Ajker Patrika

নীরব ঘাতক হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
নীরব ঘাতক হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে

হাড়ের ক্ষয় বলতে এর ভেতর ফাঁপা হয়ে যাওয়া বোঝায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে অস্টিওপোরোসিস। অর্থ ছিদ্রযুক্ত হাড়। এটি হলে হাড় পাতলা হয়ে এর জোর কমে যায়, ঘনত্ব ও গুণগত মান কমে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সঙ্গে ব্যথা তো থাকেই, পঙ্গুত্বেরও আশঙ্কা বাড়ে।

অস্টিওপোরোসিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক। এই রোগ হলে পড়ে গেলে, হোঁচট খেলে, হাঁচি দিলে এমনকি সামান্য নড়াচড়াতেও হাড় ভাঙতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব পাঁচজনের মধ্য়ে একজন পুরুষের আর তিনজনের মধ্য়ে একজন নারীর হাড় ক্ষয়ের কারণে ভেঙে যায়। অস্টিওপোরোসিসের কারণে এমন হাড় ভাঙা জীবন সংশয় করে তুলতে পারে। তাই অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সতর্ক হওয়া জরুরি। 

প্রতিরোধে কিছু বিষয় মেনে চলুন

  • ধূমপান ত্যাগ করুন। এই বদ-অভ্যাসের কারণে বাড়ে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি। ধূমপান করলে নিতম্বের হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে ২৫ শতাংশ।
  • শরীরের গঠন ও ওজনের কথা বিবেচনায় রাখুন। বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই ১৯-এর নিচে থাকলে বুঝতে হবে ওজন কম। খাবারে হাড়ের গঠনের জন্য দরকারি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি কম হলে একটা বয়সের পর হাড় ক্ষয় হতে পারে।
  • বারবার পতন রোধ করতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তিরা বারবার পড়ে গেলে হাড় ভাঙতে পারে। 
  • চোখের দৃষ্টি কম হলে, শরীর ভারসাম্যহীন হলে, ডিমেনশিয়া, ঘুমের ওষুধ খাওয়া, কম আলোযুক্ত জায়গায় বসবাস করলে হাড় ক্ষয় হতে পারে। 
  • শরীরচর্চা কম করলে, নিষ্ক্রিয় জীবন যাপন করলে হাড় দুর্বল হতে পারে।

কখন ঝুঁকি বেশি

  • বয়স বেশি হলে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
  • পুরুষের তুলনায় নারীদের ঝুঁকি বেশি।
  • পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
  • প্রথমবার হাড় ভাঙার পর দ্বিতীয়বার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।
  • নিয়মিত কিছু ওষুধ খেলে।
  • মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে এবং জরায়ু অপসারণ করার পরও হাড়ক্ষয়ের আশঙ্কা বাড়ে।

হাড় সুস্থ রাখতে

  • হাড়ের জন্য উপকারী খাবার, যেমন ক্যালসিয়াম, পনির, দুধ, দই, সয়া দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, মটরশুঁটি, বাদাম, ভিটামিন, খনিজ, শাকসবজি ইত্যাদি 
    খেতে হবে।
  • সূর্যের আলোয় ভিটামিন ডি থাকে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট শরীরে সূর্যের আলো মাখুন।  

ক্যালসিয়াম গ্রহণে সচেতন হোন

  • শিশুদের দিনে ১ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে ১ হাজার মিলিগ্রাম, পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীর দিনে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ 
    করতে হবে।
  • প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ দিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, ভারোত্তোলন, সাঁতার, সাইকেল চালানো, ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম করতে হবে। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসক বা প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে। 

ওজন ঠিক রাখা চাই

বিএমআই যেন ১৯-এর বেশি থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এর কম থাকা মানে প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন। বিএমআই ১৯ দশমিক ১ থেকে ২৪ দশমিক ৯ থাকলে তা স্বাভাবিক। আমাদের দেশের জন্য ১৯ দশমিক ১ থেকে ২৩ থাকলে ওজন ঠিক আছে ধরে নেওয়া হয়। ২৫ থেকে ২৯ দশমিক ৯ থাকলে বুঝতে হবে প্রয়োজনের তুলনায় ওজন বেশি আছে। ৩০-এর বেশি হলে তা স্থূল বলে ধরে নেওয়া হয়।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত