প্যালিয়েটিভ কেয়ার হোক সামাজিক আন্দোলন

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ০০
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ০৪

আজ ১২ অক্টোবর, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অধ্যাদেশের দশ বছর! কতটুকু এগোলাম আমরা।’

এই দিবসের মূল লক্ষ্য হলো ভালোভাবে বাঁচা এবং ভালোভাবে মারা যাওয়ার মধ্যকার স্বাস্থ্যজনিত ভোগান্তিদূর করার চেষ্টা করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ প্যালিয়েটিভ কেয়ার পায়। প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় যে রোগ কোনো দিন ভালো হবে না এবং মানুষটি ধীরে ধীরে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে, সেই মানুষের রোগমুক্তি নয় বরং ভোগান্তি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর পরিবারের যত্নের বিজ্ঞানসম্মত উপাত্তনির্ভর চিকিৎসাব্যবস্থা হলো প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এই উদ্যোগ নিরাময় অযোগ্য রোগী এবং তার পরিবারের জীবনের গুণগত মান বাড়ায়। প্রাথমিক পর্যায়ে জীবন সীমিতকারী রোগ শনাক্তকরণ, তা প্রতিরোধ ও ভোগান্তি কমানো এবং নিখুঁত বিশ্লেষণসহ ব্যথা ও অন্যান্য শারীরিক মনোসামাজিক এবং আত্মিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। এসব সেবা রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এবং রোগীকে এই রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হোক বা না হোক, প্যালিয়েটিভ সেবা চলতে থাকে।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার কী কী করে

  • ব্যথা ও অন্যান্য পীড়াদায়ক লক্ষণ থেকে মুক্তি দেয়।
  • জীবনের গুণগত মান বাড়ায় এবং মৃত্যুকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে।
  • মৃত্যুকে এটি ত্বরান্বিত বা দীর্ঘায়িত কোনোটিই করে না।
  • রোগীর মানসিক ও আত্মিক যত্নের সমন্বয় সাধন করে।
  • রোগীকে আমৃত্যু যথাসম্ভব সচল রাখতে সাহায্য করে।
  • রোগীর পরিবারকে তার অসুস্থতা ও তার বিয়োগে শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
  • রোগী ও তার পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী দলীয়ভাবে সেবা দিয়ে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে আপনজন হারানোর শোক কাটানোর জন্য বেরিভমেন্ট কাউন্সেলিং দেয়। 

২০১৪ সালের ১৯ মের অধ্যাদেশ অনুসারে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় গৃহসেবায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অন্তর্ভুক্তিকে বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

 বাংলাদেশ ডব্লিউএইচও রেজল্যুশন ৬৭.১৭ স্বাক্ষর করে ২০১৪ সালে। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এটি একটি বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে ১০ থেকে ১২টি বেসরকারি সংস্থা এই সেবা প্রদান করে, যেগুলোর বেশির ভাগ ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকারি হাসপাতালগুলোয় এ জন্য ১০০টির কম শয্যা বরাদ্দ আছে।

বিশেষজ্ঞদের কাছে চিন্তার বিষয় হলো, ক্যানসার প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সব থেকে বড় রোগ ছিল একসময়। বর্তমানে ডিমেনশিয়া একে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি ৩ সেকেন্ডে পৃথিবীতে একজন মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে প্রবীণ জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটবে। সেই সঙ্গে প্রাদুর্ভাব ঘটবে ডিমেনশিয়া রোগটির।

কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য খুবই জরুরি প্রয়োজন একটি সমন্বিত প্যালিয়েটিভ কেয়ার ব্যবস্থা। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে কাজ করা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে চিকিৎসাব্যবস্থায় আবদ্ধ না রেখে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন: অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া সদস্যসচিব, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত