Ajker Patrika

অসময়ে ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন

সাবিত আল হোসেন
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ৩৫
অসময়ে ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন

আজকের পত্রিকা: রমজানজুড়ে প্রতিবছর দেশে নানান ধরনের খাবারের পসরা দেখা যায়। বাস্তবে এসব খাবার রোজাদারদের জন্য কতটা উপাদেয়?
মো. আব্দুল ওয়াদুদ: এসব খাবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি মসলাযুক্ত, অতিরিক্ত তেলে ভাজা এবং কৃত্রিম রঙে ভরপুর ও মুখরোচক। এগুলো মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এই খাবারের ফলে অ্যাসিডিটি, বদহজম, ওজন বৃদ্ধিসহ নানান শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এগুলো বাদ দিয়ে কম মসলাযুক্ত, বেশি আঁশসমৃদ্ধ সুষম খাবার খেতে হবে।

আজকের পত্রিকা: দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে সাহরিতে ভাত এবং ইফতারে ভাজাপোড়া খেয়ে আসছেন রোজাদারেরা। এই অভ্যাস কতটা প্রশান্তিদায়ক?
মো. আব্দুল ওয়াদুদ: আমাদের দেশের মানুষ ঐতিহ্য ও আবহাওয়া বিবেচনায় সাহরিতে ভাত খেয়ে থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস যেন না হয়। সাহরিতে আমিষ ও আঁশযুক্ত খাবার, যেমন লাল চাল, লাল আটা, শাক-সবজি, বিচিজাতীয় খাদ্য; যেমন শিমের বিচি, মটরশুঁটি, ডাল খেতে হবে। এ ছাড়া ডিম, দুধ ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখা ভালো। কারণ আমিষ ও আঁশজাতীয় খাবার ধীরে হজম হয়, ফলে ক্ষুধা অনুভব কম হয় এবং পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ইফতারে ভাজাপোড়া ও তেলজাতীয় খাবার আমাদের দেশের মানুষের ঐতিহ্য। তবে সুস্বাস্থের জন্য অবশ্যই ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে সহজপাচ্য, তরল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। তা না হলে দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে বেশি মসলাযুক্ত ভাজাপোড়া খাবারে অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আজকের পত্রিকা: গরমকাল বিবেচনায় রোজাদারেরা কোন ধরনের খাবার সাহরিতে খেতে পারেন বা খাওয়া উচিত?
 মো. আব্দুল ওয়াদুদ: মার্চ-এপ্রিল সময়টা বছরের উষ্ণতম সময়। ফলে প্রচুর ঘাম হয়। এতে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। এ কারণে মানুষ সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রোজায় পানিশূন্যতা রোধে সহজে হজম হয় এমন শাকসবজি, যেমন লাউ, ঝিঙে, পটোল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া প্রভৃতি অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। বিরিয়ানি-খিচুড়ি মসলাযুক্ত খাবার হজমে প্রচুর পানি পরিশোষণ হয়; যার কারণে রোজাদার তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়তে পারেন। ফলে এই খাবারগুলো বর্জন করতে হবে। এ ছাড়া সাহরিতে চা ও কফি পান না করাই ভালো। এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন তৃষ্ণার সৃষ্টি করে, অ্যাসিডিটি উৎপন্ন করে এবং খাদ্যের পুষ্টি পরিশোষণে বাধা দেয়।

আজকের পত্রিকা: এ সময় ইফতারে কোন ধরনের খাবার রাখা উচিত?
 মো. আব্দুল ওয়াদুদ: রোজায় দীর্ঘ বিরতিতে না খেয়ে থাকার ফলে শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়। এ জন্য সহজপাচ্য রসালো ও তরলজাতীয় খাবার দিয়ে ইফতারি শুরু করা উচিত। ঘরে তৈরি তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল প্রভৃতি খাওয়া যেতে পারে, যা দেহের পানি ও লবণের (ইলেকট্রোলাইট) ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করবে। এ ছাড়া যেকোনো মিষ্টি ফল—যেমন খেজুর, তরমুজ, কলা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে, যা দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করবে। পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয় এমন খাবার ইফতারে রাখা যেতে পারে, যেমন সেদ্ধ ছোলা, দই-চিড়া, সবজিখিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং শসা-টমেটোর মিশ্রিত সালাদ প্রভৃতি। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে মূল খাবার শুরু করা উচিত।

আজকের পত্রিকা: আজকাল ফলের ওপর মানুষের ভরসা কমে যাচ্ছে। এর সমাধান কী? 
মো. আব্দুল ওয়াদুদ: প্রতিদিন একজন মানুষের ১০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। এ জন্য জনগণকে ফল খেতে উৎসাহিত করতে হবে। অনেকেরই ধারণা, ফল সতেজ রাখার জন্য তাতে ফরমালিন মেশানো হয়। প্রাকৃতিকভাবেই ফলে ফরমালিন থাকে বিধায় আলাদা করে এর ব্যবহার কোনো প্রকার প্রভাব ফেলে না। তা ছাড়া ফরমালিন একটি উদ্বায়ী পদার্থ, যা সহজেই বাতাসে মিশে যায়। দীর্ঘ সময় ফল সতেজ রাখার জন্য অথবা পাকানোর জন্য অনুমোদিত ফুড গ্রেডের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় অননুমোদিত রাসায়নিক ব্যাবহার করে থাকেন, যা স্বাস্থ্যে জন্য ক্ষতিকর। এটি রোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশীয় কিছু ফল, যেমন—কলা, পেয়ারা ইত্যাদি সারা বছর পাওয়া যায় এবং এগুলো দামেও সস্তা। এই ফলগুলো নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। অন্যান্য দেশীয় মৌসুমি ফল ভরা মৌসুমে নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। মৌসুমের শুরুতে অথবা অসময়ে ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

আজকের পত্রিকা: ইফতারে কোন পানীয় গ্রহণযোগ্য আর কোন পানীয় বর্জনীয়? 
মো. আব্দুল ওয়াদুদ: স্বাভাবিক অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৭ থেকে ১৪ গ্লাস নিরাপদ পানি পান করা উচিত। ভালো পানীয় হচ্ছে আমরা সাধারণত সব সময় যে পানি পান করি। ইফতারে পানি পানের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন—সারা দিন রোজা রাখার পর খালি পেটে একসঙ্গে অনেক পানি বা শরবত পান করা উচিত নয়। একটু ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে পানি পান করা ভালো। এ ছাড়া সাধারণ পানির বাইরে উপকারী পানীয় হলো ইসপগুল, তোকমা, চিয়া সিড ইত্যাদি দিয়ে তৈরি শরবত, টক দইয়ের শরবত, মাঠা, লেবু, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি। কারণ, এ ধরনের শরবত সারা দিনের পানির চাহিদা পূরণ করে। একই সঙ্গে ভিটামিন আর মিনারেলেরও জোগান দেয়। ফলে আমরা খুব সহজেই সতেজ বোধ করি।

বর্জনীয় হিসেবে সব ধরনের কোমল বা সোডা পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত শরবত, জুস ইত্যাদি। সোডাজাতীয় পানীয় আমাদের খুব দ্রুত পানিশূন্য করে তোলে। এ ছাড়া বাসায় তৈরি শরবত বা ফলের জুসে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার না করা ভালো। আবার অনেকে ইফতারের সময় ফ্রিজে পানি রেখে ঠান্ডা করে খেতে পছন্দ করেন। এ বিষয়েও সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এখন প্রচুর গরম, এর মধ্যে হুট করে বেশি ঠান্ডা পানি খেলে শরীরে অনেক সময় বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। মনে রাখতে হবে, সারা দিন রোজা রাখার পর শরীরে যে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, সেটি পূরণ করতে ইফতারের পর থেকে সাহরির আগ পর্যন্ত ৭ থেকে ১৪ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: রোজা এলেই অনেকের অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়। এর পেছনে আসলে কোন খাবার দায়ী, নাকি অন্য কোনো সমস্যা? 
মো. আব্দুল ওয়াদুদ: সাধারণত অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে এবং সাহরিতে বেশি মসলাযুক্ত খাবার খেলে অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়। এ ছাড়া চা ও কফি পান, দুশ্চিতা, ধূমপান এবং অনিদ্রার কারণেও অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম ও শারীরিক সক্রিয়তা এ ক্ষেত্রে কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে।

আজকের পত্রিকা: কর্মজীবী নারী ও পুরুষের জন্য কোন ধরনের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেবেন?  
মো. আব্দুল ওয়াদুদ: কর্মজীবী নারী ও পুরুষকে কর্মের তাগিদে প্রতিদিনই বাইরে যেতে হয়। সে জন্য তাঁদের বেশি ক্যালরি খরচ হয় এবং শরীরে প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়। তাই কর্মজীবীদের উচ্চ ক্যালরি, আমিষ ও আঁশযুক্ত এবং সহজপাচ্য সুষম খাবার সাহরি ও ইফতারের সময় খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের শরবত, সামর্থ্য অনুয়ায়ী দেশীয় ফল, পাতলা সবজিখিচুড়ি, ছোলা-মুড়ি, ডিম, দুধ কিংবা দুধজাত খাবার, বিভিন্ন ধলনের শাক, বিচি জাতীয়শস্য, ছোট-বড় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ইত্যাদি খতে হবে। আমিষের জন্য অন্য কিছু জোগাড় করা না গেলেও নিদেনপক্ষে প্রতিজনের জন্য একটি করে ডিম এবং সঙ্গে এক বাটি ডাল খেতে হবে। একজন মানুষকে প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম শাকসবজি খেতে হবে। আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে খাবার খেতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত