ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোলার বোরহানউদ্দিনে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চলাকালে অর্ধশত স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এ শিক্ষার্থীদের দেওয়া টিকাগুলো ‘বিষাক্ত’ ছিল। এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় ‘পুতুল জয় পরিষদ TNT’ নামের একটি পেজ থেকে এই দাবিতে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শেয়ার হয়েছে ৩ শতাধিক ও রিয়েকশন পড়েছে ৬ শতাধিক। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২৪ হাজারের বেশি। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
আজকের পত্রিকার ভোলা প্রতিনিধি ও অন্য সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ জ্ঞানদা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ১৬২ ছাত্রীকে বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার পর এক শিক্ষার্থী আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা তাকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ ঘটনার পর একের পর এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাত–পা জ্বালাপোড়া, বমিভাব, মাথা ব্যথা ও মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
এ অসুস্থতা কী ‘বিষাক্ত’ টিকার কারণে?
এ বিষয়ে জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ যোগাযোগ করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিরুপম সরকার সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন খারাপের কোনো ইস্যু ছিল না। প্রত্যেকটা ভ্যাকসিনের এক্সপায়ারি ডেট আছে এবং সবকিছুই ঠিক আছে। এসব ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। এরপর সরকার বিভিন্ন উপজেলায় পাঠায়। আমাদের এখানে যে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে, সেটা তো একই বক্সের। তাই একটা খারাপ হবে আরেকটা ভালো হবে— বিষয়টা এমন না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ওখানে ২৭২ জনকে দেওয়ার কথা ছিল। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬২ জনকে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একটা বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে। পরে আরও একটা বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি হয়েছে মূলত আতঙ্কের কারণে, ভ্যাকসিনের কারণে না। গত সাত–আট মাস আগেও ভোলায় এমন প্যানিক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল।’
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তারা রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যেই বাসায় চলে গেছে। আমরা মোট ৫৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। এদের মধ্যে টিকা না নিয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ে এমন একজনও ছিল।’
একই প্রসঙ্গে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন খারাপ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। এই শিক্ষার্থীরা মূলত আতঙ্কের কারণে “মাস সাইকোজেনিক ইলনেস” থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে আরও জানান, গতকাল যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তারা সবাই ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছে।
উল্লেখ্য, মাস সাইকোজেনিক ইলনেসের আরেক নাম মাস হিস্টিরিয়া। শব্দটি সাধারণত দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক এবং ভয়ের অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর প্রকৃত সংজ্ঞা কিছুটা জটিল। বিশেষজ্ঞরা সাধারণত মাস হিস্টিরিয়াকে এক ধরনের ‘কনভারশন ডিসঅর্ডার’ হিসেবে বিবেচনা করেন। এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। এতে মানসিক বা আবেগগত চাপের ফলে বিভিন্ন বাহ্যিক বা শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়।
সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মাস হিস্টিরিয়া সমষ্টিগত আচরণের মধ্যে পড়ে, যা সাধারণত একটি বড় জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত এমন সব কার্যক্রমকে বোঝায়, যেখানে তারা পরস্পরের ওপর প্রভাব ফেলে।
সাধারণত মাস হিস্টিরিয়া মৌখিক ও দৃশ্যগতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, আতঙ্কগ্রস্ত কাউকে দেখে বা কোনো আতঙ্কের খবর শুনে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বা তাদের মধ্যে একই লক্ষণ দেখা দেওয়া শুরু করে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এ শব্দটি আরও সাধারণভাবে ব্যবহার করেন এমন পরিস্থিতি বোঝাতে, যেখানে কোনো বাস্তব হুমকি ছাড়াই মানুষ সম্মিলিতভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেমন, ১৯৯৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে ৮০০ স্কুল শিক্ষার্থী টিটেনাসের টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এদের মধ্যে ১০০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাদের দেহে টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পাননি। বাংলাদেশেও মাঝে মধ্যে বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া কিশোরীদের মধ্যে এ ধরনের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে।
২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, টিকার সঙ্গে শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। এটি হতে পারে তাদের নার্ভাস সাইকোজেনিক সমস্যা।
টিকা দেওয়ার পর এমন সমস্যা আরও হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, অসুস্থ শ্রমিকেরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাঁদের কাউকেই দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়নি।
এসব তথ্য ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বক্তব্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত যে, ভোলার বোরহানউদ্দিনে জরায়ুমুখ ক্যানসারের বিষাক্ত ভ্যাকসিনের প্রভাবে স্কুলছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ফেসবুকের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে নারীদের এইচপিভি টিকা নেওয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন দাবি প্রচার করা হয়েছে। এসব পোস্টে দাবি করা হয়, ‘এই টিকা নেওয়ার ফলে নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হবে। ফলে বেশির ভাগ বাচ্চা গর্ভপাত হবে এবং নারী গর্ভধারণে অক্ষম হবে।’ আরেকটি দাবি করা হচ্ছে, ‘এই টিকা কমবয়সীদের দেওয়া হয়। কারণ তাদের ভেতরে শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যার ফলে টিকাটি দ্রুত বিস্তার করে বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ুতে সমস্যা সৃষ্টিকে জোরালো করার সুযোগ পায়।’
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে একাধিক গবেষণা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূত্রে দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট নিজেদের ওয়েবসাইটে এইচপিভি টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানায়, এই টিকা গ্রহণ পরবর্তী টিকা গ্রহণের স্থানে ব্যথা, ফোলা ভাব, লাল ভাব এবং সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এই টিকার সবচেয়ে সাধারণ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো— মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোলার বোরহানউদ্দিনে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চলাকালে অর্ধশত স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এ শিক্ষার্থীদের দেওয়া টিকাগুলো ‘বিষাক্ত’ ছিল। এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় ‘পুতুল জয় পরিষদ TNT’ নামের একটি পেজ থেকে এই দাবিতে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শেয়ার হয়েছে ৩ শতাধিক ও রিয়েকশন পড়েছে ৬ শতাধিক। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২৪ হাজারের বেশি। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
আজকের পত্রিকার ভোলা প্রতিনিধি ও অন্য সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ জ্ঞানদা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ১৬২ ছাত্রীকে বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার পর এক শিক্ষার্থী আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা তাকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ ঘটনার পর একের পর এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাত–পা জ্বালাপোড়া, বমিভাব, মাথা ব্যথা ও মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
এ অসুস্থতা কী ‘বিষাক্ত’ টিকার কারণে?
এ বিষয়ে জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ যোগাযোগ করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিরুপম সরকার সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন খারাপের কোনো ইস্যু ছিল না। প্রত্যেকটা ভ্যাকসিনের এক্সপায়ারি ডেট আছে এবং সবকিছুই ঠিক আছে। এসব ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। এরপর সরকার বিভিন্ন উপজেলায় পাঠায়। আমাদের এখানে যে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে, সেটা তো একই বক্সের। তাই একটা খারাপ হবে আরেকটা ভালো হবে— বিষয়টা এমন না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ওখানে ২৭২ জনকে দেওয়ার কথা ছিল। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬২ জনকে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একটা বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে। পরে আরও একটা বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি হয়েছে মূলত আতঙ্কের কারণে, ভ্যাকসিনের কারণে না। গত সাত–আট মাস আগেও ভোলায় এমন প্যানিক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল।’
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তারা রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যেই বাসায় চলে গেছে। আমরা মোট ৫৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। এদের মধ্যে টিকা না নিয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ে এমন একজনও ছিল।’
একই প্রসঙ্গে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন খারাপ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। এই শিক্ষার্থীরা মূলত আতঙ্কের কারণে “মাস সাইকোজেনিক ইলনেস” থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে আরও জানান, গতকাল যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তারা সবাই ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছে।
উল্লেখ্য, মাস সাইকোজেনিক ইলনেসের আরেক নাম মাস হিস্টিরিয়া। শব্দটি সাধারণত দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক এবং ভয়ের অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর প্রকৃত সংজ্ঞা কিছুটা জটিল। বিশেষজ্ঞরা সাধারণত মাস হিস্টিরিয়াকে এক ধরনের ‘কনভারশন ডিসঅর্ডার’ হিসেবে বিবেচনা করেন। এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। এতে মানসিক বা আবেগগত চাপের ফলে বিভিন্ন বাহ্যিক বা শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়।
সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মাস হিস্টিরিয়া সমষ্টিগত আচরণের মধ্যে পড়ে, যা সাধারণত একটি বড় জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত এমন সব কার্যক্রমকে বোঝায়, যেখানে তারা পরস্পরের ওপর প্রভাব ফেলে।
সাধারণত মাস হিস্টিরিয়া মৌখিক ও দৃশ্যগতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, আতঙ্কগ্রস্ত কাউকে দেখে বা কোনো আতঙ্কের খবর শুনে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বা তাদের মধ্যে একই লক্ষণ দেখা দেওয়া শুরু করে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এ শব্দটি আরও সাধারণভাবে ব্যবহার করেন এমন পরিস্থিতি বোঝাতে, যেখানে কোনো বাস্তব হুমকি ছাড়াই মানুষ সম্মিলিতভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেমন, ১৯৯৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে ৮০০ স্কুল শিক্ষার্থী টিটেনাসের টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এদের মধ্যে ১০০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাদের দেহে টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পাননি। বাংলাদেশেও মাঝে মধ্যে বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া কিশোরীদের মধ্যে এ ধরনের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে।
২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, টিকার সঙ্গে শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। এটি হতে পারে তাদের নার্ভাস সাইকোজেনিক সমস্যা।
টিকা দেওয়ার পর এমন সমস্যা আরও হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, অসুস্থ শ্রমিকেরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাঁদের কাউকেই দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়নি।
এসব তথ্য ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বক্তব্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত যে, ভোলার বোরহানউদ্দিনে জরায়ুমুখ ক্যানসারের বিষাক্ত ভ্যাকসিনের প্রভাবে স্কুলছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ফেসবুকের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে নারীদের এইচপিভি টিকা নেওয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন দাবি প্রচার করা হয়েছে। এসব পোস্টে দাবি করা হয়, ‘এই টিকা নেওয়ার ফলে নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হবে। ফলে বেশির ভাগ বাচ্চা গর্ভপাত হবে এবং নারী গর্ভধারণে অক্ষম হবে।’ আরেকটি দাবি করা হচ্ছে, ‘এই টিকা কমবয়সীদের দেওয়া হয়। কারণ তাদের ভেতরে শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যার ফলে টিকাটি দ্রুত বিস্তার করে বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ুতে সমস্যা সৃষ্টিকে জোরালো করার সুযোগ পায়।’
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে একাধিক গবেষণা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূত্রে দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট নিজেদের ওয়েবসাইটে এইচপিভি টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানায়, এই টিকা গ্রহণ পরবর্তী টিকা গ্রহণের স্থানে ব্যথা, ফোলা ভাব, লাল ভাব এবং সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এই টিকার সবচেয়ে সাধারণ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো— মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ‘ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দল বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
১ দিন আগেসোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি মন্তব্যে দাবি করা হচ্ছে, সেনাপ্রধান ওয়াকার–উজ–জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনা জনগণের লাশের বন্যা ও মৃত্যু চাননি। তাই তিনি পদত্যাগ না করেই ভারতে চলে যান।
৩ দিন আগেবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রায় ১ মিনিটের একটি বক্তব্যের ভিডিও দীর্ঘদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়ে আসছে। গতকাল শনিবার একই ভিডিও মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স–এ মিহাদ আহমেদ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইট করা হয়। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময় ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায়
৩ দিন আগেছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আলোচনায় টাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গটি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১০০ টাকার নোটের দুটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বাজারে বঙ্গবন্ধুর ছবিমুক্ত নতুন নোট আসতে শুরু করেছে।
৪ দিন আগে