শিশুর রক্তস্বল্পতায়, যা জানতে ও করতে হবে

ডা. মনিরুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ০৮: ০২

শিশুদের শরীরে আয়রনের অভাব হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। নবজাতক থেকে শুরু করে স্কুলে যাওয়া শিশুদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা যায়। আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ফুসফুস থেকে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেনকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বহন করে থাকে। শরীরে আয়রনের অভাব হলে রক্তের অন্যতম উপাদান লোহিতকণিকা বা রেড ব্লাড সেলের কোষগুলো ছোট ও বর্ণহীন হয়ে যায়। যাকে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলে।

রক্তশূন্যতার কারণ

আরবিসির সংখ্যা কমে যাওয়া শিশুর শরীরে আরবিসি বা রেড ব্লাড সেল বা লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যেতে পারে। এটি মস্তিষ্ক ও শিশুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অস্থিমজ্জায় নতুন নতুন লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয় এবং তা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরে সঞ্চারিত হয়। এটি কমে গেলে শিশুর রক্তাল্পতা দেখা দেয়। নবজাতক সাধারণত উচ্চমাত্রার হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। দুই মাস পর থেকে এর পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। এরপর পুনরায় আরবিসি উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলে। শুধু মায়ের দুধ পানই এর জন্য যথেষ্ট।

দেহে যখন সুস্থ লোহিতকণিকা তৈরি হয় না, তখনো এ সংকট তৈরি হয়। এর বিভিন্ন কারণ আছে। আয়রন বা অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি প্রধানতম। দুই বছরের কম বয়সী শিশু এবং বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর অ্যানিমিয়া প্রধানত আয়রন ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে; বিশেষ করে কন্যাশিশুর যখন মাসিক শুরু হয়, তখন সমস্যা হয়ে থাকে।

দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা
দীর্ঘদিন অসুখে ভোগা শিশুর সহজে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ক্রনিক কিডনি, হাইপোথাইরয়েডিজম, এডিসনস ডিজিজ, পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা ইত্যাদি কারণে আরবিসি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন মেলে না বা পরিমাণ কমে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা শিশুদের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। সিসা পয়জনিংয়ের শিকার হলেও শিশুরা রক্তশূন্যতায় ভোগে। হিমোগ্লোবিনের আয়রন অংশজাত হিম তৈরিতে বিষাক্ত সিসা বাধা দেয়।

লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া

  • নানা কারণে লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংক্রমণ।
  • লিভারের দীর্ঘমেয়াদি রোগ।
  • সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া এবং জি সিক্স পিডির অভাব।
  • উচ্চ রক্তচাপ, প্লীহা স্ফীতি।
  • ক্ষত, বেশি রক্তস্রাব, পাকস্থলীতে বা আন্ত্রিক রক্তপাত।
  • কৃমির সংক্রমণ, বিশেষ করে বক্রকৃমি। 
  • রক্তপাতজনিত অসুখ-হিমোফাইলিয়া।

লক্ষণ

  • শিশু ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাওয়া। 
  • শিশুর জিহ্বা, চোখ, নখ ও ত্বকের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। 
  • অল্পে বিরক্ত হওয়া এবং খিটখিটে ভাব।
  • হার্ট রেট বৃদ্ধি পাওয়া এবং অতিরিক্ত ঘাম। 
  • শক্তির অভাব বা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া। 
  • খাওয়ার প্রতি অনীহা।
  • ঘন ঘন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া।
  • শিশুর স্বাভাবিক ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়া।

যেসব পরীক্ষা করাতে হবে

  • সিবিসি, ব্লাড স্মিয়ার, ব্লাড আয়রন লেভেল টেস্ট। 
  • হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস টেস্ট। 
  • লিউকেমিয়ায় বোনম্যারো-অ্যাপ্লাসটিক অ্যানিমিয়া টেস্ট।

চিকিৎসা

  • শিশুদের পাকস্থলী ছোট বলে তাদের খাওয়ার পরিমাণ বেশ কম। ফলে তাদের প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাংস, ডিম, ফল, মাছ, সবুজ শাকসবজি এবং বীজজাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
  •  লাল, বাদামি এবং সবুজ রঙের ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সেগুলো পর্যাপ্ত খেতে হবে। আয়রন সম্পূর্ণরূপে শোষণের জন্য সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়াতে হবে। 
  • বেশি দুধ বা দুগ্ধজাত ফর্মুলার ওপর নির্ভরশীল শিশু ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তাই সেগুলোর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। ফলিক অ্যাসিড বা বি১২ ভিটামিনের অভাব থাকলে সেসব খাবার খাওয়াতে হবে।
  • গ্রামাঞ্চলে শিশু বয়সে অ্যানিমিয়ার প্রধান কারণ ঘন ঘন কৃমির সংক্রমণ। তাই নির্দিষ্ট সময় পর কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।

ডা. মনিরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত