Ajker Patrika

জীবনের প্রথম ৩ বছর চিনি না খেলে রোগের ঝুঁকি কমে

ফিচার ডেস্ক  
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮: ৩৮
জীবনের প্রথম ৩ বছর চিনি না খেলে রোগের ঝুঁকি কমে

জীবনের প্রথম এক হাজার দিন বা প্রায় তিন বছর চিনি না খেলে যেকোনো ধরনের রোগের ঝুঁকি কমে। নতুন এক গবেষণায় তেমনটিই জানিয়েছেন গবেষকেরা।

প্রতিদিন হোক বা উৎসব আয়োজন, চিনিযুক্ত খাবার বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে। অথচ আমাদের জানা, চিনি হলো মানুষের অনেক রোগের কারণ। তাই চিনিকে বলা হয় হোয়াইট পয়জন বা সাদা বিষ।

চিনিযুক্ত খাবার শিশুরা বিশেষ পছন্দ করে। মায়ের দুধের পর শিশুরা যখন অন্য খাবার শুরু করে, তখন থেকে তাদের চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু। এ শুরুর আর শেষ নেই; বরং দিনে দিনে বাড়তে থাকে চিনি খাওয়ার প্রবণতা।

কিন্তু গবেষণা বলছে, শিশুকে যদি জীবনের প্রথম ১ হাজার দিন বা প্রায় তিন বছর চিনি থেকে দূরে রাখা যায়, তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স জার্নালে’ প্রকাশিত এক গবেষণা এমন কথাই বলছে।

গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, গর্ভধারণ থেকে দুই বছর পর্যন্ত যদি শিশুকে চিনি থেকে দূরে রাখা যায়, তবে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায় ৩৫ শতাংশ। শুরুতেই যদি চিনি থেকে শিশুকে দূরে রাখা না যায়, তবে পরবর্তী জীবনে এর আসক্তি বাড়তে থাকবে।

গবেষক দল যুক্তরাজ্যে ১৯৫৩ সালের আগে ও পরে জন্ম হওয়া শিশুদের নিয়ে একটি সমীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় যুক্তরাজ্যে চিনিসহ বেশ কিছু খাবার কেনার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি চিনি কেউ কিনতে পারত না। কিন্তু ১৯৫৩ সালে এই অস্থায়ী আইন উঠে যায়। এতে চিনি খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। এ সময় প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক চিনির ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

ইউকে বায়োব্যাংকের স্বাস্থ্য তথ্য থেকে গবেষকেরা এমন তথ্য পান। এই সংস্থা বায়োমেডিকেল ডেটাবেইস তৈরি ও গবেষণা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি ৬ বছর ধরে ১৯৫১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫৬ সালের মার্চের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ হাজার ১৮৩ জনের ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে।

গবেষণায় দেখা যায়, চিনি কেনার পরিমাণ যে সময় নির্দিষ্ট ছিল, সে সময় জন্মানো শিশুদের মধ্যে স্থূলতার ঝুঁকি কমেছে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে চিনি কেনার পরিমাণ বাড়ার পর যারা জন্মেছে, তাদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়েছে।

এ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক গবেষণা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ তাদেজা গ্র্যাকনা সিএনএনকে বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যে চিনির সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা গবেষণার জন্য একটি প্রাকৃতিক উদাহরণ পেয়েছি।’

টেনেসি হেলথ সায়েন্স সেন্টারের পেডিয়াট্রিকসের অধ্যাপক ড. মার্ক কর্কিনস বলেন, ‘অনেক বছর থেকে মিষ্টির স্বাদের

জন্য মানুষ ফলের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে চিনিযুক্ত খাবারের আসক্তি তৈরি হয়। মানুষ এখন একটি ফলের চেয়ে সেই দাম দিয়ে চকলেট খেতেপছন্দ করে।’

কিন্তু শিশুকাল থেকে; বিশেষ করে জীবনের প্রথম ১ হাজার দিন চিনি না খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করা গেলে জীবনে অনেক রোগের চিকিৎসারই দরকার নেই বলে মনে করেন গবেষকেরা।

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত