Ajker Patrika

চিকিৎসা না পেয়ে ভোগান্তিতে রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চিকিৎসা না পেয়ে ভোগান্তিতে রোগীরা

দুই দিন বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার থেকে দেশের সব হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবা সীমিত আকারে ও অন্তর্বিভাগে সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি দেশের জেলা ও উপজেলার হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন পাস করারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় বহির্বিভাগে চিকিৎসা- সেবা বন্ধ থাকায় গতকাল সোমবারও ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের। অনেককেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরতে হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল বিকেলে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে মঙ্গলবার থেকে সীমিত পরিসরে আউটডোর সেবা 
চালু করা হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আউটডোর চালু থাকবে। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি থাকবে। ইনডোর সেবা রুটিনওয়ার্ক পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।

আব্দুল আহাদ বলেন, চিকিৎসকদের ওপর অতীতের কোনো হামলার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। বিচারহীনতার কারণেই ৩১ আগস্ট পুনরায় হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের দুই চিকিৎসক ইমরান ও মাসরাফির ওপর হামলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। ইতিমধ্যে এক হামলাকারী এবং গতকাল (রোববার) সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে হামলাকারী চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের সব হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ চালু করা হয়েছে।’ তিনি অতি দ্রুত চিকিৎসক ও রোগীদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগে খসড়া প্রণয়নের দাবি জানান।

সেবা না পাওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি
সরকারি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় গতকালও অনেক রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা পায়নি রোগীরা। ফলে অনেককে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়েছে।  
গতকাল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। এমনকি হাসপাতালের গেটও বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্র বলেছে, প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগী বহির্বিভাগে সেবা নেয়। গতকাল রোগীদের ভিড় হলেও কেউ সেবা পায়নি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জব্বার মিয়া বলেন, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু টিকিটই কাটতে পারেননি। 
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টায় হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাখার ওপর জোর দেন। তাঁরা বলেন, রাতে যদি পুলিশ কিংবা সেনা টহল না থাকে, তাহলে মঙ্গলবার ফের বহির্বিভাগে কর্মবিরতি চলবে।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় জরুরি সেবা চালু রেখেছি। বিশেষ করে ইমার্জেন্সি, আইসিইউ, সিসিইউ, অপারেশন থিয়েটার চালু রেখেছি।’ 

ঢামেকে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল গাইবান্ধায় সঞ্জয় পাল জয় নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি ঢাকার বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে পুলিশ জানিয়েছে। গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, সঞ্জয়ের বাড়ি গাইবান্ধা জেলা শহরের সরকারপাড়া এলাকায়। বাবার নাম রণজিৎ পাল। তাঁকে শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শাহবাগ পুলিশের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

অবহেলা ধামাচাপা দিতেই মামলা: দীপ্তর বাবা
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম দীপ্ত গত ৩০ আগস্ট ঢাকার কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। পরদিন হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়। তাঁর বাবা গতকাল গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলার সঙ্গে তাঁর ছেলে দীপ্তর বন্ধুরা জড়িত না। বিনা চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে দীপ্তর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দীপ্তর বন্ধুরাও উপস্থিত ছিলেন। দীপ্তর বাবা শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৩০ আগস্ট রাতে ঢাকার কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর দীপ্তকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয় পথচারীরা। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বন্ধে একটি অস্ত্রোপচার ও আইসিইউ সেবা পেতে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে তাঁর ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সেখানে আইসিইউ বেড ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ ৭ হাজার টাকা দাবি করা হয়। দীপ্তর স্বজনেরা না থাকায় টাকা না পেয়ে তাকে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে জরুরি বিভাগের মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। পরদিন শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে দুপুরে দীপ্তর বন্ধু সঞ্জয় পাল জয়সহ অন্য বন্ধুরা হাসপাতালে যান। বিনা চিকিৎসায় দীপ্তর মৃত্যুর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তাঁরা। ওই দিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে আরও দুটি মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

নিহত দীপ্তর বাবা অভিযোগ করেন, বিনা চিকিৎসায় দীপ্তর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার বন্ধুদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। এমনকি দীপ্তর কাতারপ্রবাসী বন্ধুকেও আসামি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত