিশন কাজও শুরু করেছে। ইতিমধ্যে গুম সংক্রান্ত ৪০০ অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি কমিশনের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি নাকি বলেছেন, ‘আয়নাঘর ছিল গুজব। আয়নাঘরে কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রমাণিত হলো আয়নাঘর ছিল গুজব।’ 

‘তোমার অপেক্ষায়’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) এমন একটি ভিডিও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ক্যাপশনে পোস্ট করা হয়। এটি রোববার (৬ অক্টোবর) রাত ১০টা পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৮ হাজার বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে প্রায় ৫ হাজারের কাছাকাছি, রিয়েকশন পড়েছে ৯ হাজারের বেশি। পোস্টটির কমেন্টবক্সে সাড়ে ৭০০–এর বেশি কমেন্ট পড়েছে। এসব কমেন্টে অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারী দাবিটিকে সত্য ধরে নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

গুম কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্যে কী ছিল? 
যেই ভিডিওর শেয়ার করা হয়েছে সেটি দেশের বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টিভির। গত ৩ অক্টোবর ‘ডিবির গুম ঘরে গিয়ে কাউকে পায়নি কমিশন’ ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করে সংবাদমাধ্যমটি। মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অলরেডি ডিজিএফআইয়ের ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছি ২৫ সেপ্টেম্বর। আমরা দুই-একদিন আগে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) ও সিটিটিসির ইন্টারোগেশন সেল পরিদর্শন করেছি সরেজমিনে। আমরা সেখানে কোনো ‘ভিকটিম অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপারেন্স’ (বলপূর্বক গুমের শিকার) পাইনি। কারণ ৫ আগস্টের যে চেঞ্জ ওভার, তারপর হয়তো কিছুদিন ছিল। এরপর আমরা গিয়ে পাই নাই। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি এবং মানুষের অনেক রেসপন্স পেয়েছি।’ 

ভিডিওটিতে কোথাও তিনি বলেননি যে, আয়নাঘরের অস্তিত্ব ছিল না। বরং তিনি বলেছেন, গুম কমিশনের পরিদর্শনে বর্তমানে আয়নাঘরগুলোতে বলপূর্বক গুমের শিকার হওয়া কাউকে পাওয়া যায়নি। 

পরে আরও খুঁজে ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ইউটিউব চ্যানেলে গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেনের আরেকটি বক্তব্য পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ৩ অক্টোবর চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। সেখানে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আয়নাঘরের ভিকটিমের বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের ভিজিট করা সেলগুলোর হুবহু মিল পেয়েছি। তবে ভিজিটের পর যেটা দেখেছি, সেলগুলো অনেকাংশে পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ দেয়ালে রং করে মুছে ফেলা হয়েছে, নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধারণা, ৫ আগস্টের পর ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে।’

গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিএফআইয়ের যেটা আয়নাঘর বা ইন্টারোগেশন সেল, সেখানে আমাদের পরিদর্শনের আগে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।’

সুতরাং এটি স্পষ্ট, গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত