প্রাকৃতিক উপায়ে রক্ত পাতলা করুন

আলমগীর আলম
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১৮
Thumbnail image

শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে কিংবা ঘনত্ব বেড়ে গেলে বিপদ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে কার্ডিওভাসকুলারজনিত সমস্যা অন্যতম। সিবিসি টেস্টের রিপোর্ট নেতিবাচক হলে শুরু হয় রক্ত তরল করার নানান ওষুধে চিকিৎসা প্রক্রিয়া। তবে আগে থেকেই রক্তে ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার উপসর্গগুলো বুঝতে পেরে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করলে সমস্যা জটিল হওয়ার আগে সমাধান করা যায়।

রক্ত ঘন হলে এর কোষগুলো একসঙ্গে জমে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি পরীক্ষায় রক্তের বিভিন্ন উপাদান, যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লাটিলেটের সংখ্যা মাপা হয়। এই তথ্য থেকে রক্তের ঘনত্ব সম্পর্কে আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায়।

রক্ত ঘন হওয়ার অনেক কারণ থাকে। তবে কার কোন কারণে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে, তা বোঝা দরকার। রক্ত ঘন হওয়া এবং কোলেস্টেরল দুটি আলাদা বিষয়। যদিও উভয়ই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

রক্ত ঘন হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ

পলিসাইথেমিয়া: এই অবস্থায় অস্থি-মজ্জা অতিরিক্ত রক্তকোষ তৈরি করে। ফলে রক্ত ঘন হয়ে যায়।

ডিহাইড্রেশন: শরীরে পানির অভাব হলে রক্তের পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত ঘন হয়ে যায়।

কিডনি রোগ: কিডনি যদি পর্যাপ্ত পানি ও লবণ শরীর থেকে বের করে দিতে না পারে, তাহলেও রক্ত ঘন হতে পারে।

লিভার রোগ: লিভার রোগের কারণে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এর ফলে রক্ত ঘন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

অতিরিক্ত আয়রন: শরীরে অতিরিক্ত আয়রন থাকলেও রক্ত ঘন হয়ে যেতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত ঘন হতে পারে।

ক্যানসার: বিশেষ কিছু ক্যানসারের কারণেও রক্ত ঘন হতে পারে।

রক্ত ঘন হওয়ার লক্ষণ: মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা, বুকে ব্যথা, হাত-পায়ে ফোলা, চুলকানি, মাথা ধরা।

রক্ত ঘন হওয়ার জটিলতা: রক্ত জমাট বাঁধা, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক এবং ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা।

প্রাকৃতিক উপায়

আপেল ও লেবুর সংমিশ্রণ রক্তের স্বাস্থ্যের জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। এই প্রাকৃতিক যুগল কেবল সতেজ নয়, এটি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে কার্যকর রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য প্রতিদিনের রুটিনে আপেল ও লেবুর রস যুক্ত করুন।

আপেল ও লেবুর শক্তি

আপেল ও লেবু উভয়ই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে পূর্ণ। আপেলে পেকটিন নামক একধরনের দ্রবণীয় আঁশ থাকে। এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি শোষণ কমাতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে এবং রক্তের জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এদিকে লেবুতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলো রক্তনালির দেয়াল শক্তিশালী করতে এবং সামগ্রিক রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে সহায়তা করে।

যেভাবে কাজ করে

সঞ্চালন উন্নত করে: আপেল ও লেবুর সংমিশ্রণ রক্তে সাইট্রেটের মাত্রা বাড়ায়। এটি স্বাভাবিকভাবে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে এবং স্ফটিককরণে বাধা দেয়। এ ছাড়া রক্তপ্রবাহ মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।

কোলেস্টেরল কমায়: আপেল রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে চমৎকার কাজ করে।

রক্ত পরিষ্কার করে: লেবু রক্ত ​​পরিষ্কার করতে এবং দূষিত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে।

আপেল ও লেবুর রসে স্মুদি রেসিপি

একটি তাজা আপেল এক গ্লাস বা ২০০ এমএল পানির সঙ্গে ব্লেন্ড করে তাতে একটি গোটা লেবুর রস যুক্ত করুন। এর সঙ্গে চাইলে দুই ফোঁটা মধু যোগ করতে পারেন। ভালো ফলের জন্য এই রস সকালে খালি পেটে অথবা নাশতা খাওয়ার আগে তাজা অবস্থায় পান করুন। এটি শুধু শোষণ সর্বাধিক করে না, বরং স্বাস্থ্যকর দিনেরও সূচনা করে।

এই স্মুদি এক মাস থেকে তিন মাস খেতে পারেন।

সতর্কতা: প্রাকৃতিক নিয়মগুলো খুব ধীরে কাজ করে, সে জন্য যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আলমগীর আলম, খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত