ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মাহফুজ আলম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী ছিলেন। তিনি এ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় চালানো হয়েছে নানা প্রচারণা। এসব প্রচারণার অন্যতম হচ্ছে, মাহফুজ আলম ইসলামি উগ্রপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে। যদিও এমন প্রচারণার কোনো সত্যতাই নেই। সম্প্রতি তিনি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁকে নিয়ে এবার প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক। তার এ দেশে কোনো পূর্ব পুরুষের বংশ পরম্পরায় নেই।’
গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘কামরুল হাসান রানা (Kamrul Hasan Rana)’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন দাবিতে পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটির কমেন্টবক্সে একই অ্যাকাউন্ট থেকে আরও দাবি করা হয়, ‘লক্ষ্মীপুরের রায়পুরায় তার গ্রামের বাড়ি বললেও মূলত সেখানে সে রিফিউজি, মিয়ানমার তার মাতৃভূমি’, ‘হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় জড়িত ছিল এই মাহফুজ, সেখানে জীবন নিয়ে ফেরা একমাত্র জঙ্গি ছিল সে, তারপর আত্মগোপনে যায়, এবং আত্মগোপনে থেকে আগের নাম মাহফুজ বিন আবদুল্লাহ পাল্টে, ছদ্মনাম মাহফুজ আলম নাম দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।’
এটি ছাড়াও আরও বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে দাবিটি ছড়িয়েছে।
দাবিটির উৎস অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চে ইউটিউবে‘Chetona।। চেতনা’ নামের একটি চ্যানেলে ‘ভয়ংকর তথ্য, মাহফুজ আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক।’ শিরোনামে পোস্ট করা একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্টেও সূত্র হিসেবে এই ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে। গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) প্রায় ৯ মিনিটের ভিডিওটি চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়।
ভিডিওটিতে ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক’ দাবিটি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে তথাকথিত ‘ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট’ সূত্রে চ্যানেলটির হাতে ‘ভয়ংকর’ তথ্য এসেছে। ভিডিওটির ৩১ সেকেন্ডের মাথায় কথিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি পড়ে শোনানো হয়।
দাবি করা হয়, ‘মাহফুজ আব্দুল্লাহ তাঁর আসল নাম নয়। সে পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁর আসল বাড়িও কিন্তু লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নয়। সে মূলত ভিনদেশি, মিয়ানমারের। ইন্টারন্যাশনাল জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে তার বেশি যোগাযোগ আছে।’
ভিডিওটিতে মাহফুজ আলমকে হিজবুত তাহরীরের ‘দ্বিতীয় জঙ্গি ব্যাচ’–এর সর্দার দাবি করা হয়। ঢাকায় ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া হোলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে মাহফুজ আলমের সম্পৃক্ততা ছিল এবং হোলি আর্টিজান থেকে জীবন লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়া একমাত্র জঙ্গি তিনি।
ভিডিওটিতে ভয়েস ওভার দেওয়া কণ্ঠটি দাবি করে, মাহফুজ মিয়ানমারের নাগরিক। ছোটকালে তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পাঠানো হয় এবং সেখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাঁকে প্রশিক্ষণ দেয়। একই সময়ে মাহফুজ আলমের নামে মাদ্রাসায় প্রোফাইল তৈরি করা হয়, যাতে তিনি সহজে মাদ্রাসার সনদ পেয়ে যান।
দাবিগুলোর সত্যতা কী?
মাহফুজ আলম আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক— দাবিটির সূত্র হিসেবে ভারতীয় ‘ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চে মাহফুজ আলমকে নিয়ে ভারতীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে হোলি আর্টিজান হামলার সঙ্গেও মাহফুজ আলমের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। বিবিসি বাংলায় হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা নিয়ে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনার পরদিন সকালে কমান্ডো বাহিনীর বিশেষ অভিযানে হামলাকারী পাঁচজন জঙ্গি নিহত হয়।
আদালতের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল পরিকল্পনা করেন তামিম চৌধুরী, যিনি কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে নিহত হন। হোলি আর্টিজানে চালানো কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলেন—রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, সামিউল মোবাশ্বির, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং নিবরাস ইসলাম। এ ছাড়া পরে জঙ্গিবিরোধী অন্য অভিযানগুলোতে নিহত হন— তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান, তানভীর কাদেরী, তারেক রায়হান এবং ছোটো রায়হান।
এ ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হচ্ছেন—জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রাশ, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মামুনুর রশিদ রিপন এবং শরিফুল ইসলাম খালিদ।
চেতনা নামের ইউটিউব চ্যানেলটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যম নয়। চ্যানেলটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ২০২০ সালের এপ্রিলে খোলা হয়েছে এবং যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত হয়।
চ্যানেলটিতে প্রচারিত কনটেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চ্যানেলটিতে চটকদার থাম্বনেইলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেন্টমার্টিনে পর্যটন প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন আলোচিত বিষয়ে মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেন্টমার্টিন হস্তান্তর করতে গোপনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, পাকিস্তান থেকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসা জাহাজে অস্ত্রের চালান ছিল।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে অর্ধ শতক পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চালু হয়। গত ১১ নভেম্বর করাচি বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে প্রথম কোনো জাহাজ। শিপিং লাইন ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কন্টেইনারে ছিল শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করে।
আজকের পত্রিকা গত ১৬ নভেম্বর এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি দেখুন—পাকিস্তানের জাহাজ থেকে চট্টগ্রামে নামল ৩৭০ কন্টেইনার, কী কী পণ্য এল
চলতি মাসের শুরুতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফিরছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সে সময় তাঁকে বিমানবন্দরে হেনস্তা করে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থক। এ ঘটনার একটি ভিডিও চ্যানেলটিতে শেয়ার করে দাবি করা হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে ঘিরে ধরে।
মাহফুজ আলমকে মিয়ানমারের নাগরিক দাবিতে পোস্ট করা ভিডিওটির থাম্বনেইলেও মাহফুজ আলমের এডিটেড ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের ইংরেজি সংস্করণে পাওয়া যায়। সংবাদমাধ্যমটিতে ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে থাম্বনেইলে ব্যবহৃত মূল ছবিটি পাওয়া যায়। গ্রুপ ছবিটির সামনে থাকা ব্যক্তির মুখমণ্ডল এডিট করে সেখানে মাহফুজ আলমের মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাড়িতে সরেজমিন অনুসন্ধান
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দাবিটি অধিকতর যাচাইয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামে সরেজমিন অনুসন্ধানে যান আজকের পত্রিকার রামগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ফারুক হোসেন। মাহফুজ আলম সম্পর্কে অনলাইনে বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান রকমারির ওয়েবসাইটের লেখক প্রোফাইলে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মাহফুজ আলমের জন্ম ১৯৯৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সাত ভাই–বোনের মধ্যে মাহফুজ আলম মেজ। তাঁর বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লা পেশায় ব্যবসায়ী ও রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। মা তানজিলা বেগম গৃহিণী।
মাহফুজ আলম সম্পর্কে সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল মন্নান মোল্লা (৮০) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রয়াত মুনছুর মোল্লার ছেলে প্রয়াত মকবুল আহম্মেদ মোল্লা। মকবুল আহম্মেদ মোল্লার ছেলে আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লার মেজ ছেলে মাহফুজ আলম। ছোটবেলা থেকে মাহফুজ আলম স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। তিনি কখনো কোনো খারাপ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। আমরা গর্বিত, তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন।’
স্থানীয় পূর্ব নারায়ণপুর দারুল কোরআন ইসলামী দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. কামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাহফুজ আলম আমার সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। ৮ম শ্রেণি থেকে তিনি ও তাঁর ভাই ২০১০ সালে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুরো উপজেলায় যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় হন। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী গল্লাক মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাহফুজ আলমের তিন বোনও এই মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করেছেন।’
মাহফুজ আলমের আরেকজন শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মাহফুজ আলম পূর্ব নারায়ণপুর দারুল কোরআন ইসলামী দাখিল মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে অন্য মাদ্রাসায় চলে যান। অত্যন্ত মেধাবী এ শিক্ষার্থীর রোল সব সময় এক ছিল।’
মাহফুজ আলমের এক সহপাঠী সাখাওয়াত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মূলত স্কুলের শিক্ষার্থী হলেও কোরআন শরিফ পড়া শিখতে এ মাদ্রাসায় ভর্তি হই। তখন আমি আর মাহফুজ আলম একত্রে এ মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছি। মাহফুজ আলম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। মাহফুজ আলমের সহপাঠী হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’
স্থানীয় স্কলার’স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রফিক উল্যাহ বলেন, ‘মাহফুজ আলম আমার খুবই পরিচিত এবং এ অঞ্চলের কৃতি সন্তান হিসেবে আমরা তার জন্য গর্ববোধ করি। তার বিরুদ্ধে যারা বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে আমরা সেটির তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা ইছাপুরবাসী গর্ববোধ করি মাহফুজ আলমের মতো একজন রত্ন পেয়েছি।’
মাহফুজ আলমের বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লা বর্তমানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আজ সোমবার রাতে বাড়ি ফিরবেন জানিয়ে সেলফোনে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেজ ছেলে মাহফুজ আলমের যে কোনো বিষয়ে জানতে আপনারা এলাকায় যেতে পারেন। এলাকার লোকজনের দোয়া–আদর ও ভালোবাসায় আমার ছেলে আজ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন।’
এসব কিছুই প্রমাণ করে, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মাহফুজ আলম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী ছিলেন। তিনি এ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় চালানো হয়েছে নানা প্রচারণা। এসব প্রচারণার অন্যতম হচ্ছে, মাহফুজ আলম ইসলামি উগ্রপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে। যদিও এমন প্রচারণার কোনো সত্যতাই নেই। সম্প্রতি তিনি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁকে নিয়ে এবার প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক। তার এ দেশে কোনো পূর্ব পুরুষের বংশ পরম্পরায় নেই।’
গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘কামরুল হাসান রানা (Kamrul Hasan Rana)’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন দাবিতে পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটির কমেন্টবক্সে একই অ্যাকাউন্ট থেকে আরও দাবি করা হয়, ‘লক্ষ্মীপুরের রায়পুরায় তার গ্রামের বাড়ি বললেও মূলত সেখানে সে রিফিউজি, মিয়ানমার তার মাতৃভূমি’, ‘হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় জড়িত ছিল এই মাহফুজ, সেখানে জীবন নিয়ে ফেরা একমাত্র জঙ্গি ছিল সে, তারপর আত্মগোপনে যায়, এবং আত্মগোপনে থেকে আগের নাম মাহফুজ বিন আবদুল্লাহ পাল্টে, ছদ্মনাম মাহফুজ আলম নাম দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।’
এটি ছাড়াও আরও বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে দাবিটি ছড়িয়েছে।
দাবিটির উৎস অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চে ইউটিউবে‘Chetona।। চেতনা’ নামের একটি চ্যানেলে ‘ভয়ংকর তথ্য, মাহফুজ আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক।’ শিরোনামে পোস্ট করা একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্টেও সূত্র হিসেবে এই ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে। গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) প্রায় ৯ মিনিটের ভিডিওটি চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়।
ভিডিওটিতে ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক’ দাবিটি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে তথাকথিত ‘ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট’ সূত্রে চ্যানেলটির হাতে ‘ভয়ংকর’ তথ্য এসেছে। ভিডিওটির ৩১ সেকেন্ডের মাথায় কথিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি পড়ে শোনানো হয়।
দাবি করা হয়, ‘মাহফুজ আব্দুল্লাহ তাঁর আসল নাম নয়। সে পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁর আসল বাড়িও কিন্তু লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নয়। সে মূলত ভিনদেশি, মিয়ানমারের। ইন্টারন্যাশনাল জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে তার বেশি যোগাযোগ আছে।’
ভিডিওটিতে মাহফুজ আলমকে হিজবুত তাহরীরের ‘দ্বিতীয় জঙ্গি ব্যাচ’–এর সর্দার দাবি করা হয়। ঢাকায় ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া হোলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে মাহফুজ আলমের সম্পৃক্ততা ছিল এবং হোলি আর্টিজান থেকে জীবন লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়া একমাত্র জঙ্গি তিনি।
ভিডিওটিতে ভয়েস ওভার দেওয়া কণ্ঠটি দাবি করে, মাহফুজ মিয়ানমারের নাগরিক। ছোটকালে তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পাঠানো হয় এবং সেখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাঁকে প্রশিক্ষণ দেয়। একই সময়ে মাহফুজ আলমের নামে মাদ্রাসায় প্রোফাইল তৈরি করা হয়, যাতে তিনি সহজে মাদ্রাসার সনদ পেয়ে যান।
দাবিগুলোর সত্যতা কী?
মাহফুজ আলম আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক— দাবিটির সূত্র হিসেবে ভারতীয় ‘ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চে মাহফুজ আলমকে নিয়ে ভারতীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে হোলি আর্টিজান হামলার সঙ্গেও মাহফুজ আলমের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। বিবিসি বাংলায় হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা নিয়ে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনার পরদিন সকালে কমান্ডো বাহিনীর বিশেষ অভিযানে হামলাকারী পাঁচজন জঙ্গি নিহত হয়।
আদালতের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল পরিকল্পনা করেন তামিম চৌধুরী, যিনি কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে নিহত হন। হোলি আর্টিজানে চালানো কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলেন—রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, সামিউল মোবাশ্বির, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং নিবরাস ইসলাম। এ ছাড়া পরে জঙ্গিবিরোধী অন্য অভিযানগুলোতে নিহত হন— তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান, তানভীর কাদেরী, তারেক রায়হান এবং ছোটো রায়হান।
এ ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হচ্ছেন—জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রাশ, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মামুনুর রশিদ রিপন এবং শরিফুল ইসলাম খালিদ।
চেতনা নামের ইউটিউব চ্যানেলটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যম নয়। চ্যানেলটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ২০২০ সালের এপ্রিলে খোলা হয়েছে এবং যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত হয়।
চ্যানেলটিতে প্রচারিত কনটেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চ্যানেলটিতে চটকদার থাম্বনেইলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেন্টমার্টিনে পর্যটন প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন আলোচিত বিষয়ে মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেন্টমার্টিন হস্তান্তর করতে গোপনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, পাকিস্তান থেকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসা জাহাজে অস্ত্রের চালান ছিল।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে অর্ধ শতক পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চালু হয়। গত ১১ নভেম্বর করাচি বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে প্রথম কোনো জাহাজ। শিপিং লাইন ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কন্টেইনারে ছিল শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করে।
আজকের পত্রিকা গত ১৬ নভেম্বর এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি দেখুন—পাকিস্তানের জাহাজ থেকে চট্টগ্রামে নামল ৩৭০ কন্টেইনার, কী কী পণ্য এল
চলতি মাসের শুরুতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফিরছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সে সময় তাঁকে বিমানবন্দরে হেনস্তা করে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থক। এ ঘটনার একটি ভিডিও চ্যানেলটিতে শেয়ার করে দাবি করা হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে ঘিরে ধরে।
মাহফুজ আলমকে মিয়ানমারের নাগরিক দাবিতে পোস্ট করা ভিডিওটির থাম্বনেইলেও মাহফুজ আলমের এডিটেড ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের ইংরেজি সংস্করণে পাওয়া যায়। সংবাদমাধ্যমটিতে ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে থাম্বনেইলে ব্যবহৃত মূল ছবিটি পাওয়া যায়। গ্রুপ ছবিটির সামনে থাকা ব্যক্তির মুখমণ্ডল এডিট করে সেখানে মাহফুজ আলমের মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাড়িতে সরেজমিন অনুসন্ধান
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দাবিটি অধিকতর যাচাইয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামে সরেজমিন অনুসন্ধানে যান আজকের পত্রিকার রামগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ফারুক হোসেন। মাহফুজ আলম সম্পর্কে অনলাইনে বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান রকমারির ওয়েবসাইটের লেখক প্রোফাইলে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মাহফুজ আলমের জন্ম ১৯৯৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সাত ভাই–বোনের মধ্যে মাহফুজ আলম মেজ। তাঁর বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লা পেশায় ব্যবসায়ী ও রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। মা তানজিলা বেগম গৃহিণী।
মাহফুজ আলম সম্পর্কে সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল মন্নান মোল্লা (৮০) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রয়াত মুনছুর মোল্লার ছেলে প্রয়াত মকবুল আহম্মেদ মোল্লা। মকবুল আহম্মেদ মোল্লার ছেলে আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লার মেজ ছেলে মাহফুজ আলম। ছোটবেলা থেকে মাহফুজ আলম স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। তিনি কখনো কোনো খারাপ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। আমরা গর্বিত, তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন।’
স্থানীয় পূর্ব নারায়ণপুর দারুল কোরআন ইসলামী দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. কামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাহফুজ আলম আমার সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। ৮ম শ্রেণি থেকে তিনি ও তাঁর ভাই ২০১০ সালে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুরো উপজেলায় যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় হন। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী গল্লাক মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাহফুজ আলমের তিন বোনও এই মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করেছেন।’
মাহফুজ আলমের আরেকজন শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মাহফুজ আলম পূর্ব নারায়ণপুর দারুল কোরআন ইসলামী দাখিল মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে অন্য মাদ্রাসায় চলে যান। অত্যন্ত মেধাবী এ শিক্ষার্থীর রোল সব সময় এক ছিল।’
মাহফুজ আলমের এক সহপাঠী সাখাওয়াত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মূলত স্কুলের শিক্ষার্থী হলেও কোরআন শরিফ পড়া শিখতে এ মাদ্রাসায় ভর্তি হই। তখন আমি আর মাহফুজ আলম একত্রে এ মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছি। মাহফুজ আলম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। মাহফুজ আলমের সহপাঠী হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’
স্থানীয় স্কলার’স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রফিক উল্যাহ বলেন, ‘মাহফুজ আলম আমার খুবই পরিচিত এবং এ অঞ্চলের কৃতি সন্তান হিসেবে আমরা তার জন্য গর্ববোধ করি। তার বিরুদ্ধে যারা বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে আমরা সেটির তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা ইছাপুরবাসী গর্ববোধ করি মাহফুজ আলমের মতো একজন রত্ন পেয়েছি।’
মাহফুজ আলমের বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লা বর্তমানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আজ সোমবার রাতে বাড়ি ফিরবেন জানিয়ে সেলফোনে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেজ ছেলে মাহফুজ আলমের যে কোনো বিষয়ে জানতে আপনারা এলাকায় যেতে পারেন। এলাকার লোকজনের দোয়া–আদর ও ভালোবাসায় আমার ছেলে আজ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন।’
এসব কিছুই প্রমাণ করে, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিয়ানমারের নাগরিক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
নোয়াখালী সদর উপজেলার দুই নং দাদপুর নলুয়া বাজার এলাকায় তিন যুবলীগ নেতা–কর্মী নির্যাতন করে হত্যা করার দাবিতে ফেসবুকে বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিগুলোর একটিতে দেখা যাচ্ছে, তিন ব্যক্তিকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন প্রায় অর্ধনগ্ন। একটিতে ছবিতে একজনের চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ছবিতে কিরিচ ও
৭ ঘণ্টা আগেফ্যাক্টচেক, সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভাইরাল, ভুয়া পোস্ট, সংঘর্ষ, রাজধানী, সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ, রিকশা
১ দিন আগেদীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
১ দিন আগেআজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
২ দিন আগে