পাইলসের ধরন বুঝে চিকিৎসা করাতে হবে

ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম 
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ২৮

মলদ্বারের পাইলসজনিত সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ওষুধের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ জন্য কোনো অপারেশনের প্রয়োজন নেই। শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে বিনা অপারেশনে পাইলসের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে সেটি নির্ভর করে পাইলসের ধরনের ওপর।

পাইলস বিভিন্ন রকম হতে পারে। কতগুলো ভেতরে থাকে, যাকে আমরা ইন্টারনাল পাইলস অথবা অভ্যন্তরীণ পাইলস বলে থাকি। আবার কতগুলো পাইলস থাকে বাইরের দিকে, সেগুলোকে বলা হয় এক্সটারনাল পাইলস বা এক্সটারনাল হেমোরয়েড। 

উপসর্গ
পাইলসের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো: 

  • মলত্যাগের পর রক্ত পড়া। তবে এর সঙ্গে সাধারণত কোনো ব্যথা হয় না। পাইলস বা হেমোরয়েড যদি প্রথম ধাপে থাকে, সে ক্ষেত্রে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছুই থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর তাজা রক্তপাত হয়।
  • দ্বিতীয় ধাপের হেমোরয়েড হলে মলত্যাগের পর তাজা রক্তপাত হয়। তবে সাধারণত ব্যথা হয় না এবং মলত্যাগের পর মনে হয় ভেতর থেকে কী যেন বাইরের দিকে বের হয়ে আসে। সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়। 
  • তৃতীয় ধাপের হেমোরয়েড হলে, মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো বের হয়। সেটিকে চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়। 
  • চতুর্থ ধাপের হেমোরয়েড হলে, মলত্যাগের পর বাড়তি যে মাংসপিণ্ড বের হতো, সেটি আর ঢুকবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যথা হবে। এটি থ্রববোসড হেমোরয়েড।

কাজেই পাইলসের চিকিৎসা তার ধরনের ওপর নির্ভর করে।

চিকিৎসা

  • প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে গেলে, অর্থাৎ প্রথম ধাপের হেমোরয়েড হলে তার চিকিৎসায় কোনো অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের রোগীকে ওষুধ
  • দেওয়া হয় এবং পায়খানা স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে ও পানি পান করতে বলা হয়। কারও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে মল নরম করার
  • জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। তাতে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী ভালো থাকে। 
  • দ্বিতীয় ধাপের হেমোরয়েড হয়ে থাকলেও অপারেশন করা হয় না। এর কিছু আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। যেমন ইনজেকশন। যেটিকে 
    বলা হয়, স্কলেরো থেরাপি। আবার কারও ক্ষেত্রে রিং লাইগেশন করা হয়। যেটিকে বলা হয়, রাবার রিং লাইগেশন। 
  • পাইলসের তৃতীয় ও চতুর্থ হেমোরয়েডের 

ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আজকাল সেই অপারেশন একেবারেই কষ্টদায়ক নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে লেজারের মাধ্যমে অথবা স্টেপল হেমোরয়ডোপেক্সির মাধ্যমে অপারেশন করা হয়। এর মধ্যে বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া হয় না। মলদ্বারের ভেতর থেকে একটু বাড়তি মাংসের মতো জিনিস কেটে নিয়ে আসা হয়। রোগীদের সাধারণত মলত্যাগের পর তেমন ড্রেসিংয়ের প্রয়োজন হয় না। রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে এবং দুই-তিন দিন পর থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারে।

তবে কারও যদি মলদ্বার একদম বাইরে বের হয়ে আসে, তার মধ্যে সংক্রমণ হয়, সে ক্ষেত্রে কেটে অপারেশন করতে হয়। সেটিকে বলা হয়, ওপেন হেমোরয়েডটমি বা ক্লোজ হেমোরয়েডটমি।

কাজেই মলদ্বারে পাইলস হলে সব ক্ষেত্রে যে অপারেশন লাগবে, তা নয়। চিকিৎসক পাইলসের ধরন দেখে নির্ণয় করবেন, আসলে পাইলসটি কোন পর্যায়ে আছে, এটির কোন ধরনের চিকিৎসা লাগবে। কাজেই মলদ্বারে পাইলসজনিত কোনো সমস্যা হলে বা লক্ষণগুলো দেখা দিলে, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।

ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম,জেনারেল ও কোলোরেকটাল সার্জন,সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত