ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
কেউ ঘুমে নাক ডাকলে আমরা মনে করি, কী আরামেই না ঘুমাচ্ছে মানুষটি। আবার অনেকেই আছেন, নাক কেন ডাকে না তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকেন। নাক ডাকার পেছনে যে মারাত্মক এক শত্রু অপেক্ষা করছে, তা আমরা জানি না। এই শত্রু কিন্তু আমাদের ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে থাকে, সুযোগ পেলে আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।
বলছিলাম অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ার কথা। বরেণ্য শিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় বেশ আলোচনায় এসেছে এটি।
ঘুম খুব রহস্যময় একটা ব্যাপার। যখন আমরা ঘুমাই, আমাদের শরীরে নানান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কে অনেক কিছু খেলা করে। সব মাংসপেশি অবশ হয়ে পড়ে।
এ রোগে কী হয়
আমাদের শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। এই দুটোর শুরুও কাছাকাছি। ঘুমের মধ্যে সব মাংসপেশির মতো গলার ভেতরের মাংসপেশিও শিথিল হয়ে পড়ে। এতে করে শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে এতে আমাদের ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় না। কিন্তু অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ায় জিহ্বা, এপিগ্লোটিস ও গলার ভেতরের মাংসপেশি এতটা শিথিল হয় যে তা শ্বাসনালি আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
এতে করে ফুসফুসের ভেতরে বাতাস যেতে পারে না। ফলে রক্তে কিছু সময়ের জন্য অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
যাঁদের নাক ডাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নাক ডাকার মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য নাক ডাকা বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়টাতেই শিথিল মাংসপেশি শ্বাসনালি বন্ধ করে দেয়। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে সেই সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। ফলে অক্সিজেন ঠিক রাখার জন্য ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে গেলে গলা, জিহ্বার মাংসপেশি আবার টানটান হয়ে যায়। বন্ধ শ্বাসনালি আবার খুলে যায়। কিছুক্ষণ পরে ঘুম গভীর হলে গলার মাংসপেশি আবার শিথিল হয়ে শ্বাসনালিকে চাপ দেয়।
এই প্রক্রিয়া ঘুমের মধ্যে চলতেই থাকে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন না। কারণ শ্বাস নেওয়ার জন্য তাঁদের ঘুম ভাঙলেও তাঁরা মূলত ঘুমের হালকা ভাবের মধ্যেই থাকেন। মূলত সঙ্গীরাই এ রোগ শনাক্ত করেন।
এ রোগ ভীতিকর কেন
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া শুধু নাক ডাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। নাক ডাকা থেকে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সব রোগ।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া রোগ নির্ণয় করতে একটি পরীক্ষা করতে হয়। একে বলে পলিসমনোগ্রাফি। এই পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়ে ঘুমাতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বাসায় এ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।
ওজন বেশি হলে
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়। ওজন বেশি হলে গলার মাংসপেশিও মোটা হয়। ফলে জায়গা কমে যায়। ঘুমের মধ্যে মাংসপেশি শিথিল হলে শ্বাসনালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ধূমপান করলে
বিড়ি-সিগারেটের মধ্যে যে বিষাক্ত পদার্থ থাকে তা গলার ভেতরের মাংসপেশিতে প্রদাহ তৈরি করে। ফলে তা ফুলে যায়। এভাবেও হতে পারে ঘুমের এ সমস্যা।
অতিরিক্ত মাদক সেবনে
অতিরিক্ত মাদক সেবনেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশির টানটান ভাব কমে যায়, দেখা দেয় শিথিলতা। এ থেকে হতে পারে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া। এ ছাড়া গলার কিছু কারণ, যেমন মোটা ও লম্বা গলা, অপারেশনেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের ওষুধ
ঘুমের ওষুধ গলার মাংসপেশিকে শিথিল করে, তাই অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ থেকে হতে পারে এটি।
লেখক: নিউরোলজিস্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
কেউ ঘুমে নাক ডাকলে আমরা মনে করি, কী আরামেই না ঘুমাচ্ছে মানুষটি। আবার অনেকেই আছেন, নাক কেন ডাকে না তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকেন। নাক ডাকার পেছনে যে মারাত্মক এক শত্রু অপেক্ষা করছে, তা আমরা জানি না। এই শত্রু কিন্তু আমাদের ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে থাকে, সুযোগ পেলে আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।
বলছিলাম অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ার কথা। বরেণ্য শিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় বেশ আলোচনায় এসেছে এটি।
ঘুম খুব রহস্যময় একটা ব্যাপার। যখন আমরা ঘুমাই, আমাদের শরীরে নানান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কে অনেক কিছু খেলা করে। সব মাংসপেশি অবশ হয়ে পড়ে।
এ রোগে কী হয়
আমাদের শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। এই দুটোর শুরুও কাছাকাছি। ঘুমের মধ্যে সব মাংসপেশির মতো গলার ভেতরের মাংসপেশিও শিথিল হয়ে পড়ে। এতে করে শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে এতে আমাদের ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় না। কিন্তু অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ায় জিহ্বা, এপিগ্লোটিস ও গলার ভেতরের মাংসপেশি এতটা শিথিল হয় যে তা শ্বাসনালি আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
এতে করে ফুসফুসের ভেতরে বাতাস যেতে পারে না। ফলে রক্তে কিছু সময়ের জন্য অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
যাঁদের নাক ডাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নাক ডাকার মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য নাক ডাকা বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়টাতেই শিথিল মাংসপেশি শ্বাসনালি বন্ধ করে দেয়। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে সেই সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। ফলে অক্সিজেন ঠিক রাখার জন্য ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে গেলে গলা, জিহ্বার মাংসপেশি আবার টানটান হয়ে যায়। বন্ধ শ্বাসনালি আবার খুলে যায়। কিছুক্ষণ পরে ঘুম গভীর হলে গলার মাংসপেশি আবার শিথিল হয়ে শ্বাসনালিকে চাপ দেয়।
এই প্রক্রিয়া ঘুমের মধ্যে চলতেই থাকে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন না। কারণ শ্বাস নেওয়ার জন্য তাঁদের ঘুম ভাঙলেও তাঁরা মূলত ঘুমের হালকা ভাবের মধ্যেই থাকেন। মূলত সঙ্গীরাই এ রোগ শনাক্ত করেন।
এ রোগ ভীতিকর কেন
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া শুধু নাক ডাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। নাক ডাকা থেকে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সব রোগ।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া রোগ নির্ণয় করতে একটি পরীক্ষা করতে হয়। একে বলে পলিসমনোগ্রাফি। এই পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়ে ঘুমাতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বাসায় এ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।
ওজন বেশি হলে
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়। ওজন বেশি হলে গলার মাংসপেশিও মোটা হয়। ফলে জায়গা কমে যায়। ঘুমের মধ্যে মাংসপেশি শিথিল হলে শ্বাসনালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ধূমপান করলে
বিড়ি-সিগারেটের মধ্যে যে বিষাক্ত পদার্থ থাকে তা গলার ভেতরের মাংসপেশিতে প্রদাহ তৈরি করে। ফলে তা ফুলে যায়। এভাবেও হতে পারে ঘুমের এ সমস্যা।
অতিরিক্ত মাদক সেবনে
অতিরিক্ত মাদক সেবনেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশির টানটান ভাব কমে যায়, দেখা দেয় শিথিলতা। এ থেকে হতে পারে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া। এ ছাড়া গলার কিছু কারণ, যেমন মোটা ও লম্বা গলা, অপারেশনেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের ওষুধ
ঘুমের ওষুধ গলার মাংসপেশিকে শিথিল করে, তাই অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ থেকে হতে পারে এটি।
লেখক: নিউরোলজিস্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
দেশে মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ নারী। এই রোগটি ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। অথচ তা নিয়ে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সামাজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে রোগটির বিস্তার আরও ভয়াবহ হতে পারে।
১ ঘণ্টা আগেরোগে-শোকে মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ওষুধ খেতে হয়। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ওধুষ কিনতে গিয়ে জীবন আরও ওষ্ঠাগত। দেশে এখন নিম্নআয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের ২০ শতাংশ খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতেই।
২ দিন আগেদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
২ দিন আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
২ দিন আগে