Ajker Patrika

বাংলাদেশ-ভারতসহ এশিয়ার ৪ দেশের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ১১
বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের সময় কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেন না। ছবি: এশিয়া–প্যাসিফিক কৃষি গবেষণা সংস্থা
বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের সময় কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেন না। ছবি: এশিয়া–প্যাসিফিক কৃষি গবেষণা সংস্থা

অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস ও ভিয়েতনামে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সবজি ও পানিতে আশঙ্কাজনক মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত উপাদান। সম্প্রতি পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া প্যাসিফিকের (পানাপ) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়ংকর এই তথ্য। গতকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে প্রকাশ করা হয়েছে নতুন এই প্রতিবেদন।

‘সোয়িং হার্ম: দ্য মাল্টিফেসিটেড ইমপ্যাক্ট অব পেস্টিসাইডস ইন ফোর কানট্রিজ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণাধীন চার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশকের উপাদান পাওয়া গেছে লাওসের খাবারে; ৯০ শতাংশের বেশি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। দেশটির প্রায় ৭৪ শতাংশ খাদ্যপণ্যে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে। এই হার বাংলাদেশের খাবারে ৪৬ শতাংশ। এসব দেশে বিশেষ করে সবজি, চাল ও দুধে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর কীটনাশক। দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে এসব বিষাক্ত উপাদান।

পানাপের গবেষণা অনুযায়ী, কৃষক, নারী ও শিশুরা—যারা এসব বিষাক্ত উপাদানের সংস্পর্শে আসছে, তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ফসল ও সবজিতে তো সরাসরিই প্রয়োগ করা হয় এই বিষ। পরে তা বাতাসে ভেসে, বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে এবং মাটির সঙ্গে মিশে পানি ও পুরো বাস্তুতন্ত্র এবং এমনকি ধূলিকেও বিষাক্ত করে তুলছে। যেখানে এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই ফসল উৎপাদন সম্ভব।

লাওসে এক জরিপে উঠে এসেছে, দেশটিতে নিয়মিত সবজি খান—এমন মানুষদের মধ্যে ৪২ শতাংশই কলিনেস্টারেজ ইনহিবিশনে আক্রান্ত। এটি এমন এক ধরনের শারীরিক অসুস্থতা, যার কারণে অনিদ্রা, বমি, মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন অসুবিধা হতে পারে; যা পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের রোগ তৈরি করতে পারে। মূলত অর্গানোফসফেট ও কার্বামেট কীটনাশকের প্রভাবে কলিনেস্টারেজ ইনহিবিশন হয়।

ভারতে দুধ ও এলাচিতেও পাওয়া গেছে অতিরিক্ত মাত্রার কীটনাশক, যা খাদ্যনিরাপত্তাকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

শিগগির ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুরো অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানাপ। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কীটনাশক নিষিদ্ধ করা, কৃষকদের নিরাপদ কৃষিপদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেওয়া, নারীদের ও শিশুদের ওপর প্রভাব নিয়ে গবেষণায় জোর দেওয়া, খাদ্যে কীটনাশকের মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া প্যাসিফিক।

পানাপের প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ড. মেরিয়েল ওয়াটস বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত পরিষ্কারভাবে বলছে, কীটনাশকের প্রভাবে বিষক্রিয়া, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও পরিবেশদূষণের মহামারি দেখা দিচ্ছে। এখনই সময়, সরকারকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কৃষিকে বিষমুক্ত করার পথে এগোতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত