একসময়ের গ্যাংস্টার হয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৪, ২০: ৪৪
Thumbnail image

একসময়ের গ্যাংস্টার এবং ব্যাংক ডাকাত থেকে পরবর্তীকালে নাইটক্লাবের মালিকসহ বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া গাইটন ম্যাকেঞ্জি এবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া, শিল্প ও সংস্কৃতিমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি দেশটির প্যাট্রিয়টিক অ্যালায়েন্স (পিএ) পার্টির প্রেসিডেন্ট।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সিরিল রামাফোসা তাঁর যৌথ সরকারে প্যাট্রিয়টিক অ্যালায়েন্স (পিএ) পার্টির নেতা গাইটনকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত দেশটির জাতীয় নির্বাচনে রামাফোসার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) প্রথমবারের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এর ফলে সরকার গঠন করার জন্য দলটিকে প্যাট্রিয়টিক অ্যালায়েন্সের মতো ছোট দলের সঙ্গেও জোট বাঁধতে হয়েছে।

গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়ে ক্রীড়া মন্ত্রিত্ব পাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন ৫০ বছর বয়সী গাইটন। ওই পোস্টে ফুটবল খেলোয়াড়ের বেশে নিজের একটি ছবিও জুড়ে দেন তিনি।

জীবনে অন্ধকার অতীত থাকলেও গাইটনকে তাঁর গৌরবজনক প্রত্যাবর্তনের জন্যই অভিনন্দন জানাচ্ছেন সবাই। জানা যায়, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ব্যাংক ডাকাতি করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী তথা আপাদমস্তক গ্যাংস্টার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। এসবের ধারাবাহিকতায় সাত বছর তিনি জেলেও ছিলেন। তবে জেল থেকে বেরিয়েই নতুন জীবন শুরু হয় তাঁর। অন্ধকার জীবন থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসেন।

নতুন জীবনে প্রবেশ করে ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সম্প্রচারমাধ্যম এসএবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাইটন বলেছিলেন, ‘আমার পকেটে মাত্র ১২ রেন্ড (দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রা) থাকতে পারে। কিন্তু আমার মনের মধ্যে আছে বিলিয়ন রেন্ড এবং এটিই মানুষ বোঝে না যে—তার যা অভাব তা কীভাবে পাওয়া যাবে, সেই চিন্তা না করে কী অভাব রয়েছে সেটি নিয়েই বেশি চিন্তা করে।’

অন্ধকার জীবন থেকে বেরিয়ে আসার পর নতুন জীবনে প্রবেশ করে একজন বহু মূল্যবান মোটিভেশনাল স্পিকারে পরিণত হয়েছিলেন গাইটন। শুধু তা–ই নয়, নিজের জীবন নিয়ে বইও লিখেছেন তিনি। জড়িত হন নানা ধরনের ব্যবসায়। এর মধ্যে জিম্বাবুয়েতে খনি উত্তোলন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর নাইটক্লাবের ব্যবসা বেশ জমে ওঠে। নাইটক্লাবের ব্যবসায় তাঁর অংশীদার ছিলেন কেনু কুনেনি। তাঁর জীবনও অনেকটা গাইটনের মতো। জেলখানার ভেতরেই দুজনের পরিচয় ঘটেছিল। পরে তাঁদের মধ্যে আত্মার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

বর্তমানে গাইটনের বন্ধু কুনেনি প্যাট্রিয়টিক পার্টির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সালে জোহানেসবার্গে অবস্থিত নিজের নাইটক্লাবে ৪০তম জন্মদিনে অন্তর্বাস পরা নারীদের শরীরের ওপর তাঁকে সুশি পরিবেশন করা হয়েছিল বলে ‘সুশি কিং’ হিসেবেও পরিচিতি পান তিনি। ওই ঘটনার পর অবশ্য খুব দ্রুতই বকেয়া ভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিলের জন্য নাইটক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে সেই বিপর্যয়ও ভালোভাবে সামলে নিয়েছিলেন দুই বন্ধু। সেই সময় গাইটন ম্যাকেঞ্জি দাবি করেছিলেন, নাইটক্লাবের ব্যবসার চেয়ে অন্য কিছু নিয়েই তাঁরা বেশি ভাবছেন। মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই ২০১৩ সালে কুনেনিকে নিজের সহকারী করে প্যাট্রিয়টিক পার্টি গঠন করেন তিনি। এক দশকের ব্যবধানে গত নির্বাচনে সেই পার্টি সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ২ শতাংশ ভোট টানতে সক্ষম হয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মিশ্র গায়ের রঙের মানুষদের (কালারড কমিউনিটি) মধ্যে ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে দলটি। আফ্রিকান ভাষায় এই দলের স্লোগান হলো, ‘ওনস বাইজা নিয়ে।’ যার অর্থ, ‘আমরা ভয় পাই না।’

একসময়ের গ্যাংস্টার গাইটন দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন বলে মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মধ্যে ক্যাগিসো পুয়ে গাইটনকে একজন ‘ব্র্যাভাডো’ (সাহসী ব্যক্তিত্ব) স্টাইলের মানুষ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ এমন কাউকেই পছন্দ করে, যাদের এমন অতীত রয়েছে এবং সেই অতীতের বিষয়ে বলতে তিনি সংকোচ বোধ করেন না। অনেকটা—হ্যাঁ, আমিই সেই ব্যক্তি বলার মতো একটি বিষয়।’

জ্যাকব জুমা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও এ ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেন ক্যাগিসো। গত নির্বাচনের প্রচারণায় অনিবন্ধিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন গাইটন ম্যাকেঞ্জি। প্যাট্রিয়টিক দলের এই অবস্থানও কিছু ভোট টানতে সক্ষম হয়। তবে গাইটনের এমন অবস্থানকে তাঁর সমালোচকেরা ‘জেনোফোবিক’ (বিদেশিদের প্রতি আতঙ্ক) হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত