‘রাসেলস ভাইপার’ বলে মারা হচ্ছে ভিন্ন প্রজাতির সাপ, ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে সংবাদমাধ্যমও

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৪, ২১: ০৯
Thumbnail image

নীলফামারীর জলঢাকায় ২৯টি বাচ্চাসহ একটি রাসেলস ভাইপার মারা হয়েছে দাবিতে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম গত সোমবার (২৪ জুন) কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব সংবাদমাধ্যমের মধ্যে আছে কালবেলা, দেশ রূপান্তর, জাগোনিউজ ২৪, জনকণ্ঠ, নয়াদিগন্তসহ একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়, সোমবার বেলা ১১টায় জলঢাকার কৈমারী ইউনিয়নের আলশিয়াপাড়া তিস্তার বাঁধে একটি নৌকার নিচ রাসেলস ভাইপার সাপটির দেখা মেলে। পরে স্থানীয়রা খোঁচা দিয়ে সাপটিকে মেরে ফেলে। মেরে ফেলার পর সাপটির পেট থেকে একে একে ২৯টি বাচ্চা বের করা হয়।

তবে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নীলফামারীর জলঢাকায় বাচ্চাসহ মেরে ফেলা সাপটি রাসেলস ভাইপার নয়। রাসেলস ভাইপারের সঙ্গে মেরে ফেলা সাপটির দৈহিক গঠনে পার্থক্য রয়েছে। রাসেলস ভাইপার সাপের দৈহিক গঠনে ফ্যাকাশে কমলা বাদামি রঙের পিঠের ওপর লালচে বাদামি রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত দেখা যায়। যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শিকলের মতো চলে গেছে। নীলফামারীতে রাসেলস ভাইপার দাবিতে মেরে ফেলা সাপটির দৈহিক গঠনে এমন কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। 

রাসেলস ভাইপারের সঙ্গে সাইবোল্ডের পাইন্না সাপের তুলনা। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগবরং মারা পড়া সাপটির সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সাইবোল্ডের পাইন্না সাপের সঙ্গে। সাপটির প্রজাতিগত নাম ‘সাইবোল্ডি’, জার্মান উদ্ভিদবিদ এবং চিকিৎসক ফিলিপ ফ্রাঞ্জ ভন সাইবোল্ডের সম্মানে সাপটির এই নামকরণ করা হয়েছে। 

প্রাণীবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘অ্যানিমালিয়া’র ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সাপটির পিঠে অজগরের মতোই বড় বড় দাগের প্যাটার্ন রয়েছে। সাইবোল্ডের পাইন্না সাপ লেজসহ ৮৯ সেন্টিমিটার (৩৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে দৈর্ঘ্য (লেজ সহ) অর্জন করতে পারে। সাপটি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও নেপাল অঞ্চলে দেখা যায়। 

‘ইন্ডিয়ান স্নেকস’ নামে সাপ বিষয়ক আরেকটি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, সাইবোল্ডের পাইন্না সাপের দেহ চকচকে মসৃণ আঁশ দিয়ে আবৃত এবং সংকুচিত লেজ দিয়ে শেষ হয়। এর ওপরের অংশটি প্রধানত গাঢ় জলপাই সবুজ বা বাদামি বর্ণের হয় এবং সারা শরীরে হালকা রঙের অপ্রতিসম সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ ব্যান্ড থাকে। এই ব্যান্ডগুলো সাধারণত দেহের পাশের দিকে প্রশস্ত হয়। বিষের দিক থেকে এটি মৃদু বিষধর। এসব বর্ণনার সঙ্গে নীলফামারীতে মেরে ফেলা সাপটির দেহের মিল রয়েছে। 

সাইবোল্ডের পাইন্না সাপের ছবি। ছবি: ইন্ডিয়ান স্নেকস বিষয়টি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হতে বন্য প্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তাঁকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলো দেখানো হয়। ছবিগুলো দেখে তিনি নিশ্চিত করেন, এটি সাইবোল্ডের পাইন্না সাপ। 

বন্য প্রাণী ও সাপ সংরক্ষণে কাজ করা নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিপ ইকোলজি এবং স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাহফুজুর রহমানও আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে নিশ্চিত করেন, এটি সাইবোল্ডের পাইন্না সাপ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত