ডা. কাকলী হালদার
চীনের উহান শহরে প্রায় তিন বছর আগে এমনই এক শীতে শোনা গিয়েছিল করোনাভাইরাসের আগমনের অশনিসংকেত। অজানা জ্বরে মৃত্যুর মিছিল থামাতে রাতারাতি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছিল সারা শহর। ক্রমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে এবং সৃষ্টি হয় বিশ্বব্যাপী অতিমারির।
সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে যায় ব্রিটেন, আমেরিকা, ইতালির মতো অনেক উন্নত দেশও। কোভিডের ভয়াল থাবা বাংলাদেশকে আক্রমণ করলেও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় অনেকটা সফলভাবেই আমরা প্রতিটা ঢেউ মোকাবিলা করতে পেরেছি। ভ্যাকসিনেশন, ন্যাচারাল ইনফেকশন এবং অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করায় অতিমারির সেই ধাক্কা বিশ্ববাসী কাটিয়ে উঠেছিল অনেকটাই।
কিন্তু আবারও এ বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে দ্রুতগতিতে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণের হার। নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন বিএফ–৭।
এ বছরের শেষে অতিমারি পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু আগেই জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস কখনোই একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে না। সুতরাং, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে।
বিএফ–৭ কি নতুন ভাইরাস
সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাস ক্রমাগত জেনেটিক মিউটেশন করার ফলে অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্ট এবং সাব-ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করেছে। বিএফ–৭, ওমিক্রন বিএ.৫ ভ্যারিয়েন্টের একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই ৯১টি দেশে প্রাপ্ত বিএফ–৭-এর জেনেটিক মেক-আপ এবং মিউটেশন প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে যায়। অবশেষে ২০২২ সালের মে মাসে এটির নামকরণ করা হয় বিএফ–৭ (বিএ.৫.২.১.৭–এর সংক্ষিপ্ত রূপ)। বিএফ–৭–এর স্পাইক প্রোটিনে একটি নির্দিষ্ট মিউটেশনের (আর ৩৪৬ টি) ফলে মানুষের শরীরে প্রবেশ এবং রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে এটিকে আরও বেশি সংক্রামক এবং বিপজ্জনক করে তুলেছে, এমনকি যাঁরা সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত তাঁদের জন্যও।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে বিএফ-৭-এর সবচেয়ে শক্তিশালী সংক্রমণক্ষমতা রয়েছে (একজন সংক্রামিত ব্যক্তি গড়ে ১০ থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে), কম ইনকিউবেশন পিরিয়ড (ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা এবং প্রথম লক্ষণগুলোর উপস্থিতির মধ্যবর্তী সময়) এবং যাদের পূর্বে কোভিড সংক্রমণ হয়েছে বা যারা পূর্বেই কোভিডের টিকা পেয়েছে বা উভয়কেই সংক্রামিত করার ক্ষমতা অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর থেকে বেশি।
উপসর্গবিহীন বাহকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বিএফ-৭ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন রোগী, বয়স্ক, করোনা সম্মুখযোদ্ধা এবং জটিল রোগে আক্রান্ত (ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইত্যাদি) রোগীদের জন্য আরও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
বিএফ-৭-এর সংক্রমণের লক্ষণগুলো ওমিক্রনের অন্য সাব-ভেরিয়েন্টগুলোর মতোই এবং প্রাথমিকভাবে রোগীদের ওপরের শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। উপসর্গের মধ্যে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং ক্লান্তি থাকতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে বমি এবং ডায়রিয়ার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়।
যদিও বিএফ-৭ আক্রান্তদের রোগের ভয়াবহতা বা মৃত্যুঝুঁকি অন্য ভ্যারিয়েন্টদের তুলনায় কম।
বিশ্বের বর্তমান অবস্থা
চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে (ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, জার্মানি) এরই মধ্যে খোঁজ মিলেছে এই বিএফ.৭-এর। তবে এরই মধ্যে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে চীনে। এক দিনে ৩ কোটির বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবরও মিলেছে।
বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কোভিডের টিকাদান কর্মসূচি এবং বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট ও সাব-ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে সংক্রমণের কারণে মানুষের শরীরে ‘Neutralizing Antibody’ সৃষ্টির ফলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাই ধীরে ধীরে বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ প্রতিরোধের কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরও সব দেশেই সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। গত তিন বছরে তাই করোনার গ্রাফ কখনো ঊর্ধ্বমুখী আবার কখনো নিম্নমুখী হয়েছে।
কিন্তু করোনা মহামারির শুরু থেকেই চীনে জারি করা হয়েছিল ‘জিরো কোভিড’ নীতি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীনের মানুষজন কঠোর বিধিনিষেধের ভেতরে থাকার দরুন কোভিডের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট, সাব-ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ন্যাচারাল ইনফেকশন হয়েছে। ফলে হাইব্রিড ইমিউনিটি (Hybrid Immunity) বা মিশ্র রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম তৈরি হয়েছে। টিকার কারণেই মূলত তাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও বিভিন্ন রকম ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম তৈরি হয়েছে। তাই ডিসেম্বরে বিধিনিষেধ শিথিল করায় চীনে সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলছে।
চীন ও প্রতিবেশী ভারতে বিএফ-৭ শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যখন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক, তখন প্রতিবেশী ভারত এবং অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নির্দেশ করে পঞ্চম করোনাভাইরাস তরঙ্গ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে বিএফ-৭-এর তাণ্ডবলীলা হয়তো কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের শরীরে এরই মধ্যে হাইব্রিড ইমিউনিটি বা মিশ্র রোগ প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে, যা করোনার যেকোনো ভ্যারিয়েন্টকে রুখে দিতে অনেকটাই সক্ষম।
একদিকে যেমন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তেমনি করোনার নানা ভ্যারিয়েন্টের ন্যাচারাল ইনফেকশন থেকেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা হয়তো আমাদের বিএফ-৭-এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারবে।
গবেষণা বলছে, এখন পর্যন্ত টিকা এবং সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে উত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সরকারের দেওয়া তথ্যমতে, এরই মধ্যে দেশের ১৫ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ, সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ এবং সাড়ে ৬ কোটি মানুষকে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ডোজ টিকা করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা, ষাটোর্ধ্ব জনগণ, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা পাবেন। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ।
কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আমাদের সবাইকে অতি অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে—
১. জনাকীর্ণ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে।
২. যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. ঘন ঘন সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চীনের উহান শহরে প্রায় তিন বছর আগে এমনই এক শীতে শোনা গিয়েছিল করোনাভাইরাসের আগমনের অশনিসংকেত। অজানা জ্বরে মৃত্যুর মিছিল থামাতে রাতারাতি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছিল সারা শহর। ক্রমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে এবং সৃষ্টি হয় বিশ্বব্যাপী অতিমারির।
সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে যায় ব্রিটেন, আমেরিকা, ইতালির মতো অনেক উন্নত দেশও। কোভিডের ভয়াল থাবা বাংলাদেশকে আক্রমণ করলেও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় অনেকটা সফলভাবেই আমরা প্রতিটা ঢেউ মোকাবিলা করতে পেরেছি। ভ্যাকসিনেশন, ন্যাচারাল ইনফেকশন এবং অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করায় অতিমারির সেই ধাক্কা বিশ্ববাসী কাটিয়ে উঠেছিল অনেকটাই।
কিন্তু আবারও এ বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে দ্রুতগতিতে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণের হার। নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন বিএফ–৭।
এ বছরের শেষে অতিমারি পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু আগেই জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস কখনোই একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে না। সুতরাং, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে।
বিএফ–৭ কি নতুন ভাইরাস
সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাস ক্রমাগত জেনেটিক মিউটেশন করার ফলে অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্ট এবং সাব-ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করেছে। বিএফ–৭, ওমিক্রন বিএ.৫ ভ্যারিয়েন্টের একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই ৯১টি দেশে প্রাপ্ত বিএফ–৭-এর জেনেটিক মেক-আপ এবং মিউটেশন প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে যায়। অবশেষে ২০২২ সালের মে মাসে এটির নামকরণ করা হয় বিএফ–৭ (বিএ.৫.২.১.৭–এর সংক্ষিপ্ত রূপ)। বিএফ–৭–এর স্পাইক প্রোটিনে একটি নির্দিষ্ট মিউটেশনের (আর ৩৪৬ টি) ফলে মানুষের শরীরে প্রবেশ এবং রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে এটিকে আরও বেশি সংক্রামক এবং বিপজ্জনক করে তুলেছে, এমনকি যাঁরা সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত তাঁদের জন্যও।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে বিএফ-৭-এর সবচেয়ে শক্তিশালী সংক্রমণক্ষমতা রয়েছে (একজন সংক্রামিত ব্যক্তি গড়ে ১০ থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে), কম ইনকিউবেশন পিরিয়ড (ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা এবং প্রথম লক্ষণগুলোর উপস্থিতির মধ্যবর্তী সময়) এবং যাদের পূর্বে কোভিড সংক্রমণ হয়েছে বা যারা পূর্বেই কোভিডের টিকা পেয়েছে বা উভয়কেই সংক্রামিত করার ক্ষমতা অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর থেকে বেশি।
উপসর্গবিহীন বাহকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বিএফ-৭ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন রোগী, বয়স্ক, করোনা সম্মুখযোদ্ধা এবং জটিল রোগে আক্রান্ত (ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইত্যাদি) রোগীদের জন্য আরও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
বিএফ-৭-এর সংক্রমণের লক্ষণগুলো ওমিক্রনের অন্য সাব-ভেরিয়েন্টগুলোর মতোই এবং প্রাথমিকভাবে রোগীদের ওপরের শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। উপসর্গের মধ্যে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং ক্লান্তি থাকতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে বমি এবং ডায়রিয়ার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়।
যদিও বিএফ-৭ আক্রান্তদের রোগের ভয়াবহতা বা মৃত্যুঝুঁকি অন্য ভ্যারিয়েন্টদের তুলনায় কম।
বিশ্বের বর্তমান অবস্থা
চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে (ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, জার্মানি) এরই মধ্যে খোঁজ মিলেছে এই বিএফ.৭-এর। তবে এরই মধ্যে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে চীনে। এক দিনে ৩ কোটির বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবরও মিলেছে।
বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কোভিডের টিকাদান কর্মসূচি এবং বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট ও সাব-ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে সংক্রমণের কারণে মানুষের শরীরে ‘Neutralizing Antibody’ সৃষ্টির ফলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাই ধীরে ধীরে বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ প্রতিরোধের কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরও সব দেশেই সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। গত তিন বছরে তাই করোনার গ্রাফ কখনো ঊর্ধ্বমুখী আবার কখনো নিম্নমুখী হয়েছে।
কিন্তু করোনা মহামারির শুরু থেকেই চীনে জারি করা হয়েছিল ‘জিরো কোভিড’ নীতি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীনের মানুষজন কঠোর বিধিনিষেধের ভেতরে থাকার দরুন কোভিডের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট, সাব-ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ন্যাচারাল ইনফেকশন হয়েছে। ফলে হাইব্রিড ইমিউনিটি (Hybrid Immunity) বা মিশ্র রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম তৈরি হয়েছে। টিকার কারণেই মূলত তাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও বিভিন্ন রকম ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম তৈরি হয়েছে। তাই ডিসেম্বরে বিধিনিষেধ শিথিল করায় চীনে সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলছে।
চীন ও প্রতিবেশী ভারতে বিএফ-৭ শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যখন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক, তখন প্রতিবেশী ভারত এবং অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নির্দেশ করে পঞ্চম করোনাভাইরাস তরঙ্গ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে বিএফ-৭-এর তাণ্ডবলীলা হয়তো কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের শরীরে এরই মধ্যে হাইব্রিড ইমিউনিটি বা মিশ্র রোগ প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে, যা করোনার যেকোনো ভ্যারিয়েন্টকে রুখে দিতে অনেকটাই সক্ষম।
একদিকে যেমন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তেমনি করোনার নানা ভ্যারিয়েন্টের ন্যাচারাল ইনফেকশন থেকেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা হয়তো আমাদের বিএফ-৭-এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারবে।
গবেষণা বলছে, এখন পর্যন্ত টিকা এবং সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে উত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সরকারের দেওয়া তথ্যমতে, এরই মধ্যে দেশের ১৫ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ, সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ এবং সাড়ে ৬ কোটি মানুষকে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ডোজ টিকা করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা, ষাটোর্ধ্ব জনগণ, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা পাবেন। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ।
কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আমাদের সবাইকে অতি অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে—
১. জনাকীর্ণ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে।
২. যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. ঘন ঘন সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সুস্থভাবে জীবনযাপন করার জন্য দেহের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হয়। সাধারণত পুষ্টির কথা ভাবলে মনে করি সবটুকুই আমার খাদ্য থেকেই অর্জন করি। তবে এই ধারণাটি ভুল বললেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণায় বলা যায়, মানুষ কিছু পুষ্টি বায়ু থেকেও শোষণ করতে পারে!
৩ দিন আগেবিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির ক্ষতি এবং দৃষ্টি শক্তিসহ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান ঝুঁকির কারণ এটি। এই ধরনের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ
৪ দিন আগেডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১ হাজার ৩৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে আজ রোববার পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো ৭৯ হাজার ৯৮৪ জন। মারা গেছে আরও আটজন।
৫ দিন আগেএমন সময়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো, যখন ইংল্যান্ডে একটি লক্ষ্যভিত্তিক ফুসফুস স্বাস্থ্য পরীক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে সম্ভাব্য ৪০ শতাংশ ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে এর আওতায় আনা।
৬ দিন আগে